খোকা, তুই কী আসবি আমায় নিতে আমার মরণের পরে?
আমি বেশ ভাল আছি বৃদ্ধাশ্রমে
শুধু কেবল দেখতে ইচ্ছে করে তোর চাঁদ মুখখানা।


মনে পড়ে খুব, যখন তুই অনেক ছোট ছিলি-
আমি এক চামচ খাবার তোর মুখে দিতেই
তুই দৌড়ে পালিয়ে যা'তিস। আর আমি ...?
আমি তোর পেছন পেছন ছুটোছুটি করতাম
আরো একটি চামচ খাবার তোর মুখে তুলে দেব বলে।


মনে পড়ে সে সময়ের কথা-
তুই যখন বলতে শিখেছিলি।
হঠাৎ করে মা বলে লাফিয়ে পড়তিস আমার কোলে
মনটা তখন ভরে যেত কেমন যেন একটা আনন্দে!


তোর বাবা একটি নাকফুল দিয়ে আমায় ঘরে তুলেছিল
ভালবাসায় বোনা ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে থেকেও
আমি খুব সুখি ছিলামরে খোকা!
আর সে ভাঙ্গা বেড়ার ঘরে এক ফালি চাঁদ ছিলি তুই!


আমি বেশ একা হয়ে গেলাম তোর বাবা মরণের পর।
কষ্ট করেছি, খেয়ে না খেয়ে থেকেছি
তবু বন্ধ হতে দেইনি তোর লেখাপড়া।
ভাবতাম তুই একদিন মানুষের মত মানুষ হবি
সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে তোর জীবন
আর সে আলোয় আলোকিত করবে আমাদের।


ধীরে ধীরে তুই বড় হয়ে গেলি আর আমি হলাম বুড়ি।
সে মা ডাকটি শুনতে চাইলেও আজকাল শুনতে পাইনা।
তোকেও কাছে পাইনা এখন আর
একটিবার বুকে জড়িয়ে ধরবো বলে।


খোকা, ও খোকা-
আমি এখন খালি চোখে ভাল দেখতে পাইনারে!
সব কিছু কেমন যেন ঝাপসা লাগে আমার দু'চোখে
তবু তোর ছোটবেলার ছবিগুলো
আমার চোখের উপর স্পস্ট ভেসে বেড়ায় এখনো!


তুই কী আসবি? আমি তোকে দূর থেকে একটু দেখবো
তারপর না হয় চলে যাস।
এখানে বিকেল বেলায় খুব একা হয়ে যাই আমি
তোর ছেলে-মেয়ের সঙ্গে খেলতে অনেক ইচ্ছে হয় আমার
ওরা খুব বড় হয়ে গেছে নারে?


তোর জন্য দোয়া করি- তুই সুখে থাকিস, ভাল থাকিস।
পারলে পূরণ করে দিস আমার শেষ ইচ্ছেটা-
যে নাকফুলে আমার জীবনের হলো স্বপ্ন পূরণ
সেই নাকফুলটা বেচে দিয়ে আমায় করিস দাফন!