মাতৃক্রোড়ের প্রকোষ্ঠ ভেদে তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জন্মেছিলাম আমি! জন্মেছিলাম স্ববশ বাংলার মানচিত্রের বুকে নিজের কারুকার্যের নিখুঁত আগমনীর ছাপ এঁকে যেতে। দূর্ভাগ্য কিন্তু আমি পারিনি!


দেখেছি আবদ্ধ শিবিরের নয়ন ভেজা আর বুকফাটা আর্তনাদ! নিষ্ঠুর সমীকরণের ক্ষতবিক্ষত ওষ্ঠে আমাকে বশীভূত করেছিলো তাদের দলে অংশীদার হতে। কিন্তু সেদিন আহত হয়েও মরিনি।


সেদিন আবদ্ধ শিবিরের ধারে ধারে রাজসম্বন্ধীয় ধর্মঘটকে করেছিলাম বিরোধিতা! জীবিত লাশের নয়নে বৈরনির্যাতনের অগ্নি জ্বলেছিল দাউদাউ করে, উষ্ণ দাবানলে বিক্ষুব্ধ হয়েছিলো পথপ্রান্তর। তবুও আমি মরিনি সেদিন।


আমি তখনো মরিনি! যেদিন সীমান্তের কাঁটাতারে পশ্চিমা গগনের ঝুলন্ত রবির মতো দুলেছিল ফেলানীর রক্তাক্ত লাশ! গতরের তাজা রক্তে স্যাঁতস্যাঁতে হয়েছিল ভূখণ্ডের সহায়হীন মানচিত্র! ষোলো কোটি মানবের বত্রিশ কোটি নয়নে দিয়েছিলো নিঃসহায়ের বর্ননা।
সেই বর্ণনার নির্মম ক্ষত এখনো শুকাইনি!


যেদিন ত্রিশ লক্ষ লাশের কঙ্কাল শ্রেণিবদ্ধভাবে সাজানোর দ্বায় দেওয়া হয়েছিলো আমায়, সেদিন বক্ষে প্রস্তর বেঁধে নারী হতে পুরুষ, কিশোর থেকে কিশোরী সহ অসংখ্য নবজাতকের লাশের স্তুপ গুছিয়েছি.. সেদিনও আমার মৃত্যু হয়নি।


আমি প্রতিনিয়ত আঁতকে উঠেছি বেওয়ারিশী কিছু কঙ্কাল দেখে! সেদিন নারী কিংবা নর চিহ্নিত করতে গিয়ে আত্মার করুন আর্তনাদ আমি নিজ কানে শুনেছি! দায়বদ্ধতায় তবুও নিজেকে বিসর্জন দিয়েছি। সেদিন মরেও বেঁচে আছি।


এখন তো আমি কবি!
এখন প্রতিনিয়ত আমাকে মরতে হয় ললনার ওষ্ঠের অলিন্দে, স্বামিত্ব আদায়ের বিফলা গল্পে, বাক স্বাধীনতার ঘোরতর কোন্দল আমাকে ইশারা দেয় মৃত্যুর দিকে। তাই আমি মরি, প্রতিনিয়ত ঢলে পড়ি মৃত্যুর দিকে।


গত রজনীতেও আমার মৃত্যু হয়েছে! কবির মৃত্যু হয়। আবারও মরবো, আমার আত্মার মরা লাশ জায়গা পায় সাড়ে তিন হাত গোরখানা! আবারও মরতে চাই কোন নিপিড়নকারীর উৎপীড়নে, নচেৎ ললনার ওষ্ঠের উষ্ণ আলিঙ্গনে।