বিষন্নে আলোড়নী হয় আমার অন্তরাত্মা,যখন হলুদ গোলাপ হাতে ফুটফুটে এক কিশোর ছুটে যায় নগ্ন ধীর-পায় প্রভাতফেরীতে, তার বক্ষ জুড়ে প্রিয় বাংলার মানচিত্র, মাথায় বাঁধা বর্ণমালা খচিত শহীদ মিনার,


যখন গুনগুন করে কন্ঠে তুলে একুশের গান--
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি- আমি কি ভুলিতে পারি"-- তখন অশ্রুসিক্ত নয়নে ভেসে ওঠে নৃশংস- নিষ্ঠুর চিত্রপট।


একুশ এলে দেখতে পাই শহীদ বেদী পাহারায়- নিঃসঙ্গ পঙ্গু মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ,
আঁখির দু'কোণে ক্ষরিত হয় এসিডদগ্ধ দুঃখজল,
অদম্য অপত্য'রা বুকের তাজা শোণিতে পিচঢালা কালো রাস্তা রঞ্জিত করেছিল যেদিন--


সেদিন তরুণ নব্য কবি'রাও প্রস্থান করেছিল উত্তপ্ত রাজপথে,সপ্তসিন্ধু তের'শত নদী, সহস্রাধিক সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যোগ দিয়েছিল অলস দেশপ্রেমিক ভিরুটাও।


একুশের আর্তচিৎকার আজও তন্দ্রা'ঘোরে শুনি,
সেদিন রফিকের বক্ষ বেয়ে কণা'কণা ঝরেছিলো অশান্ত বর্ণমালা'রা! রুধির প্রবাহে গড়ে উঠেছিল বাঙালী জাতিস্বত্বার স্মারকচিহ্ন।


সেদিন বুকচিতিয়ে অবতরণ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, যোগ দিয়েছিল দুরন্ত কিশোর মতিউর, বিয়ের আসর থেকে ছুটে শামিল হয়েছিল অবাধ্য ছেলে শফিক, ঝাপিয়ে পড়েছিল জব্বার, বরকত, শফিউর।


উঁচু শিরে দাড়িয়েছিল মসজিদের ইমাম,দেবালয়ের পুরোহিত, গির্জার পাদ্রী সহ নগরের পাঁতি মাস্তান, স্মৃতির জাবরকাটায় ভেসে ওঠে সেদিনের বিপ্লবী স্লোগান, আপোষ করেনি বাংলার সূর্য সন্তানেরা, মেনে নেয়নি কোন অন্যায়-অনিয়ম।


গমনের সমক্ষ রুদ্ধগতি করেছিল বিষ পোকার দল, অশুভ আগ্নেয়াস্ত্রের ট্রিগারের চাপে সুসজ্জিত হয়েছিল বর্ণমালার একটি মানচিত্র, ফুটফুটে চপলা শিশুর আধোবলা উচ্চারণে পতিত হলো অ-আ-ক-খ।