হে হেমন্তকালের আশীর্বাদধন্য সোনার আমন ধান,
তোমার আগমনীর আলপনাতে সেজে উঠুক উঠান।    
তোমার নতুন চাল ভানতে নববধূ ঢেঁকিতে দেয় পার,
চালনি দিয়ে চালতে চালতে হাত অবশ শাওড়ী মার।
মাটির খোলায় তৈরী ছিদ্রবসনা দরিদ্র চিতল পিঠা,
খেজুরের রসের লালিতে চুবালে লাগবে বড় মিঠা।
পেলে লোহার কড়াই আর সঙ্গে গরম তেলের ছোঁয়া,
রেগে লাল হয়ে টগবগ করে ফুলে উঠে মালপোয়া।    
যেহেতু তার ভেতরে ক্ষীর, যদি সে হয়ে যায় চ্যাপ্টা;
মুখে দিলে নিমিষেই গলে যাবে নিরীহ পাটিসাপ্টা।
মুখের লালারস আর পেটের জ্বলন্ত মারুত-চুল্লী,
সব ভুলিয়ে দেবে ফুটন্ত জলের ভাঁপে তৈরী সেদ্ধপুলি।
পিতৃতর্পণে ব্যস্ত পুরুতমশাইর নেই জিরোনোর অবসর,
জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায় শুকনো খড়ের তৈরী বুড়ির ঘর। দোকানে দোকানে শোভা পায় কদমা-বাতাসার ঝুড়ি,
খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়ে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি।    
সারাদিন চলে মাইক বাজিয়ে চড়ুইভাতির জলসা;
সন্ধ্যায় খোল-করতাল নিয়ে কীর্তনীয়ার বাড়ী আসা।
যেদিন সব ভুলে একাকার হয়ে যায় সকলের দেহ-মন,
ইহাই বাংলার ঘরে ঘরে পালিত উৎসব পৌষ পার্বণ।