শুকনো ঝরাপাতার ওপর আলসে
অস্তাচলের লালিমা শরীরে
জড়িয়ে বাসন্তী রবিবারের বিকেল
নরম ঘুমিয়েছিল
দিবাস্বপ্ন রঙের থমথমে আয়েশে,
অভ্যাসের মুদ্রাদোষ চুরমার অতর্কিতে
জেগে ওঠে, জেগে ওঠে সবাই!


ব্যারাকপুরের সেনাছাউনির আকাশ
কেঁপে ওঠে ভীমরোষে,
প্যারেড চত্বরে গর্জে ওঠা মাস্কেটের নলে!
আগুনের ঠিকানালেখা একটা বুলেট
রসাতল খসিয়ে দেয় বারুদে ধোঁয়া
সব অসন্তোষ-সব বিভেদ ভাঙের তাড়সে,
শিকলে টান পড়েছে প্রথমবার
পরিণতির ভয় ফুৎকারে উড়িয়ে!


লাল শয়তান-পরিবৃত বৃত্তের মধ্যে
পা দিয়ে চাপা ট্রিগার,
অজ্ঞান কঠিন মাটিতে-তরোয়াল ভুলুন্ঠিত,
আগুন ছড়িয়ে পড়ে তোসদানে,
সৈনিকের ঊর্দিতে-ধুতিতে,
দাবানল মাখা মাঙ্গলিক শরীরে!


পুরো ব্যারাকপুরে জল্লাদ মেলেনি,
কালো কাপড়ে মুখ মুড়িয়ে
মঞ্চে মোটা দড়ি জড়িয়ে
যতই পাটাতন সরিয়ে নাও নির্দেশে,
যে আগুন ছড়িয়ে গেছে একবার
মীরাট-কানপুর-লক্ষ্নৌ-দিল্লী দিগন্তে
সে আগুন তুমি নেভাবে কিসে?
চাবুক মেরে-গুলি করে-কামানের নলের
সামনে দাঁড় করিয়ে আর যাই হোক,
আগুনের আগুয়ানেরা বারবার এইপথেই
আসবে ফাঁসির হাসি হেসে … !




***  ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে মার্চ, রবিবার বিকেলে, ব্যারাকপুর সেনাছাউনির প্যারেড গ্রাউন্ডে মঙ্গল পান্ডে নামের এক সাধারণ পদাতিক সেনা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।। ৮ই এপ্রিল তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনিই “প্রথম শহীদ” বলে বিবেচিত হন।।  ***