আজ মে দিবস ! আজ সত্যি সত্যি
অন্য রকম দিন! মহাব্যস্ত সাহেব আজ মিল- ফ্যাক্টরি বাদ দিয়ে
বন্ধু-বান্ধব , ক্লাব পার্টি, বার ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন ।
গাড়ি ড্রাইভার কে ছুটি দিয়ে নিজেই হাঁকাবেন সাধের লেটেসট মডেলের গাড়ি !
মেমসাহেব তাঁর হিসেব টানা ডায়েটিং, বিউটি এন্ড স্পা ক্লাব
ইত্যাদি বাদছাদ দিয়ে আজ মহাব্যস্ত দিন কাটাবেন মিটিং , মিছিল , সভা, সমিতি,
টিভি শো ইত্যাদি নিয়ে ! এসব সবের জন্য অবশ্য মেমসাহেবের
চাই আলাদা রকম সাজ পোশাক, কেশবিন্যাস, মেকআপ !
তাঁর সাথে রপ্ত করা আলাদা রকম
কথা বার্তা , ভাব-সাব , অঙ্গ –ভঙ্গি ইত্যাদি , ইত্যাদি !
জয়তুন এসব দেখে আর ভাবে ; আহা , মেম আম্মা যা পরে
তাতেই তাকে কত না মানায় ! আয়নায় দাঁড়িয়ে সাদা –কালো সুতি শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে মেম আম্মা হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেশ করে ,
কেমন লাগছে রে আমাকে জয়তুন , মানাচেছ ? আহা, কি বলবে জয়তুন
মেম সাহেবের মতো সুন্দরি এ তল্লাটে নাই , তাঁর রুপে পাগল হয়েই
নাকি সাহেব পরথম বিবিকে ছেড়ে ------- ! যাকগে সেসব শোনা কথা
পাগলে কিনা কয় আর ছাগলে কিনা খায় ------! জয়তুন বিড়বিড় করে !
মেম আম্মার আজ মন মেজাজ খুব ভালো , অন্য দিন হলে অবশ্য জয়তুনকে
এ ধরনের সামান্য অন্যমনস্কতার জন্য অনেক খেশারত দিতে হতো বৈকি !
মেম সাহেবের কত ক্ষমতা , তয় জয়তুনের মনের ভিতর যাওয়ার ক্ষমতাতো
তাঁর নাই । থাকলে কি হতো ? জয়তুন বিড়বিড় করে , আর মনে মনে
সাহেবের বড় বিবির পক্ষ নিয়ে , কয়েক দফা বকা ঝকা করে
মেম সাহেবকে , সাহেবও বাদ পরে না !
মেম আম্মার হাতে সুন্দর গোটাগোটা অক্ষরে সাজানো কথামালা,
সাহেবই দিয়েছে লিখে কাল রাতে ! শ্রমিকের দাবিতে ভরা
ভরা প্রতিশ্রুতি্তে সে সব কথা ! আট ঘণ্টা কাজ , ন্যায্য মুজুরি
বেতন, ভাতা , চিকিৎসা , ঘর, বাড়ি , অবসর , বিনোদন ----- কত আরও
কত কি ! জয়তুন এসবের সবটা বোঝে না ! তবে বেশ বুঝতে পারে
বেগম আম্মার কথার জোরে কাল থেকে
নির্ঘাত সাহেবের কারখানার গরীব মানুষগুলোর ভাগ্য যাবে পালটে !
কি বলিস রে জয়তুন বিড়বিড় কোরে , কি বলিস ? মেম আম্মা জিজ্ঞেস করে ।
জয়তুন তাঁর পান জরদা মাখা ভাঙ্গা দু গাল ঠেলে মিন মিন করে বলে,
আম্মাগো, কাইল থাইকা আমারে সাহেবের কারখানায় একডা শ্রমিকের
চাকরি দিয়া দেবেন ---------------------?