ভিক না চ্যায়া কি করি বাপধন
তিন কূলে কেউ নাই । মড়া জারে নিদ আসে না
নিদ আসে না মরা দুই-চোখে
মোরে শাপ দিও না বাপ, মোকে এ্যানা শীত বস্তর দ্যাও
আপনেরা বাপ-ধন । দ্যাও মা-ধন, দিলে ফুরায় না !
হু হু শীতে সে চৌ রান্তার মোড়ে বসে সুর করে ভিক্ষা মাগে
তিন কূলে কেউ নাই ধন
দ্যাও বাপধন, দ্যাও মাধন, দিলে ফুরায় না !
কেউ দয়া কোরে দুচার টাকা দেয়, কেউ বা দেয় না
কেউবা পরম বিরক্তি ভরে পাশ কাটিয়ে চলে যায়
কেউ বা হুইশেল মুখো নীল -লাল বাতি পুলিশের কাছে
রাশভরে অভিযোগ করে, এসব মানুষদেরকে রাস্তায় বসতে দেবার জন্য !
তাঁর গায়ে ধূসর চাদর জীর্ণ ,শীর্ণ । রাখঢাকহীন শীতের বাতাস
হু হু বয় সারা শরীর জুড়ে !পলিপড়া পায়ে দুই রঙ ফিতাওলা
পঞ্জের স্যান্ডেল মাপহী্ন !পরনের সূতির শাড়ি , চাতালের মড়া কুমড়ো
লতার মতো দুমড়ানো -মুচড়ানো ! কুঁচকে পড়া গালের দুভাজে ভরা
পৃথিবীর থির বয়স !
সামনে রাখা একটা টেপানো টিনের বিবর্ণ থালা
সেখানে ছিটানো খান কয়েক কাগজের টাকা, পয়সা আনি-আধুলি ।
সময় পেলে পরম যত্নভরে সেগুলো গুছিয়ে রাখে
সে , তাঁর পয়সায় দিন চলে বস্তির কানাখোঁড়া
কজন মানুষের । এরাই তার সংসার ।
এমন কোরেই কেটে যায় তাঁর কাল । সময় ,মাস , বছর ।
কেউ দেখে না তাঁর গায়ের রং , কেউ দেখে না তাঁর শীর্ণ দু হাতে খুলে
পরা চুড়ির দুগাছি ! দেখে না কেউ শ্রীহীন শরীরের বাঁক !
কেউ শুধায় না তাঁকে , কোথায় তোমার ঘড়
কোথায় তোমার বাড়ি -কিবা তোমার পরিচয়
কোন ঠিকানায় বা থাকো তুমি ! শুধবার কথা মনে
করেনা কেউ। কারই বা এত সময় , সময় নষ্ট করার ?
সে কেবল রাস্তার ধারে পরে রয় ফেলে দেয়া টিনের জং ধারা কৌটোর মতো
যাকে নিয়ে খেলা করে বড় জোর পাড়ার হাভাতে ছেলের দল !
প্রতিদিন দুপুর বেলা সামনের মুদি দোকানের ছোকড়া ছেলেটা
নিজে কম খেয়ে তার থালার কোনে রেখে দেয় দুগাল ভাত-ভরতা-ভাজি !
সে তা পরম তৃপ্তি ভরে খায় আর দোয়া করে ছেলেটাকে !
দোয়া করে তাদের জন্যও যারা অনেক থাকতেও
তাঁর মতো মানুষদের জন্য একটুও ভাবে না ।
সবার মঙ্গল কামনায় খোলা তাঁর দোয়ার ভাণ্ডার
কেননা সে যে আমাদের মা !