অনেক অনেক কাল বাদে গৌতম বোস
চিঠি লিখছে মধুমিতা দত্তকে ;
মনে পড়ে মধুমিতা আমায় ? আমি গৌতম বসু
সেই গোঁয়ার গোবিন্দ গৌতম ,যার হাত থেকে রেহাই পাবার
জন্য প্রায় ৩৫ বছর আগে তোমার বাবা-মা রাতারাতি
হোয়েছিলেন দেশান্তরী তোমায় নিয়ে  ! দোষ দেইনা তাঁদের
আমার এমন সোনামুখী মেয়ে থাকলে, তার ভালোটা ভেবে
আমিও নির্ঘাত তাইই কোরতাম !


যাকগে সে সব কথা !  রবি কবির মতো করেই বলি;
ক্যামন আছ, কেমনে চলছে সংসার ইত্যাদি !
শোন , আমি কিনতু  ঠিক আগের মতোই আছি
তেমনি ঝড়ো হাওয়ার মতো অগছালো সংসার
ঘড়কন্যার বালাইহীন এলোমেলো জীবন ! তবে ধারাপাতের নিয়মে
বেড়ে ওঠা বয়সটাকে  বশে আনতে  
এলপ্যাথ আর কবিরাজি ঔষদ পত্রর , কালো ফ্রেমের কাঁচমোটা চশমা
পিকদানি, থার্মোমিটার , সেলাই করা চটি,বৃষ্টি ছাতা
স্কুলের রুটিন, বই -পত্তর, নেইল কাটার , পেসার-সুগার
মাপা যন্ত্র, ষ্টীলের হাঁটালাঠি, হাতেবোনা হাইকলার সোয়েটার
উলমোজা, কান টুপি ইত্যাদি , ইত্যাদিতে ভরা  ইদানীংকার জমজমাট সংসার
নিয়ে আছি বেশ !


মধুমিতা , শুনেছি অনেক বড় ঘড়ের বউ হোয়েছ তুমি
আজ দিল্লি , কাল লন্ডন , প্যারিস , কখনও মাহিশর, আগ্রা,
কখনও বা ব্যাংকক, দুবাই ঘোরাঘুরি
কতো দেখাশোনা , কেনাকাটা ,  পরিচয় , ভাল লাগালাগি !
এ সবের মাঝে  অতি সামান্য এ মানুষটাকে, ভুলে গিয়ে
বেশ ভালই করেছো তুমি !  অবশ্য দোষ দেই না তোমাকে।
যে ভাগ্যকে মানি নি এত কাল ,  এখন সব দোষ    কেন যেন তাঁর কাঁধেই
চাপিয়ে দিতে ইচ্ছে করে বড় !


সেই যে , লুকিয়ে লুকিয়ে  কলেজ ফাঁকি দিয়ে ম্যাটিনি শো  দেখা
বইয়ের ফাঁকে চার পাতার চিঠি গুঁজে দেয়া,নাম লেখা রুমাল উপহার
গোলাপ হাতে কলেজ গেটে দাড়িয়ে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি তবুও
কেন যে মনে পরে বার বার !  যাগগে শুনেছিলাম , রোমিও জুলিয়েট নাকি
সর্গে গিয়ে এক হয়েছিল একদিন, আর আমরা ?
না  গেলেম স্বর্গে,  না হোলেম হেথায় দোকা !
আর দেখো  কিসে আর কিসে ! কোথায় বোম্বে
আর কোথায় পাবনার  কৃষ্ণপূর?  তেলে আর জলে !
যদি থাকতে কূলে কাছে, হয়তো  হোতো দেখা
হয়তো না । হয়তো আমি , রুপ বদল কোরে   কণ্ঠি হার হতেম
তোমার গলের,  নিদেনপক্ষে বেলোয়ারী চুড়ি  ।
না হলে কিছুই হোতেম না , হোতেমই না
তোমার তাতে কি হতো, আজোও যেমন হয়না কিছুই  !


এখন আসল কথায় আসি মধুমিতা , বলতো এতকাল বাদে অকারণ তোমায়
লিখছি ক্যানো এ  চিঠি ? বৈদ্য সাফ সাফ জানিয়ে  দিয়েছে আমার এ দেহ ঘড়ির
আয়ু বড় জোড় আর কটা দিন ! তবে ভয় নেই
এ চিঠি কোনদিনই  পৌঁছবে না তোমার হাতে ! তবে কেন লেখা ?
মনের কথা জানিয়ে দেয়া অন্তরে অন্তরে তাই , তাই আর কি  !  
এতকালের পরিচয়ের সুবাদে,  আমি  এ অধিকারটুকু পেতেই পারি,
না কি পারি না , বল তুমি !!