"বাংলা কবিতা" আসরে এক অন্যতম কবি, আলোচক, শিক্ষক-গুরু, মাননীয়, শ্রদ্ধেয়, পুজনীয় যাদব চৌধুরী মহাশয় রচিত “পরিচয়” কবিতাটিতে (কবিতা আসরে প্রকাশিত - ০১.০৯.২০১৭ তারিখ) এক অপূর্ব, অসাধারণ, অতিসুন্দর, স্বচ্ছ প্রেম/ভালবাসার কাহিনী-চিত্র বর্ণনা করা হয়েছে।
সময় কারো অপেক্ষায় থাকেনা। চিরকাল চলমান। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে প্রেম বর্তমান। যুগে যুগে সব কিছু পরিবর্তনশীল। কিন্তু প্রেম হৃদয়ের সাগরে অমর হয়ে আছে। বলা যেতে পারে, সব কিছুর মধ্যে প্রেম নিমজ্জিত। আমরা কেউ প্রেম থেকে মুক্ত নই, সদা যুক্ত। কোনো জিনিসের প্রতি যতই আমাদের প্রেম থাক না কেন, নর-নারীর প্রেম শ্রেষ্ঠ।অনেক নর-নারীর প্রেম অমর। ইতিহাসের পাতায়, গবেষনায় প্রেমের মানুষ মনে অমর হয়ে আছে, চিরকাল থাকবে। সেই সঙ্গে অমর হয়ে আছে ভালবাসা। ভালবাসা ও প্রেমের অনেক প্রকার ভেদ আছে। কিন্তু কবির এই “পরিচয়” কবিতাটি প্রেমের নাকি ভালবাসার ? প্রেম আর ভালবাসার সংজ্ঞা যা বলে, তাতে মনে হয়েছে কবিতাটি ভালবাসার পূর্বরাগ পর্বের।
ভালবাসা আর প্রেম – দুইটি শব্দ চিরকাল শুনে আসছি। ব্যবহারও করি l কিন্তু ভালোভাবে গভীরে গিয়ে ভেবে দেখি না। বিশেষজ্ঞদের মতে এই শব্দ দুটি খুব কাছাকাছি l তবু শব্দ দুটির মধ্যে অর্থগত পার্থক্যও আছে। ভালবাসা হল মানুষের আবেগ ও অনুভুতির একটা স্বাভাবিক রুপ। মানুষের প্রতি মানুষের ভালো লাগার বোধ, শ্রদ্ধাবোধ, হৃদয়ের অদৃশ্য টান, মায়ামমতা, দয়া থেকেই মূলত ভালবাসার উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ, হৃদয়ের অদৃশ্য টান, মায়ামমতা, দয়া ইত্যাদি থাকলে ভালবাসার জন্ম হয়। ভালবাসা যখন তীব্রতর হয় তখনই তা প্রেমের রূপ নেয়। যাই হোক, এই সব নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তর্ক-বিতর্কও আছে।
মাননীয় কবি যাদব চৌধুরী রচিত 'পরিচয়' কবিতাটি ভালবাসার পূর্বরাগ পর্বের অমূল্য কবিতা- বলে মনে হয়।
প্রেমিক/প্রেমিকা যখন কাউকে মন দিয়ে ভালবাসে, আর তার প্রেমিক/প্রেমিকা হতে চায়, তখন প্রেমিক/প্রেমিকা পৃথিবীর সমস্ত মনোরম দৃশ্য ত্যাগ করে। শুধু মন দিয়ে, প্রাণ দিয়ে তাকেই দেখতে চায়। আর এই দেখাতে কোনো ফাঁকি থাকে না l অর্থাৎ, দুই নয়ন অতি মনোযোগ সহকারে একমনে তাকেই দেখতে থাকে l মনে হয়, অতীতের কোনো এক জন্মের জানা, চেনা, পরিচিত l বর্তমান জীবনে যার সঙ্গে পরিচয় সেভাবে গড়ে ওঠে নি, সে-ই যেন অনেক দিনের, চিরকালের অতি-পরিচিত জন । দিনের সূর্য অস্তমিত হয়, সমস্ত জীব-কুল, মানুষ, তাদের কাজ-কর্ম শেষ করে নিজ নিজ স্থানে ফিরে চলে কিন্তু প্রেমিক/প্রেমিকার পরস্পরকে দেখা যেন শেষ হয় না। দুই আঁখির দেখার ক্ষুধা চলতেই থাকে l শেষ হয়না, মেটেনা কখনও, কোনোদিন।
যুগ যুগ ধরে যেন পরিচিত l আর যখন সে একবার এক মুহূর্তের জন্য সামনে আসে, মনে আনন্দ-শিহরণ জাগে l তাকে যেন সে অনেক দিন হতে চিনে। এক মুহূর্তে যুগ যুগ ধরে জানা, চেনা বিষয়টি বর্তমান জীবনের অজানা, অচেনাকে বদলে দেয়। মুখের কোনে মৃদু হাসি, লজ্জা মাখা আঁখিদুটি, আর হৃদয় থেকে অল্পস্বল্প প্রেম-ভালবাসার সুবাস বেরিয়ে আসে। সব কলাতেই যেন মোহময়ী হয়ে উঠে আর সব কথাতেই অমৃতসম মিষ্টির বৃষ্টি ঝরে পড়ে।
“পরিচয়” এক অপূর্ব, অসাধারণ, অতিসুন্দর, স্বচ্ছ প্রেম/ভালবাসার কবিতা। রচনাটি এই আসরকে উপহার দেবার জন্য শ্রদ্ধেয় কবিকে জানাই হৃদয়ের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
আশীর্বাদ প্রার্থনীয় l