(হুমায়ুন আহমেদের প্রতি)


হে অনন্ত পরিপূর্ণ কবি,
আমিও প্রতি পূর্ণিমার মধ্য রাতে আকাশের পানে চেয়ে থাকি
দেখি গৃহত্যাগী হবার মতো জ্যোৎস্না কি উঠেছে ?
যে জ্যোৎস্না দেখামাত্র বালিকারা আনন্দে নেচে উঠবে,
প্রতিবেশীও জানতে চাইবে, ‘এই আজ তোদের এতো ফূর্তি কেন’ ?
তখন তারাও তাকাবে আকাশের দিকে-
সকলে সমস্বরে বলবে, ‘তাইতো
কি অপূর্ব রুপোর থালার মতো চাঁদ !
একদল যুবক গ্রামের মেঠোপথে
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চিৎকার করে বলবে-
‘তোমরা সবাই ঘুম থেকে জাগো
চেয়ে দ্যাখো আজ সিদ্ধার্থের মতো গৃহত্যাগী হবার
                                  জ্যোৎস্না উঠেছে।’  


কাজলা দিদির অবুঝ ছোট্ট খুকিটি সত্যিই হারিয়ে যাবে
সে অথৈই মন্ত্রমুগ্ধ জ্যোৎস্নার ধূসর জলশ্বাসে ।
যে জ্যোৎস্নায় শুধু সুখের স্মৃতিপূর্ণ ডাষ্টবিন চোখের সম্মুখে
ভেসে উঠবে অজস্র । আর যন্ত্রনার স্মৃতিপূর্ণ ডাষ্টবিন ?
সমুদ্রের লোনাজলে যাবে অতল গভীরে তলে ।
সে জ্যোৎস্নার মোহে হ্যামিলিয়নের বাঁশির সুরের মতো
গ্রামবাসী ছুটবে বিস্তৃর্ণ খোলা প্রান্তরে ।


সে রাতে আকাশে থাকবেনা এক টুকরোও মেঘ,
বিজলি যাবে চলে
মাঝি দিবে তার ছোট্ট কুপিটি নিভে,
আর ওপাড়ার নেশাখোর পাপ্পুও সেরাতে সিগারেট ধরাবেনা
দিয়াশলাই জ্বলবে বলে.......


সে রাতে বৃদ্ধরা বৃদ্ধের সাথে
যবুকরা যুবকদের, শিশুরাও করবে খেলা,
জ্যোৎস্নার কোমল স্পর্শে বিস্তৃর্ণ প্রান্তর জুড়ে
বসবে মিলন মেলা।
পাখিরা ভাববে তখন, এখনোতো ভোরের গান গাওয়া হয়নি
তবে কিভাবে ভোর হলো ?
ভোর যেনো না হয়, যেনো অনন্ত রয় এ বিস্ময় মিলন মেলা।


হে কবি,
হয়ত এমনি জ্যোৎস্না উঠেছিলই এক রাতে,
নেত্রের কোনায় কোনায় কিংবা সমুদ্র বিলাসের বিলুপ্ত
                                               নির্জনতায়।
সে রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিলো, শুধু জেগে ছিলে তুমি;
জ্যোৎস্নার উৎসবমুখর আহবানে সিদ্ধার্থের মতো গৃহত্যাগী হয়ে
লিখেছিলে অনন্ত পরিপূর্ণ একটি কবিতা । তাইতো
দৃষ্টিতে আমার তুমিই শ্রেষ্ঠ কবি পৃথিবীর।


তবুও গৌরব কিসে কবি ?
মনে করো, তোমার জন্ম যদি আরো কিছুদিন পরে হতো
তবে দিতামকি তোমাকে সুযোগ এমন কবিতা লেখার ?
তুমিতো গল্প লেখো, উপন্যাস লেখো...
কবিতা লিখলে তবে কেন ?
শুধু একজন মিসির আলী নয়, হাজারো মিসির আলী, খলিলুল্লাহ কিংবা
হিমুকে সৃষ্টি করো তুমি, কোনো আপত্তি নেই তাতে;
আপত্তি এটুকু- আমার কবিতাটি লিখলে কেন তবে ?


তোমার সে কবিতার মতো একটি কবিতা লেখার জন্য
কতো বিনিদ্র যে জেগেছিলাম নির্জনতাকে সাক্ষী রেখে
পূর্ণিমার ধূসর বন্যার আহবানে
পুন্ড্র নগরীর ধ্বংসস্তুপের পাশে – অসংখ্য নক্ষত্রের পাহারায়
সেকি তুমি জানো ?


হয়ত এমনি জ্যোৎস্না উঠবেনা আর কোনোদিন.........
তবুও প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে
সিদ্ধার্থের মতো বসে থাকি আমি
                    গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার অপেক্ষায়।
যে জ্যোৎস্না দেখামাত্র ঘর ছেড়ে নেমে আসবে গ্রামের মেঠোপথে,
গায়ে জ্যোৎস্নার ধুলা মেখে বিস্তৃর্ণ সে প্রান্তরে
                                  হাঁটবো, হাঁটবো
                                         আর হাঁটবো ।
অবশেষে
লিখবো অনন্ত পরিপূর্ণ একটি কবিতা ‌
ঠিক তোমারি মতো ।


(নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের একটি উপন্যাসে তিনি ৮/১০ লাইনের একটি কবিতা লিখেছিলেন, সে কবিতাটিকে কেন্দ্র করেই আমার এই ছোট্ট প্রয়াস)


৯/২০০৩