ফজলুল হক সেলবর্ষী : যে রত্নকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি মহাকালের স্রোতে  

খ্যাতিমান সাংবাদিক ফজলুল হক সেলবর্ষীকে আমরা অনেকেই চিনি না। তাকে অচেনা করে রাখার কারন আমাদের কে ও একদিন কেউ মনে রাখবে না। কারন হিসেবে নিজেকে প্রশ্ন করা উত্তম।  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর লেখায় বিমুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘ফজলুল তুমি জগলুল সম’ লিখে উৎসাহিত অভিনন্দিত করেছিলেন। এই হারিয়ে ফেলা বাঙ্গালী জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ফজলুল হক সেলবর্ষী আনুমানিক ১৮৯৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলাধীন সেলবরষ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাফিজ মোহাম্মদ জাহান আলী যুক্তপ্রদেশ থেকে এসে সেলবরষ গ্রামের এক সম্ভ্রান- পরিবারের বিদুষী মহিলা লেবাসুন্নেসাকে বিবাহ করে সেলবরষের বাসিন্দা হয়ে যান। পিতার কাছেই লেখাপড়ায় হাতেকরি। গ্রামেই পারিবারিক পরিবেশে ইংরেজি, উর্দু, ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। সুনামগঞ্জ মহকুমার একমাত্র ইংরেজি বিদ্যালয় সরকারি জুবিলী হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। তিনি যখন দশম শ্রেনীতে পড়তেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সামপ্রদায়িক মানসিকতার কারণে তাঁকে স্কুল ত্যাগ করতে  বাধ্য হয়। এখানেই তাঁর একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। একাডেমিক শিক্ষা শেষ করার সুযোগ তার হয়ে উঠেনি। তিনি জড়িয়ে পড়েন লেখালেখির জগতে। তাঁর ছাত্রজীবনের কিছু লেখা কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এ. কে. ফজলুল হক প্রতিষ্ঠিত প্রথম পর্যায়ের ‘দৈনিক নবযুগ’-এর সম্পাদনা বিভাগে যোগদানের পর থেকেই সত্যিকারভাবে তাঁর সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন সভা সমিতিতে যোগদান করে তিনি বক্তৃতা দিতেন। তা অনেক সময় ভুলবশত বিভিন্ন পত্রিকায় এ. কে. ফজলুল হকের নামে ছাপা হয়ে যেত। এ বিভ্রাট থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি এ. কে. ফজলুল হকের পরামর্শে নামের সাথে সেলবর্ষী লেখা শুরু করেন। তাঁর নামের শেষে সেলবর্ষী জন্মপল্লী নামটি তখন থেকেই পাকাপাকিভাবে যুক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে শুধু সেলবর্ষী নামেই সর্বত্র পরিচয় লাভ করে জনমানসে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেন।  তখন ‘দৈনিক নবযুগ’-এর সম্পাদনা বিভাগে যুক্ত ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখক আবুল মনসুর আহমদ ও কমরেড মোজাফ্‌ফর আহমদ। সম্পাদক হিসেবে এ. কে. ফজলুল হক এবং মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসেবে সুসাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর নাম পত্রিকায় মুদ্রিত হতো। নজরুল জীবনের প্রথম ভাগে কবির যাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তাঁদের একজন ফজলুল হক সেলবর্ষী। নজরুলের ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় সেলবর্ষী ছদ্মনামে রাজনৈতিক নিবন্ধ লিখতেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে সাংবাদিকতায় শিক্ষালাভের জন্য বিলাত যাওয়ার অভিপ্রায়ে বোম্বে গিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নার সাথে সাক্ষাত করেন। মিস্টার জিন্নাহ তাঁর আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা করেন। তবে যুদ্ধের ডামাঢোলে বিলাত যেতে নিষেধ করেন। সেলবর্ষী পরে সাংবাদিকতা ও রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ট হয়ে গেলে বিলাত যাওয়ার বাসনা ত্যাগ করেন। সেখানে তিনি কিছুকাল ‘বোম্বে ক্রনিকেল’-এর সাথে যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন পর আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯২০ সালে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলন দেশে দুর্বার গতিতে চলছে। সেলবর্ষী ব্রিটিশ বিরোধী এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজদ্রোহীতার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ধৃত হয়ে তিনি বন্দীত্ব বরণ করেন। সুনামগঞ্জের এক জনসভায় সরকার বিরোধী বক্তৃতার অপরাধে জেলে গেলে দুহালিয়ার জমিদার দেওয়ান মোহাম্মদ আহবাব চৌধুরী পাঁচ হাজার টাকা জামানত দিয়ে তাঁকে মুক্ত করেন।


ফজলুল হক বুঝতে পেরেছিলেন যে কেবলমাত্র সংবাদপত্রে লিখে নিদ্রিত জাতিকে জাগানো যাবে না। তাই তিনি ধর্ম সংস্কৃতি শিক্ষা তাহজীব তমদ্দুন সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে মুসলমানদের জাগানোর চেষ্টা করতেন। এ বিষয়ে তাঁর আদর্শ ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ। খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করে তিনি বাংলা, বিহার, আসামের বহু জায়গাতে বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন। রাজনৈতিক ও বৈপ্লবিক কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট হয়ে যান। কলকাতায় ‘জিহাদ পার্টি’ নামে একটি বৈপ্লবিক দল তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ফজলুল হক সেলবর্ষী। তাঁর অন্যতম সহযোগী ছিলেন কবি বেনজির আহমদ। এ দলের সদস্য হতে হলে এক হাতে কোরআন অন্য হাতে পিস-ল নিয়ে শপথ করতে হতো। খিদিরপুর করবস'ানে অবসি'ত ষোলহাজারী মসজিদে সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করতেন। পরাধীন দেশে বসে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর ফলে তাঁর নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। তাই পত্রিকায় প্রকাশ্যে কাজ করা এবং স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিসি'তিতে মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য বৃহত্তর কিছু করার লক্ষ্যে সহকর্মী আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে গোপনে তুরস্কের পথে যাত্রা করেন। আফগানিস-ানের পথে ছদ্মবেশে যাওয়ার সময় পেশওয়ারের সব কদর নামক স'ানে এক সেতুর উপর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে তাঁর সাত বছরের জেল হয়। বিভিন্ন জেলে কারাদন্ড ভোগ করে অবশেষে আসামের জোরহাট জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন।


মুক্ত হয়ে পুনরায় কলকাতায় গিয়ে মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁর ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’তে সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। এ পত্রিকায় বারো বছর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বলিষ্ঠ সম্পাদকীয় নিবন্ধ বাংলা আসামের মুসলিম জনজীবনে জাগরণের সৃষ্টি করে। ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার কারণে সরকার কর্তৃক পাঁচশত টাকা জরিমানা করা হয় এবং ছয়মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ‘দৈনিক সুলতান’-এর সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। ১৯২৯ সালে নিজ মালিকানায় ‘সাপ্তাহিক আল-মুসলিম’ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। প্রায় তিন বৎসরকাল পত্রিকাখানা চালু ছিল। প্রাচ্যর খ্যাতনামা মনীষী দার্শনিক জামাল উদ্দিন আফগানীর দর্শন চিন-া প্রসূত ‘প্যান-ইসলামিজম’-এর বাণী প্রকাশই আল মুসলিমের প্রধান লক্ষ্য ছিল। পত্রিকার শিরোদেশে আল-কোরআন, তরবারি, চাঁদ, তাঁরা প্রতীক চিহ্ন শোভিত থাকতো। বাগ্মী বিপিন চন্দ্র পাল ছিলেন প্যান-ইসলামিজমের ঘোর সমালোচক। সেলবর্ষী তাঁর সমালোচনার কড়া জবাব দিতেন আল-মুসলিমের পাতায়। অর্থাভাবে ‘আল-মুসলিম’ বন্ধ হয়ে গেলে সেলবর্ষী ‘নয়াবাংলা’ নামে একখানা পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৩৬ সালে ‘দৈনিক তকবীর’ প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেন। নানা কারণে ‘দৈনিক তকবীর’ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে সেলবর্ষী মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমীন প্রবর্তিত ‘সাপ্তাহিক মোসলেম’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। প্রায় চার বৎসরকাল তিনি উক্ত পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ‘সাপ্তাহিক মোসলেম’ পত্রিকার কার্যালয় বশির হাটে স'ানান-রিত হয়ে গেলে সেলবর্ষী আসামের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ পাকিস-ান আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষস'ানীয় নেতা, আসাম সরকারের মন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর আহ্বানে ১৯৪২ সালে সিলেটে চলে আসেন এবং ‘সাপ্তাহিক যুগভেরী’ পত্রিকায় যোগদান করেন। প্রায় বৎসরাধিকাল ‘যুগভেরী’র সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৪৪ সালে পুনরায় ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কলকাতায় চলে যান। উক্ত পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁর পুত্র খায়রুল আনাম খাঁ ‘অর্ধসাপ্তাহিক পয়গাম’ প্রকাশ করলে সেলবর্ষী পয়গামের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন। উভয় পত্রিকায় তিনি সাড়ে সাত বৎসর কাজ করেন। ১৯৫২ সালে ফজলুল হক সেলবর্ষী ঢাকায় চলে আসেন এবং ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। ‘দৈনিক নাজাত’, ‘দৈনিক বুনিয়াদ’, ‘সাপ্তাহিক চাষী’, ‘মাসিক তর্জুমানুল হাদিস’ পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। শেষবারের মতো তিনি ‘অর্ধসাপ্তাহিক ইসলামিস'ান’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। কিন-ু অর্থাভাবে পত্রিকাখানা জনসমক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর সাহিত্যকর্মও ছিল যথেষ্ট। তিনি ‘মুসলিম ভারত’, ‘আল ইসলাম’, ‘সওগাত’, ‘নূর’, ‘সাম্যবাদী’, ‘মাসিক মোহাম্মদী’, ‘সোনার বাংলা’, ‘ইসলাম দর্শন’, ‘তাজ’, ‘দিশারী’, ‘মাহে নও’ প্রভৃতি পত্রিকায় সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখতেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম গ্রন'াকারে প্রকাশিত হয়নি। তিনি গদ্যে পদ্যে সমান দক্ষ ছিলেন। তাঁর রচিত ‘সেন্ট হেলেনা’ কবিতা ‘মুসলিম ভারত’ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। মহাকবি ইকবাল রচিত ‘তারানা-ই-মিল্লি’ কবিতার বঙ্গানুবাদ তিনি করলে পাঠকমহলে প্রশংসিত হয়। তাঁর রচিত ‘ওকাবা’ কবিতা পাঠকসমাজে গ্রাহ্যতা পায়। ‘শহীদে আজম’ নামে একখানা গ্রনে'র পাণ্ডুলিপি ছিল- যা হয়তো এখন আর পাওয়া যাবে না। তিনি আমৃত্যু পাকিস-ান সাহিত্য মজলিসের সভাপতি ছিলেন।


ফজলুল হক সেলবর্ষী প্রথম জীবনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ দু’টি রাজনৈতিক সংগঠনের বিভাজন ও আদর্শগত ভেদরেখা প্রথমদিকে এত তীব্রতর ছিল না। পরবর্তীকালে মুসলিম লীগের সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক কার্যকলাপে ভেদরেখা প্রকট আকার ধারণ করলে তিনি পুরোপুরিভাবে মুসলিমলীগের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হোসাইন আহম্মদ মদনী প্রমুখ ভারতীয় জাতীয় নেতৃবৃন্দের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।


এ জ্ঞানতাপস ও সংগ্রামী পুরুষ জীবনের শেষ সময়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েন। তাঁর আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল চিরসাথী। অভাব, অনটন চরমে ওঠে। অকৃতদার থাকায় শেষজীবনে অত্যন- নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। বৃদ্ধ বয়সে স্বীয় জন্মভূমি সেলবরষে এসে আশ্রয় নেন। অত্যন- দরিদ্র অবস'ায় শেষ জীবন কাটে। তাঁর গৃহ ছিল একটি জীর্ণকুঠির। শের আলী তালুকদার নামক তাঁর এক দুঃসম্পর্কের ভাতিজা তাঁকে দেখাশোনা করতেন। তবে এ সময়ে কয়েকজন সুহৃদ বন্ধু ও গুণগ্রাহী তাঁর পাশে দাঁড়ান। তাঁদের চেষ্টায় পাকিস-ান কেন্দ্রীয় সরকার মাসে একশত পঞ্চাশ টাকা এবং প্রাদেশিক সরকার মাসে পঞ্চাশ টাকার দুটি বৃত্তি প্রদান করেন। উভয় বৃত্তির টাকাই ছিল তাঁর চলার পাথেয়। নানা কষ্টের সাথে রোগশোকের ভেতরে শেষজীবন অতিবাহিত করেন। কোনো তকমা বা খেতাব তাঁর জীবনে জুটেনি। দীর্ঘজীবনে ১৯৪৩ সালে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। প্রখ্যাত ইসলামি চিন-াবিদ, স্বনামধন্য গবেষক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এ. জেড. এম. শামসুল আলম ১৯৬৭ সালে সুনামগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক থাকাবস'ায় তাঁর উদ্যোগে মহকুমার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রাজনৈতিক ও সাহিত্য সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে ফজলুল হক সেলবর্ষীকে একটি সংবর্ধনা প্রদান করেন। তাঁর সাথে দেওয়ান মোহাম্মদ আহবাব চৌধুরীও সংবর্ধিত হন। ইহাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ প্রাপ্য। ফজলুল হক সেলবর্ষী ব্যক্তিগত জীবনে অতিশয় ভদ্র, বিনয়ী, দৃঢ়চেতা ছিলেন। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি। তিনি ছিলেন নিঙ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী। দেশ ও জাতির সেবাই ছিল তাঁর একমাত্র ভাবনা। খাঁটি মুসলিম, তেজস্বী, ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে তাঁর পরিচয় ছিল সর্বজনবিধিত। আজীবন সংগ্রাম করেছেন অন্যায়, অবিচার, অধর্মের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধের ময়দানে তাঁর অসি ছিল কলম। তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটে ১৯৬৮ সালের ৮ নভেম্বর। সেলবরষের সৈয়দবাড়ির পারিবারিক গোরস'ানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। নিছক পল্লীগ্রামে শুয়ে আছেন বাংলার প্রখ্যাত সাংবাদিক, বিপ্লবী নেতা, বাগ্মী, সাহিত্যিক, স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী পুরুষ মরহুম ফজলুল হক সেলবর্ষী। আমাদের দুর্ভাগা জাতি তাঁর কর্মের কোন মূল্যায়ন করতে পারেনি। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমীন॥ বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ হারূন আকবর