ভদ্র সমাজের সুশীল মানুষ তোমরা সবাই শোন
অভাগী মায়ের গল্প বলি, কেউ কি তাকে চেনো?
দু চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে পরের ঘরে যায়,
রাত পেরিয়ে দিনের আলোয় পিলে তার চমকায়।
ছেলে না কি মস্ত বড় ইতনা অফিসার
দু হাত ভরে কামায় টাকা, ভাবনা কিসের আর?
বাপের শখে আরেক ঘরে ঠিক হয় তার বিয়ে,
মায়ের শখে ঠাঁই নিল সে দেশী ছেলে পেয়ে।
মায়ের কথা অনেক দামী, সবাই তাকে বলে
কবুল করে নিল মেয়ে স্বপ্নের জাল মেলে।
বিয়ের রাতে মেয়ের মনে লাগছে যেন খটকা,
ছেলে ভাবে এমন মেয়ে! রাখতে হবে আটকা।
দিন গড়িয়ে রাত পেরিয়ে বছর বারো মাসে
মেয়ের পেটে আলতো করে কে যেন কে হাসে?
আপন মনের চাওয়া পাওয়া কোথায় যে যায় হারিয়ে
"সোনা আমার আসবে কোলে দেখবো শুধু চেয়ে"।


মেয়ের বাপের আছে বাড়ি, আছে অনেক টাকা,
ছেলের বাপের তর সয় না, পকেট কেন ফাঁকা?
ছুতো ধরে ছেলে হঠাৎ ধরলো কষে বায়না
টাকা কড়ি না পেলে সে মেয়ে নিতে চায় না।
মেয়ের বাপের অনেক দেমাগ, কিসে আছে কম?
একটা টাকাও পাবি না তুই থাকতে আমার দম।
বাপের বাড়ী মেয়ে রেখে ছেলে গেল অফিসে
ফেরে না আর মেয়ের কাছে, জীবন হলো ফ্যাকাসে।


কানাকানি জানাজানি মেয়ের পেটে সন্তান
এখন ছেলে মুখ ঘোরালে দায় যে রাখা প্রাণ।
ভাবো সবাই, ভাবো বসে এখন কি যায় করা?
সবাই মিলে ভাবে শুধু, ভেবে ভেবেই সারা,
কারো মাথায় হঠাৎ যেন বুদ্ধি দিল ধরা-
পথের কাঁটা দূর করতে হবে শিশু মারা!
অভাগী মা সাগর জলে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে
ছুটে গেল স্বামীর কাছে, ধরলো পা জড়িয়ে।
টাকা ছাড়া হবে না হেথা তোমার ঠাই,
যেতে পারো এখন তুমি, টাকা আমার চাই।


ক্লান্ত শরীরে, শ্রান্ত মনে অভাগী ফেরে ঘরে-
বুকের কলিজা পেটের ভেতরে কেমন ছটফট করে।
কেমনে বাঁচাবে পেটে ধরা তার ছোট্ট একটা প্রাণ
আকাশটা আজ ভেংগে যেন তার হয়ে গেছে খান খান।


মেয়েটা আজ শুয়ে দ্যাখো অচেনা এক নার্সিং হোমে
ইঞ্জেকশন আর মেডিসিনের ধাক্কায় যাচ্ছে শুধু ঘেমে।  
কাঁদতে ভুলে গেছে সে, কইছে না আর কথা
দেহের চেয়ে লাগছে যেন অন্তরে বেশী ব্যাথা।
হচ্ছে কি চারপাশে জানতে সে চায় না
পৃথিবীটা যেন নরকপুরী বাকীরা সব হায়েনা।


পেটের শিশুটি ছাড়তে চায় না আপন মায়ের জঠর
অনিচ্ছাতেও ডাক্তার বাবু হয়ে ওঠেন বেশ কঠোর!!


অভাগী আজ ঢুকেছে গিয়ে অপারেশন থিয়েটারে
বিজ্ঞানের কল্যাণে নিষ্পাপ শিশুটি পেটের ভেতরেই মরে।
অভাগী মা জানে না, ছেড়ে গেছে সোনা তার চির জীবনের তরে-
শেষ ঠিকানা হয়েছে তার আজিমপুর কবরস্থানের ঘন অন্ধকার কবরে।


কেঁদো না তোমরা, বলছি আমি সেই মা কিন্তু কাঁদে নি
জীবনের পথে চলতে যেয়ে কোথাও এতটুকু বাধে নি।
নার্সের হাত ধরে শুধু বলেছিল, "বিশ্বাস করো তোমরা
বড় নিষ্পাপ আর পবিত্র ছিল আমার প্রাণের ভোমরা।
নষ্ট সমাজের কষ্টে ভরা যৌতুকের দাবী মেটাতে
সোনা আমার গেছে চলে, পারবে না তাকে ফেরাতে।
যে নরপশু টাকার লাগি কেড়েছে আমার শিশুর জান
তাকে কি আমি ছেড়ে দেবো বলো না নিয়ে তার প্রাণ"?