একুশ নিয়ে কিছু কথা
আল আমিন স্বপন


‘বন্ধুরা সব ভাবছে সবাই, সামনে আসছে ভাষা দিবস, কোথায় গেলে গাঁদাফুল পাই !  
আকাশ বললো মৃত্তিকারে, চিন্তা নাই চিন্তা নাই, ঘোষবাড়ীর আঙ্গীনাতে আছে গাঁদার সমাহার, কিন্তু একটি ভয়, ঘোষ মশাই দিন-রাত্রী ফুল বাগানে পাহাড়া দেয়। ভয় তো- একটা আছেই, ফুল তুলতে গিয়ে যদি মার খাই। রোদ্র উঠে বললো তাই, দিনের আলোয় যাব না ভাই, রাতের শেষে ভোর বেলাতে ফুলের জন্য যাব সবাই’।
যথা সময় ২০ ফেব্রুয়ারী রাতের শেষে সব বন্ধু মিলে ঘোষ বাড়ীর বাগানের সমস্ত গাঁদা ফুল তুলে নিয়ে আসা হলো। শিশিরে ভেঁজা শীতল ছোঁয়া গাঁদা ফুলের মালা আর ফুলস্তবক নিয়ে  শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসতে লাগলো। সবুজ ঘাসে নগ্ন পায়ে হেটে ফুলের তোরা নিয়ে সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালো। সবাই চুপ-চাপ, ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারী মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা করের জন্য যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল, তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাতে যুগ-যুগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই ভাবে ভালবাসা আর ফুলের পবিত্র ছোঁয়া দিয়ে আমরা আমাদের আত্মত্যাগী গুরুজনদেরকে স্মরণীয় করে রাখবো। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করে যাবো। ফুলে ফুলে গানে গানে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিয্য আচার আচরণে চিরস্মরণীয় করে রাখবো তাঁদেরকে।“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি”।
এই গানটির কথা ও সুর অমর করে রেখেছে ভাষা শহীদের একুশের অবদানের পটভূমি।
“ ছালাম ছালাম হাজার ছালাম, সকল শহীদ স্মরণে, আমার হিদয় রেখে যেতে চাই, শহীদ ভাইয়ের স্মরণে”। “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়”  এই ভাবে এক একটি গান অমর সঙ্গীত হয়ে আছে।“ মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা” এই সমস্ত গান পরিবেশনে সুরের মুর্ছনায় মুখরিত ফেব্রুয়ারী। মাসব্যপি বইমেলা, নতুন বই’র মলাট ও কবিতার ঝঙ্কারে গুঞ্জ উঠে বাংলা একাডেমির প্রঙ্গনে। গল্প, উপন্যাস, ছোটদের বই,  রম্যরচনা, ভ্রমনকাহিনী, অনুবাদ, নতুন পুরানো অগনিত বই’র সমারোহে জমে উঠে ঐতিহাসিক বাংলা একাডেমির সম্পূর্ণ চত্বর। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলি যথাযথ ভাবে পুরোটা ফেব্রুয়ারী জুরে অমর একুশের  অনুষ্ঠান প্রচার করে।স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলী যথাযথ মার্যাদার সহিত এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে জাকজমকপূর্ণ ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারী উদ্যাপন করে থাকে। ২০ ফেরুয়ারী রাত ১২টা
১ মিনিটে ঠিক একুশের প্রহরে রাষ্ট্রীয় ভাবে জাতীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী অতঃপর অন্যান্য রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি সারিবদ্ধভাবে বেদিতে ফুলের দিয়ে শহীদানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।


প্রিয় পাঠক, আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই যে, শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানানো এবং গান গেয়ে পরিবেশ গাম্ভির্য্য করে লোক সমাবেশে ভরে তোলা, এতে কি যারা দেশের জন্য এবং আমাদের ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন বা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মা বা রুহের মাগফেরাত বা শান্তি কামনা কি মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে পৌঁছে ?
আর যদি এই সমস্ত আনিষ্ঠানিকতার পাশা পাশি বাংলাদেশের প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যার যার উপসনালয়ে রিতি রেওয়াজ অনুযায়ী দোয়া বা প্রার্থণা করা হতো, তাহলে মহান স্রষ্ট্রার কাছে আরও গ্রহনযোগ্য বা আরও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো অধিক।কারণ আমাদের  সকলের উদ্দেশ্য একই যে, শহীদানদের আত্ম মর্যাদা ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা।ফুল পবিত্র সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত কিন্তু তার চেয়েও পবিত্র মহান সৃষ্টিকর্তা যিনি আমাদেরকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।তাই  তাঁর কাছেই সকল শান্তি এবং মুক্তির  জন্য প্রার্থনা করিতে হবে।আমাদের দেশের কল্যাণের জন্য আমরা যেমন প্রার্থনা করি তেমনি আমাদের ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের আত্মার শান্তির জন্য আসুন যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থনা করি।
© আল অমিন স্বপন, ১৬/০২/২০১৫