(বিঃদ্রঃ এই লেখাটির জন্য বেশ কয়েকটি বইয়ের সাহায্য নিয়েছি এখানা আমার কল্পিত কোন কথা নেই তথ্য নিয়ে শুধু নিজের মত করে খুব সংক্ষেপে সাজিয়েছি মাত্র। কয়েক পর্বে সমাপ্ত হবে। সাথে থাকবেন আশা করি)


কবিতার যে ধারা এই ধারা একেক সময়ে একেক রকম। আমরা যদি আমাদের আদি কবিতার দিকে তাকায় আমরা চর্যাপদ দেখি। তখন কার সময়ে যে কবিতা লেখা হত তা প্রায় সবসময় জীবনমুখী ছিল। যদিও তখন কার কবিরা তাদের চেতনার বিন্যাসে গোপন অভিব্যক্তির কথা লিখেছেন। সেখানে দৈনন্দিন জীবনের গল্প বলা হয়েছে খুব কৌশলে যেন অন্যরা সেটা ছুঁতে না পারে। তার পর আমাদের কবিতা হাড়িয়ে গেল দেরশো বছরের জন্য। আবার যখন ফিরে আসলো তা লেখা হয়েছে মধ্যযুগে। মধ্যযুগের কবিরা বলে গিয়েছে তখন কার প্রতাপশালী দেবী দেবতাদের গুণগান। কবিতা তখন সাধারণ মানুষের থেকে একটা শ্রেনীর জন্য হয়ে পড়েছে। মধ্য যুগের পর ষোড়স শতাব্দীতে কিছু কবি ভাষা বা নিজ ভুমির কথা লিখেছেন। যদিও সেটা খুবই নগন্য। একটু বিস্তারিত বলে নেওয়া ভালো, প্রথমে চর্যাপদের ২৪জন কবি বাংলা কাব্য সূচনা করেন। তখন সাহিত্য বলতে কবিতাকেই বোঝানো হত। তার পর দেরশো বছর বাদেআবার শুরু হয় কাব্যতা। বড়ু চন্ডিদাশের শ্রীকৃষ্ণকীর্তৃন মঙ্গলকাব্য দিয়ে আবার কবিতায় আসে এর পর একে একে বহু মঙ্গলকাব্য লেখা হয়। এর পর ব্যাপক বিস্তার লাভ করে মানুষের মুখেমুখে কবিতা। কবিতার ছন্দ নানা রঙ মিশিয়ে আয়োজন করে শোনানো হত মানুষ কে, কবিতার ছন্দে ছন্দে চলতদন্দ। দন্দ কখনো দুই জনে আবার কখনো দুই পক্ষে, যাকে এখন আমরা কবিগান হিসেবে জানি। এভাবে বহুবছর টিকে থাকালো কবিতা, কবিতার গান। এই মঙ্গলকাব্যের দেবতা গুনোগান থেকে বেড়িয়ে এসে মানুষের নিয়মিত জীবনের কথা বলে সর্ব প্রথম বৈষ্ণব পদাবলি। মধ্যযুগের শেষ দিকে কবি আলাওল কবিতা লিখেন একদমই সহজ মানুষ দের জন্য যারা নিচু শ্রেণীতে বসবাস করত। তার আগে যে কবিতা লেখা হয়েছে তাতে শব্দের ব্যাবহারের চেয়ে অর্থ মুখ্য ছিল, তিনি শব্দ শৈলী কে করেন প্রাণবন্ত। এককথায় শব্দের প্রাণ দেন। এর পর কবিতা নিয়ে কাজ খুব একটা হয়নি যা হয়েছে তা গদ্য। উনিশ শতকের প্রথম যে কবির নাম আসে সে ঈশ্বর গুপ্ত। যদিও তখন বাংলায় আধুনিক কবিতা লেখা হয় নি আধুনিকতার এক ক্ষীণ রশির দেখা মিলেছে মাত্র। ঈশ্বর গুপ্তের পরেই আসে রঙ্গলাল, সে তার থেকেও খানিকটা আধুনিক ছিল। এর পর কাব্য জগতে আসে বিরাট এক নাম যিনি শুধু কবিতায় নাসমস্ত সাহিত্যেই আনে আধুনিকতা। মধুসূদন দত্ত বাংলার এক জলন্ত নক্ষত্র। সে বাংলা কাব্যে নতুন রুপ দেয় বলা চলে বাংলা কাব্যের আদি ভূষণ ঝেড়ে নতুন পোশাক পরান। বাংলায় সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাব্য আসে তার হাত দিয়ে মেঘনাদবধকাব্য। তিনি কবিতাকে ছন্দরীতি থেকে বের করে এনে বসান প্রবাহমান অক্ষরবৃত্তে। এর পর কবিতা নিয়ে নতুন কিছু করার সাহস কেও দেখায় নি, কয়েক জন কবি হাটতে চেয়েছেন মধুসূদন এর পথে তারা মহাকাব্য লেখার চেষ্টা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম কায়কোবাদ। অন্য দিকে এক জন কবি নিজের অপূর্নতার কথা বলে গিয়েছেন নিজের মত করে তিনিবিহারীলাল। যিনি বাংলা কবিতার প্রথম রোমান্টিক কবি। তার পর যিনি বাংলা কাব্য দিয়ে বিরাট ইমারত বানান তিনি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর। যিনি একাই বাংলা কবিতা বাংলা সাহিত্যের রাজা। যাকে রোমান্টিকতার বিশ্বকবি বলা হয়। বিশ শতকের প্রথম দিকে চলছে রবিন্দ্র যুগ সেখানে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানোর মত কেও ছিল না। তখন সতেন্দ্রনাথ দত্ত যতীন্দ্রমোহন বাগচী রাকবিতা লেখে। যদিও সে কবিতায় সুর অন্য ছিল তবুও তা ছিল রবীন্দ্রপক্ষের কবিতা। সে সময় যদিও চেষ্টা ছিল বেড়িয়ে আসার তবুও তারা বাইরে আসতে পারেন, তার মধ্যে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, কাজীনজরুল ইসলাম, মোহতলাল মজুমদার অন্যতম। যার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম ই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। তখন জসিমউদ্দিন ও ভিন্ন ধারার কবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন। এখন আমরা যে আধুনিকতার কথা বলি এই আধুনিকতা আসলে শুরু হয় বিশ শতকের ত্রিশের দশকে। বাংলা কবিতা তখন রবীন্দ্র ছেড়ে বিশ্ব সাহিত্য স্থান করে নেয়। আগের কবিতা গুলো কোন শিক্ষিত মানুষ সহজেই বুঝে নিতে পাড়তো কিন্তু আধুনিক কবিদের কবিতা বোঝা দূরহ কাজ। আধুনিক কবিরা কবিতায় আবেগের চেয়ে মননশীলতা কে প্রাধান্য দেন। তাদের বলার ভাষা খুব সহজ কিন্তু অর্থ বোঝা কঠিন। তারা প্রায় সবাই ছিলেন অসম্ভব সুশিক্ষিত মানুষ।পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্য ঘুরে বেড়িয়েছেন। আধুনিক কবি বলে আমরা যাদের দেখি তাঁরা ছিলেন মহান ৫ জন। বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী। তাছারা প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সহায়তা করেছিলেন তাঁদের। এই ৫ জন কে একত্রে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়। তার মধ্যে যিনি দেবতা সমতুল্য তিনি জীবনানন্দ দাশ(তাকে নিয়ে অন্য একটি লেখায় লিখব)। এদের মধ্য অন্যতম ছিলেন বুদ্ধদেব। আর সব চেয়ে বেশি লিখেছেন বিষ্ণু দে।চলবে...