চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে
অসঙ্গত অসময়ের পরিক্রমায়
কৃত্রিমতার গতিশীল উত্থান- পণ্যের বাজারে
শিক্ষীত জনগোষ্ঠির বহুমাত্রিক বিপননে।
যান্ত্রিক সভ্যতার আধুনিক উৎকর্ষতায়
শহরময় মৃত্তিকা আচ্ছাদিত কঠিন পাষানে।
ইমারৎ, অট্টালিকা, বহুতল ভবন, সরাইখানা
আলোকসজ্জ্বিত সুপারমল, শিল্প-কারখানা
আর পীচঢালা সড়কের লংমার্চ এক সময়
গোটা শহরটাকে ঢেকে ফেলে
ইট সুড়কি পাথর সিমেন্টের কঠিন আস্তরণে!
অনাবিল প্রকৃতির সজীব সান্নিধ্য ক্রমশঃ
পাথরের নীচে হারিয়ে যায়,
সনদপত্র সর্বস্ব শিক্ষীত! নাগরিকের
নিত্য নুতন বিভোগ-বিলাসের ম্যারাথনে!
সবুজ প্রকৃতিতে হালকা বৃষ্টিতে মাটি সোঁধা গন্ধ
তাই এখন প্রজন্মের কাছে অনেকেরই অচেনা,
দৃষ্টি জুড়ে মুক্ত দীগন্ত খুব সহসা চোখে পড়েনা
ফুলে ফলে শোভিত সবুজের সমারোহ মেলা ভার!
পাথুরে সভ্যতার বর্ণিল অহমিকা
তার কৃত্রিম চাকচিক্যের অন্তরালে,
খুব স্বাচ্ছন্দে অনায়াসে হেসে খেলে
সবুজ প্রকৃতি মানবতাকে খেয়েছে গিলে।
রক্তে বিষ ছড়ানো প্রলুব্ধ উম্মাদনায়
কমিশনের কষাকষিতে নিরেট হয়েছে অন্ধকার।
শাসক শোষক শাসনের সম্ভোগে
প্রসাধনে শিল্পোন্নত হয়েছে অনাচার!
প্রকৌশলীয় প্রাক্কলনের নীল বৈভব শহরটাকে
কাযার্দেশ কড়িৎকর্মে কংক্রিটে নিয়ত দেয় ঢেকে-
অগ্রগামী সভ্যতার অত্যাধুনিক বদান্যতায়।
ভবন সজ্জ্বা, পার্ক, সড়ক দ্বীপ, প্রাসাদের সামনে
খোলা জায়গায় যে অপ্রতুল মাটি,
তাও অনুর্বর- দূষনের বিষাক্ততায়।
দূষিত মাটি আকড়ে ধরেই শেকড়ের বন্ধনে
কিছু গাছ বেঁচে থাকে বহুকষ্টের অভিযোজনে
মরে মরেও বেঁচে থাকে তব মানবকল্যাণে।
গগনচুম্বি ভবন অট্টালিকার অটল উচ্চতা
গাছের আটাশ পুরুষকে সগর্বে ছাড়িয়ে যায়,
দানবীয় অপচ্ছায়ায় সারাবেলা সূর্যালোক বাধাগ্রস্থ,
মধ্যাহ্নের প্রহরে মেলে যে সূর্যালোক একপ্রস্থ,
তাতে গাছ গাছালির বেঁচে থাকা দায়।
অদূরদর্শী অবিমৃশ্যকারী স্বেচ্ছাচারিতা অবহেলায়
বৃক্ষদের জীবন হয় বিপন্ন-অসহায়!
হররোজ হরহামেশা মাটির গভীর হতে
নিত্য প্রয়োজনে যন্ত্রদানবের জল টানাতে
মাটির যে গভীরে নেমে যায় জলের স্তর
সেখানে পৌছতে পারেনা গাছের শেকড়,
গাছের জীবনে দুঃসহ দুর্দশা জোটে।
অবাধ বৃক্ষ নিধন জীবনের সাধ আহলাদকে
ইট পাথরের চার দেয়ালে
শক্ত করে দেয় যে সেঁটে।
পলিমারের অবাধ বাণিজ্যে সয়লাব পলিথিন
ছড়িয়ে নাগরিকের হাতে হাতে
না পঁচে না গলে, মিশে যায় মাটির সাথে।
পলিথিনে আড়ষ্ট মাটিতে বিঘ্ণিত জলের
সঞ্চালন সালোক সংশ্লেষনের সাথে সাথে
বিঘ্ণিত হয় অভিস্রবন ও প্রস্বেদন।
ক্লোরোফিলের অভাবে জীর্ন হলদে
পাতারা ঝরে পড়ে বাতাসে,
ডাল পালা শুকিয়ে গাছে মড়ক লাগে,
উদার প্রকৃতির ধারক বাহক বৃক্ষরা
বিলীন হয়ে যায় অবশেষে।
মানুষরা বাড়তে থাকে ধ্বংস হয় সবুজ বন,
পাথুরে শহরে বন্ধী হয়ে
নাগরিক বেঁচে থাকে
গাটে বেঁধে কৃত্রীমতায় ক্লীষ্ট জীবন।
সবুজ অরণ্যের অভাবের ডাকে
কখনো বিরূপ প্রকৃতিকে ঝলসে দেয়
আকাশের এসিড বৃষ্টিতে,
অস্বাভাবিক হারে প্রাণীরা মরতে থাকে
প্রাণহীন মানবশূণ্য শহরে যত্রতত্র
কেবল বিক্ষিপ্ত পলিথিন- পলিমারের অনাসৃষ্টি।
দুরুহ দুঃস্বপ্নে নিদ্রাভঙ্গ নৈশব্দ মধ্যরাতে,
শিউরে ওঠা কম্পমান বিহবল আমাতে
সমজদার কে যেন আত্মপ্রত্যয়ে করে দৃঢ় পণ-
অবাধে পলিথিন ব্যবহার করবেনা আর,
নির্বিচারে ভূত্বকের জল করবেনা উত্তোলণ।
মুর্খের মত গাছ অবাধে কেটে
উজার করবেনা বন।
তুচ্ছ প্রয়োজনে পীচ পাথরে ঢেকে ফেলবেনা মাটি,
পলিথিন বর্জন করবে, পরিবেশ রাখবে পরিপাটি।
ভবন অট্টালিকার ছাদে গাছ লাগাবে,
সযতনে সবুজায়নকে করবে লালন,
ফুল ফল ফসল হাসবে সেথা গাছে গাছে,
ছাদগুলো হবে ফড়িং প্রজাপতির মুখর উদ্যান।
সবুজ স্নিগ্ধতায় প্রাণে প্রাণ সঞ্চারি
পুষ্পে পল্লবে হাসবে মানব কল্যাণ!