আজ পহেলা বৈশাখ,
শুকনো পাতাগুলি সব ঝড়ে যাক,
বাতাসে তা উড়িয়ে নিয়ে যাক নাহয়, পথের ধূলায়ই পড়ে থাক,
আমায় নতূনের মেলায় নিয়ে চল, অ রঙীলা পাখনা মেলা বৈশাখ ॥
কানাকানি ফিসফাস,
যেন ভরে গেছে, ভরে আছে চারিদিক আশপাশ,  
আর কোন কথা নাই,
যেন কেবলই তা শুনিতে পাই,
নিরব এক মাতামাতি, হৈ চৈ ও হাকডাক ॥
নেই কোন নিষেধ মানা,
আজ আর কোন, কাজ না,
শোনা যায় কত, বাজনা বাঁশী,
কোথা হতে কেমনে তারা জুটিল আসি,
শিশুদের কলরব, বাজিছে তুমুল মাতাল ঢোল ঢাক ॥
ছেড়ে আসা বিলাস ও বৈভব,
সমবেত আগামীর নাগরিক ও নেতারা সব,
এসে সবুজের সমারোহে,
দেখে সয়ে বয়ে শেখে ও কহে,
যারা মোহ ও যাদুর ঘেরে বন্দি রহে,
লেবাছ যার শুধুই সাজানো বাহার এমন নহে,
এসে এই পথে, যেন আজ হতে, আসল মানূষ হবার তারা মন্ত্র ও বল খুঁজে পাক ॥
যারা একঘরে রয়েছে হয়ে কোনঠাসা,
আছে পেরেসানি তাড়না, নেই কোন আশা,
করে দূঃখের সনে সন্ধি বেধেছে পাতার কুটিরে বাসা,
গদ্য কবিতা ব্যান্ড সংগীত ও ঝলসানো রুটির নিগূঢ় ভালবাসা,
যত ব্যার্থ প্রেমিক ও যারা আপন দোষে হয়েছে আত্বঘাতী পথহারা সর্বনাশা,
তাদের সবার কষ্ট বিষাদ আর, যাতনাগুলি সব হতাশার, আজ মুছেধূয়ে সাফ হয়ে যাক ॥
শুরু হলো আজ নব বর্ষ,
কতরুপ, শতরঙ পোষাকে ও মনে অফুরান হর্ষ,
নহে অভিনয়, কথায় ও কাজে সত্যের সনে হোক পরিচয়, আসল জীবনের স্পর্শ,
এই বছর এই প্রথম কাল দেখেছি ঘরে একটা আস্ত ইলিশ,
ছাত্র যত, সবার ভাগেরটা যেন ঠিক মত সবারে বেড়ে দিস,
যাই বলিস মামা মামা,
ছাত্রাবাসের ম্যানেজার বলে, এই ব্যাটা বাবুর্চি খানসামা,
তুইও খাবি একফালি খবরদার,
যেন টান না পড়ে, সে কথা কভূ না শুনি আর,
তোদের সবার যা হয় নতূন কাপড় কিনে নিবি, ধর এই টাকাটা রাখ ॥
কে যাবে কোন কাপড় শাড়ীটা পরিধান করে,
লাগলো ছোয়া, হলে পূরাতন চাই ভাজকরা ধোয়া, যেন এক মহা আয়োজন ঘরে ও বাহিরে,
চারিদিকে ঐ একই রব সাজ সাজ,
নব আয়োজনে, প্রকৃতি ও দেহমনে, প্রিয় নব বৈশাখ এলো আজ,
ছুটির দিন, নহে বদন ভাবনা মলিন, নেই ফেলে রাখা জমে থাকা কোন কাজ,
নেই কোন কূটিল মন্ত্রি আর সেনাপতি দাঙ্গাবাজ,
ভাবনাহীন, যেন নাই দায়ঋন, ফুরফুরে মেজাজে শূন্যে বিলীন, আমি এমন এক মহারাজ,  
কি আছে নাহয় নেই, কি ক্ষতি যদি ময়ুরপংখী নাও আকাশে ভাসিয়ে দেই, আমার কোন সিংহাসন ও শিরতাজ,
ভূতলে মাথা নূয়ে, তার চরন ছুয়ে,
ছেড়া কাঁথায় মাটিতে, ছিন্ন পাতার পাটিতে শুয়ে,
পূর্নিমার ঐ চাঁদের সনে, যে কথা ইশারায় গোপনে, হয় বলা তা নাহয় আজ আমার মনেই লুকানো থাক ॥
বৃক্ষ লতাপাতায়,
রাঙা দুহাতের ইশারায়,
নতূন ফুলের সমারোহ ও শোভায়,
নাম না জানা শত বন্ধুরা যেন ডাকে আয়,
শিশু কিশোরী কিশোর,
তরুন তরুনী আজ যেন না হতেই ভোর,
চটকদার রাঙা পোষাকের বাহার,
ভাবটা এমন যেন, কে যাবে আগে কার,
বাদ নাই কেহ বুড়ি বুড়ো,
মা মাসি কাকা পিসি মেসো খুড়ো,
বসেছে মেলা,
কুসুমপুরের বটতলা,
জমেছে কত রকমের মজার খেলা,
ভাঙবে আরও অনেক পরে, ফিরবে আজিকে দেরীতে ঘরে, অস্ত রবির বেলা,
বউ সাজনী, কত রকম খেলনা মেওয়া,
তরুণ তরুনীর ভালবাসার, ক্ষুদে উপহার দেওয়া নেওয়া,
কত বেলুন বাঁশী,
মনেহয় যেন ফাটায় বাজায় তারা কানের কাছে আসি,
কত পল্লী ললনা ষোড়ষী রুপসী বালা,
সাজিয়ে যেন অপরুপ তার রুপ আর রঙের বাহারী ডালা,
চোখ ফিরানো যায়না, লাল ফিতার বিনূনী জড়ানো ঝুলানো তাজা ফুলের মালা,
মিশে গোপনে, জনতার কাফেলার সনে,
চৌদিক হতে পায়ে চলা পথে, কি নেব আমি রুপের ঢল নিরুপনে,
দেখেছি মোর দুনয়নে, কুড়ি কি দ্বিগুনে, কালো বলে কেউ নেই, কিবা নহে কেহ শ্যামলা,  
কত স্মৃতি লয়ে, কালের স্বাক্ষী হয়ে, রয়েছে দাড়িয়ে, ঐ সে কদম গাছ ও তিন পথের বিজন বাঁক ॥
সবুজ গাঁয়ের কোল ঘেষে,
কেউ নেই যেন ঘরে বসে, জমেছে সবাই আপন আমোদে এসে,
ঐ সে সোনার গাঁও, একটা ছোট্ট ডিঙি নাও আর সালদা নদী,
মন ভরে দেখিতাম, কতকি পেতাম, আর লেখিতাম, তা আমার হতো যদি,  
বাঙলা মায়ের লতাগুল্ম কত গাছ গাছালী,
তাল মিলিয়ে সেজেছে যেন বনের যত পাখপাখালী,
এক পসলা বৃষ্টি এসে সেদিন দিয়ে গেছে ধূয়ে ফুল পাতাগুলি জল ঢালি,
যত বিষন্ন মন কত সুখ পেত,
মনের যত কালিমা দীনতা হয়ত ধূয়েমুছে যেত,
মনে চাহিলে এক বৈশাখে, যখন প্রকৃতি ওরে অনূরাগে ডাকে, মোর গায়ে এসে সে রুপ দুহাতে তোর গায়েতে মাখ  ॥
শিমুল কৃঞ্চচূড়া ও শত বৃক্ষ শাখা,
নতূন লতা পাতা ও ফুলেতে ভরেছে পড়েছে ঢাকা,
প্রকৃতির সাত রঙ কানায় কানায় ভরা উপচে পড়া ছবি আঁকা,
বাসান্তি রঙ শোভা ও সে যাদুর মায়া মনোলোভা তার সারা গায়েতে মাখা,  
গাছের ছায়ায় পথের ধূলায় যেন অনাদরে আছে পড়ে, কত সুধা হায় ঢেলে থুয়ে রাখা,
সাজিয়ে পসরা বেঁচাকেনায় দোকানী ব্যাস্ত থাকা, সে কেমন আছে মেলায় যার সংগী নাই পকেটে টাকা,
তবু ইচ্ছে করেই তাহারে, শত রুপ বাহারে, চোখ ও মন ভরে বারেবারে ঘূরে ঘূরে যেন দেখিলাম দুই তিন পাক ॥
উগ্র চর্চিত বাজনা ও গান,
কারো মন ভরে দেয়, কারো ঝালায় দুটি কান,
গহীনের ধ্যান কেড়ে নেয়, কারো মেজাজ তেতো করে দেয়, আমার  কাগজ কলমখান,
সবাই রয়েছে দারুন খুশীতে মাতি,
তারাইতো সর্বহারা, ঠিকানাহীন, আকাশ যাদের ছাউনি ছাতি,
কত পঙ্গু মানূষ ভিখারী, রাস্তার পাশে দাড়িয়ে সারিসারি, চোখের ভাষায়, কি যেন চায়, তার হাত বাড়িয়ে থালাখানা পাতি,
ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা এসো হে বৈশাখ,
বারমজার খাবারে ভরা ঘর, আমার নতূন জামাকাপড়, সাধ বিণোদন এবার নাহয় থাক,
তাদের তরে দিয়ে যাও ওরে, উড়িয়ে ছড়িয়ে, সারা গায় ভরিয়ে, সোনালী ভাগ্যকণা একরাশ একঝাক ॥