পর্ব – ০১


দেখি আর হাতে বেশী সময় নাই,
কি করি এখন কোথা পাবো আমি নিরাপদ ঠাই,
বড় অস্থীর ও পেরেশান হলো মন, আমি ওরে তবে কোনদিকে যাই,
সহজ সুযোগগুলি মনেহয় সব হয়ে গেছে শেষ, মহাবিপদে যারা করে বিদ্যা, বিত্ত, রুপ ও ক্ষমতার বড়াই,
বিলম্বে হলেও বুঝিলাম ওরে হায় যখন, চিনিলাম নিজেকে আর আমার আল্লাহ ও রাসুল ।
কতযে মিথ্যা,
বালামে লেখা হয়ে গেছে যা,
কেমনে খোদার ঐ খাতা হতে আমি মুছে দেবো তা,
কোনটা ভাল আর কোনটাযে মন্দ,
থেকেও দুখানা চোখ কেমনে আমি হয়ে গেছিলাম যেন একেবারে অন্ধ,
করেছি আমার আপন বিবেকের উপর কত অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অপরাধ আর ভুল ।
হয়েও সৃষ্টির সেরা ও উত্তম,
কেমনে কবে হলেম আমি এত তুচ্ছ, কমদামী, নগণ্য ও অধম,
এ কোন নষ্ট খেয়াল ও ভ্রষ্ট মতি,
জেনে-বুঝে আমি নিজেই আমার, করে চলেছি অবিরাম ক্ষতি,
না বাড়িয়ে জীবন, নিত্য শুধু বাড়াতেই ধন এত কৌশল আর এগিয়ে চলার ঐ প্রচন্ড গতি,
এতকিছু পেয়েও শুধু নাই নাই, কেন আরও চাই ও ভাবি শুধু সবার এত বেশী আর কেন আমার এত কম ।
হে বিশ্ব পালক ও দাতা থেকেও ভান্ডারে তোমার,
এই প্রশ্ন আমার মত দুনিয়ার যত অগণিত অবহেলিত অসহায় অভাগার,
কভু উনা হয়না ও চির নিশ্চিত তা হবেনা জানা ধন-রতন যার এমনই অসীম, অপার ও অতুল ।
কেন চাহিলেও দেওনা,
দিলেও তা ছিড়ে ছিড়ে কম কম কেন জানিনা,
কেউ হরষে করে অপচয়, কারো খেয়ে পেট ভরেনা ও প্রয়োজন মিটেনা,
কারেও দাও এমন ঢেলে যেন উপচে পড়ে যায়, তারা যেন দেয় ফেলে হেন দুহাতে উড়ায়, কেন এমন তার ভেদ বুঝিনা ।
মনেহয় যেন তারা অনায়াসে বিনা চেষ্টায়,
দেখি কেউ না চেয়েও যত তার প্রয়োজন, তারচেয়ে ঢের বেশী পায়,    
হাত পেতে কেঁদে কেঁদে চায় ও বুক ভাসায়, তবু তারে করোনা মানা,
নিরাশ হতে করেছ নিষেধ, তাইকি ওরে ফিরিয়ে বা তাড়িয়েও দাওনা,
এমনইতো মনেহয় যেন তারা যোগ্য নয়,
তবু মুঠ করে ছাই ধরিলেও তারা দেখি যেন সোনা হয়,
সত্য সঠিক পথেও নয়, নেই প্রয়োজন যাদের এত বিত্ত-ধন তাদের কারোকারো দেখি যেন এমনই প্রতুল ।
অচিন এক দেশ পরম সুন্দর,
ক্ষেতিচাষ ও বানিজ্য বসতির মাত্র দুইদিনের সফর,
যতই বিত্ত-ধন, টাকার পাহাড় ও বিশাল সুরম্য বাড়ী-ঘর সবাইতো মুসাফির যাযাবর,
বরফের প্রাসাদ গড়েছি একবারও ভাবিনি ও বুঝিনি তা মরু বালুচর,
ভুল ভাংগিল যখন বুঝিল মন তখন, ভেবে দেখেছি সামনে-পিছে যতকিছু সব আসলে মিছে ও সকলেই পর,  
তবুও মানুষ যায় ও আসে,
রঙমাখানো দুদিনের এই পরবাসে,
বিত্ত-ধন, বিলাস, বিবি ও সন্তানগণেরে কত ভালবাসে,
কোন মোহে তবু তারা এত বিভোর মশগুল,
যদিও তারা দিশাহারা কেউ সুখের কেউবা দুঃখের বেসামাল জোয়ারে ভাসে, যেই দরিয়ার নেইযে কূল ।  


পর্ব – ০২


কারো কষ্ট, বেদন ও হাহাকার,
যার শেষ নেই যেন তাড়না সেই, অনটন, পেরেশানি, যাতনা ও ভাবনার,
কারো রান্নাঘর, ফ্রিজে ও টেবিলে সাজানো কত খাবার,
দেখি বলে ধনীগণ, রুচি নেই খেতে চাহেনা তাদের মন, এমনই তোমার এ মহাবিশ্বটার সৃজন বাহার,
মাথায় ও দেমাগে আমার ঐ ভাবনার ভীষণ ভার, সাধ্য কার তা বুঝিবার তোমার অপার সৃষ্টির ঐ ভেদ মূল ।  
ফেলে রেখে শত কাজ ও অগণিত দায়,
চাই আরও ধন, ভোগ-বিলাস ও বিনোদন মোহে দিন চলে যায়,
কি লবে সামান কে হবে সংগী নাই কেনরে হায়,
কই গাড়ী কোথা গাড়োয়ান, তার বাড়ী ফিরে যাবার আয়োজন গোঁধূলী অস্ত বেলায় ।
কি আশায় কেন এ দুনিয়ায়,
মানুষ সৃজন ওরে করিল দয়াময় বিধাতায়,
স্রষ্টা, প্রভু ও দাতা মহাজন,
সপ্ত আকাশ ও সাত জমিনের মালিক শুধু সে একজন,
ষোলআনা তার হুকুমজারির অপেক্ষায়, নাই যার হয়না কভু কোনকিছুর প্রয়োজন,
ঐ খোদায়, জানা দরকার সবইতো তার অঢেল আছে, তবে তার গোলামের কাছে কি সে কেনইবা চায় ।
শুধু দান করে ও বিলায়,
ওরে কিছু নাহিতো কভু সে নিজে খায়,
মহাজগতের মহাপরিবার, অগণিত পোষ্য তার নিজেই খাওয়ায়,
মোহতাজ এ জগত রয়েছে তার করুণার আশায়, এক মহারাজ যত দান ও নেয়ামত দিয়েছে বিলায় ।
সাধ্য কার পালক কেউতো নাহি আর,
আকাশ, মাটি ও জলের সব বাসিন্দারই একক জিম্মাদার,
একেক জীবের একেক খানা,
কেউ যেন কারোটা কভু কেড়ে নিয়ে খায়না,
কে বানালো তার রকম হাজার, তাই আমরণ নিত্যকার অযুত মজার নিযুত খাবার যোগানদার যত ফল-ফুল ।
আমি কি গাহিব তার শোভা,
হেরিয়া ঐ অপরুপ বিস্ময় যেন আমি হয়ে গেছি বোবা,
ফটিক স্বচ্ছ ও পরিমল,
থইথই অথই আকাশের রঙ মাখানো জল,
বিল-ঝিল ভরা করিছে সারাক্ষণ যেন টলমল ঝিলমিল ও ছলছল,
পাখীদের ঘুরাঘুরি, ডালে বসে পলকে আবার যায় উড়ি করে কলতান, কলরব ও কোলাহল ।
সাজানো এ ভূবন,
ষোড়শী কোন এক রুপসীর মতন,
কাজল আঁকা যেন ইশারায় কাছে ডাকা ঐ দুটি বাঁকা নয়ন,
লতা ও পাতার ঝোপ-ঝাড় সমতল কিবা পাহাড় ঘেরা বন,
আলতা রাংগা ভাজে ভাজে ছোট-বড় ঢেউ ভাংগা, জিরায় না কিছুক্ষণ দুখানা চপল চরণ,
দুরন্ত চঞ্চল নীল-সবুজের বিছানো আঁচল কোমল ও তুলতুল আর বিশ্ব ব্যাপিয়া ছড়ানো তার দীঘল কালো চুল ।
কোথাও আবার দেখি ছিন্ন বসন,
সারাক্ষণ যেন কারা করিছে কি কারণ অস্ফুট ক্রন্দন,
কেউ নেই ঐ কান্নার জল মুছে দেবার, তাই বুঝি কভু ভিজেনা তাদের ব্যথিত নয়ন,
বাড়ী-ঘর নাই বলো কে দেবে ঠাই, বুঝি তাই খোলা ঐ আসমানই তাদের জীবনের করুণ অভাগা আবাসন ।


পর্ব – ০৩


এই যদি হয় তবে হায়,
তারা কেমনে ওরে কোথা হতে পায়,
চরণে জড়ির জুতো ও রেশমী পোষাক তাদের গায়,
অল্প আলোকে উঠে চমকে, ঝিরঝির বাতাসে যার খুশবো ছড়ায়,
অতিব মিহি চিকন চালের ভাত কেমনে ওরে, সারা বছর জুড়েই তারা পাতভরে খায়,
তুলতুলে কোমল তাজা ফুলের পাপড়ি দল বিছানো বিছানায়, ঘুমায় যারা স্বপ্নীল পরশ ছোয়ায়,
কোমড়ে বিছা ও দুপায়ে নূপুর বাজিছে ঝুমুর, বাজুতে ভূষণ, দুহাতে, গলায় ও কানে কি শোভায় দুলছে সোনার দুল ।
চক্ষু মেলে দেখে,
কি লাভ দায়গুলি বাকী ফেলে রেখে,
ওরে পাঠ করে করে ও শুনে শুনে কতজনে বিপুল শেখে,
এটাওতো হতে পারে সেরা কোন ভাল কাজ, যারা ভাল কথা বলে আর ভাল কিছু লেখে ।
সত্য কহে, সহে ও বহে,
এমনি করেই যারা সবকিছু জেনেবুঝে লহে,
শুধু তারাই জানে কিবা খুঁজে বেড়ায় তার সন্ধানে, এ জীবন সময় ও পথ নহেতো কভু হয় বিছানো ফুল ।
পড়ে গিয়ে আবার উঠে হন্তদন্ত ছুটছে উল্টো পথে,
তারা সবে পাগলপারা মিথ্যা, মন্দ, মোহ আর ভুল ও আমূল এক ভ্রান্ত মতে,
কার আগে কে যাবে আর সবার চেয়ে বেশী পাবে, কেউ চড়ে ও কেউবা চড়তে শুধু ঐ সোনার রথে ।
উঠেছে আকুল বাসনায় মেতে,
কব্জি ও নাক ডুবিয়ে বারো মাসের তেরো মজা খেতে,
যে দেশে ওরে সবাই রাজা,
ভোগ-বিলাস ও বিনোদন আছে তবে নাই কোন বিচার ও সাজা,
ঝর্ণা, বনানী ও পাহাড়, রয়েছে অপার সুখ সম্ভার, নীলাকাশ ছুয়েছে মাটি যার চাহে ঐ শান্তিপুরে যেতে ।
না খুঁজে ও না ভেবে যারা,
ভোগের মোহেতে আকুল আজও দিশাহারা,
বুঝি তাদের ঐ জানা,
হয়নি সমাপন কেন দরশন, ভাবনা কি ধারণা,
তবে কি সবই ভুল, কে আমি আর কোনটা চলার পথ আমার ও কোনদিকে পার কিবা এ জীবনের মূল ।  
এ জীবন নহেতো উজানে যায়,
কাজগুলি সব না করে আর বাকী রেখে সব দায়,
কোমল মসৃন পথ কেমনে তবে তারা পেতে চায়,
হয়তো আর হবেনা যেথা প্রভাত,
ছুটাছুটি পেরেশান, পরম নিদান ও ভয়ংকর যম ঐ সে আখেরাত,
অচিন দেশ, অচেনা তেপান্তর, মাঠ ও পথ-ঘাট,
কেউ নাই সাথে আর কোন সম্বলও হাতে, গহীন অন্ধকার অনেক বড় ঐ রাত ।
কেড়ে নেবে খোদায় ও শেষ হবে যখন,
সোনার তলোয়ার, সেনাপতি, প্রাসাদ, হিরার মুকুট, রাজ্য ও সিংহাসন,
তান্ডব, তছনছ, ছারখার, হুংকার ও গর্জন,
যত বাহাদুরি ও বড়াই, কেউ নাই আর কিছু নাই, হায়দরি হাক, বাহুবল ও দুনিয়ার ঐ অনেক লম্বাহাত ।
কেমনে ওরে তবে,
বলো তারা সবে পার হবে,
শুধু নহে ঐ উথাল পাতাল দরিয়া অকূল, আরও আছে কঠিন মিজান ও অদৃশ্যমান পুলসেরাত এর পুল ।  


পর্ব – ০৪


ধনী গরীবের এই ব্যাবধান,
কাউকে কম কাউকে বেশী ধন, সুখ ও সম্মান,
মিথ্যে নয় এ সবইতো নিশ্চয় বিধি, তোমারই করুণার দান,
ধন-জন ও জীবন-মরণের একক মালিক তুমিযে বড়ই মহান ও মেহেরবান ।
জানি তা ইচ্ছা করেই করেন মহারাজায়,
দিয়ে ঠেলে আপদ ও নিদানে ফেলে শেষে টেনে তুলে দুঃক্ষ-কষ্টের নানান পরীক্ষায়,
দিয়ে, না দিয়ে কিবা দেওয়া ধন কেড়ে নিয়ে হয়তো মহাজন বান্দারে তার বারবার যাচাই ও পরখ করিতে চায় ।
কাউকে বেশী ও কেউরে কম,
এইতো ওরে তার যাচাই বাছাই ও পরীক্ষার নিয়ম,
কেজানে তা কিনা খোদার,
এইতো বিচার, বান্দার প্রতি তাদের করা সকল পাপ-পুণ্যটার,
যত মিথ্যা, মন্দ, অপরাধ আর ভুলগুলি সবার দিয়ে নায্য সঠিক শাস্তি-পুরস্কার ও তার উচিৎ পাওনা মাসুল ।
কারেও শাস্তি দিতে নয়,
অসীম করুণা ও ক্ষমাই তার আসল ও বড় পরিচয়,
বিচক্ষণ ও বিশ্বাসীগণই বুঝি তাই মহারাজার সনে গোপনে এক ভাব জমিয়ে লয় ।
মরতে যখন হবেই,
পালাবার কোন জায়গা বা সুযোগওতো নেই,
বিচারের পরে শাস্তিটাও তার সেই, উপায় কি তবে আর না করে বশ্যতা, মান্যতা ও ভয় ।
তারাই ওরে সফল নিশ্চয়,
মন্দ ভালোতে সব হালতে, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়,
যাই হোক পাওয়া না পাওয়া কিবা হারানোয় খোদার প্রতি সদা’ই যারা খোশ, সন্তুষ্ট ও অনুগত রয় ।
কেন বুঝিবেনা লেনা-দেনার ঐ দায়,
এ জীবন, ধন-জন ও যতকিছু প্রয়োজন বলো কি দেয়নি খোদায়,
তার মূল্যতো নয়, ওরে একটুখানি শুধু বিনিময়, সামাণ্য যাহা সে চায় সে কি ওরে খুব বেশী হয়ে যায় ।
মহাজন আদায় করিতে চান,
সবটুকু নয় সুদাসলে গোলামের কাছে যাহা সে পান,
একক ক্ষমতা ও মালিকানায় তার বড়ত্ব আর সে মহত্বের জয়ধ্বনি ও গুণগান,
সকল জীবেই দিচ্ছে যার সত্য প্রমাণ তারই প্রকাশ, প্রচার ও বয়ান, এমনি করেই তার মহাদাদনের অল্প উসুল ।
না পড়ে যেন তার সনে যোগাযোগের ছেদ,
নিশ্চয় আছে এই পাওয়া না পাওয়ার একটা কোন গুরু রহস্য ভেদ,
তবু নিওনা মনে কোন কষ্ট, ক্ষোভ, হিংসা, মোহ, লোভ, অভিযোগ, অভিমান কিবা সামাণ্য ক্ষেদ ।
ধর্য্য ধরো, আশায় থাকো ও করো সবর,
পাবে প্রমাণ ও পরিচয় দেখোনা কি হয় বা কি ঘটে তারপর,
সত্য বলো সুপথে চলো একদিন, শোধ হবেই তব সব ঋন, পাবেই পাবে সহসা সে খবর,
তার পুরস্কার না পেলেও এ দুনিয়ায়, তা দেখবে নিজের চোখে পাবে আপন হাতে অচেনা ঐ আখেরাতে যাবার পর ।   ।
বানিয়ে হাওয়া ও আদম,
খোদ খোদায় দিলেন তাদের ভিতরে ফুঁক ও দম,
সেথা হতে না চেয়ে পাওয়া এই রুহ, চলছে চলবে বিধাতার মানব সৃষ্টির এ নিয়ম ।
কোরআনের সব বাণী খোদারই বচন,
আমি তা নিশ্চিত জানি, মিথ্যে হয়না যা কভু আর হবেনারে কখন,
সত্য চিরন্তন,
মানুষের কভু হয়না ওরে হবেনা মরণ,
রুহটাই এ জীবনের প্রাণ, মেহেরবান খোদার সত্তা ও তার মহান দান, রাখিও তোমরা তা সকলে স্বরণ ।


পর্ব – ০৫


অনেক কাজ তার, অতি ব্যস্ত সে সারাক্ষণ,
বান্দার সবকিছু দেখা, বালামে লেখা, ছবি তোলা ও কথাগুলি সব করা সংরক্ষণ,
লাগেনা তার কোন ধোলাই বা মেরামত কখন,
যতই মানুষ করুক পাপ আর হোকনা কেন তার উপর জুলুম ও নির্যাতন,
আজব এক কল হয়না হবেনা বিকল, সব কাজ শেষ হলে চুপিসারে নিমেষে করে সে আকাশে গমন ।
অতিশয় ক্ষুদ্র ও নিরাকার এমন,
সাধ্য নাহি কার খবর পায় তার আসা-যাওয়ার কিবা কভু করে দরশন,
দিতে ফলাফল দুনিয়ার সহস্র পরীক্ষার পর,
সে পুরস্কার মনোরম ও সুন্দর আর শাস্তি তার বিভৎস ও মহাভয়ংকর,
হবে যত বিশ্বাসী, অনুগত ও পাস করা আর অবিশ্বাসী, অবাধ্য, খেলাপী ও ফেলকারীর উপর,
মরণ সেযে আসলে মানব জীবনের এক অভিনব রুপান্তর, অচিন এক ভিন্ন দেশ আখেরাত এ নতুন সফর ।
শতভাগ মুক্ত ও স্বাধীন,
ঐ হর্ষ, বিলাস ও ভোগ-বিনোদন হবে অন্তহীন,
আর নাই কোন কাজ, কোন দায়, কষ্ট-বেদনা, ভাবনা ও পেরেশানি কিবা ঋন ।
ঝর্ণা, পাহাড়, ঝিল ও বাগানের,
রয়েছে চৌদিকে যার নীল-সবুজের সমাহার অসীম সীমাণার ঘের,
অগণিত ফুল ও ফল আর অপরুপ সে মেলা নাঁচন খেলা সাতরঙ সুন্দর গানের পাখীদের,
মধুর কলতানে ঐ মোহ আবেশে মুখর ও সদা মনোহর,
ছেড়ে যেতে কেউ কভু বলবেনা আর, অপরুপ সুন্দর চিরস্থায়ী মালিকানার সুবিশাল ঐ সে প্রাসাদ বাড়ী-ঘর ।
এখন না বুঝিলে আর বুঝিবে কোনদিন,  
দিলো যে রাজায় এত সুখ-মজার আজব এক জীবন মৃত্যুহীন,
এতবড় দান কিবা তার সে পরম পাওয়ারও কেন দিতে হবেনা বিনিময় ও রবেনা কোন ঋন ।
সে জানিবে আছে যার তৃতীয় নয়ন,
নাহলে কেন মাটির মানুষের, মাটিতে এই দুদিনের জীবন,
মরণতো আসলে নেই ওরে, তার নামে সে যে এক মজার খেলা নিছক গহীন প্রহসন ।
যাই হোক তাই তারপর,
কারো বসতি হবে আগুনের কারাগার যেথা শাস্তি ভয়ংকর,
আর কারো ভাগ্যে হবে, ভালকাজ যারা করেছিল ভবে, পরম শান্তি-সুখের সে জীবন অপরুপ সুন্দর ।
যার যেমন ওরে চাহে তার মন,
যেথা ঐ ভোগ-বিলাস ও বিনোদন, যা হবে ও রবে অনন্ত অফুরন,
যা বলা তাই হবে, আর তা লাভ করিবে শুধু তার বিশ্বাসী ও অনুগত ভাগ্যবান গোলামগণ ।
কেউ করুক বা না করুক শ্রবণ, বিশ্বাস ও পালন,
আকাশবাণীর চিরসত্য ঐ কথাগুলি যা আমি এখানে করেছি বর্ণন,
হতে পারে প্রয়োজন রাত্রি জাগি, মনের সহন ও বহনের লাগি অধ্যবসায় ও প্রশিক্ষণ,
মরণ না হলেও ছেড়েতো যেতেই হবে এ ভূবন, ফেলে রেখে সকল প্রিয়জন ও যত সব বিত্ত-বেসাত ধন ।
এইতো মাটির দুনিয়ার এ জীবন,
দেখেছি অনেক সময় অনেক সত্যই হয় বড়ই কঠিন ও নির্মম এমন,
সত্য চিরন্তন, মরণের পরে সব ঘটন যার ভাগ্যে তার কর্মে হবে যেমন সবে তা করিবেই করিবে দরশন ।
ডুবেনা, নাই কোন সত্যের পরাজয়,
খোদায় যদি একবার কোন তার গোলামের উপর রাজী-খুশী হয়,
ডুবিলেও আবার তা উঠে ভেসে, হাজার বছরেও পচেনা ভূতলে জলে রহে তা চির অক্ষয় ।


পর্ব – ০৬


দুনিয়ার কত মানুষ নবী,
হয়ে রয়েছেন কোরআন হাদীসের ইতিহাস ও সত্য গল্প-ছবি,
আল্লাহর হুকুম ও কুদরতে সবইযে হয়,
কিছু নাস্তিক ও অবিশ্বাসীদের কাছে তা মিথ্যা মনে হলেও আসলে নয়,
সশরীরে যে বস্ত্র ছিল তার পরিধানে, তাই লয়ে করেছেন আসমানে জীবন্ত ভ্রমণ ছেড়ে স্বজাতি ও লোকালয় ।
প্রয়োজনে সব সাগরের জল শুকাবে,
অতি সভ্যতার উন্নত আধুনিক দেশ ও জাতি নিমেষে ভূতলে উল্টে যাবে,
ক্ষুদ্র আবাবিল পাখী অনেক উপরে থাকি, বিশাল ও দক্ষ বাহিনীকে নিশ্চিত অতি সহজে পলকে হারাবে,  
জেনে রাখো ওরে হলেও দুদিন পরে সত্যেরই জয় হবে,
হোক ক্ষুদ্র পুণ্য তবু সে অনন্য শির উঁচু করে মহাকাল অক্ষত ও অক্ষয় দাড়িয়ে রবে,
খোদার ফরমান নড়বেনা একচুল, মনে হলেও অজ্ঞ ও দূর্বল চির অটল সত্য ও পুণ্যের ঐ মিনার বা মাস্তুল ।
তুমি যদি মন্দের দোষে পড়ে অন্ধ না হও,
বিবেকেরে প্রশ্ন করো আর, তারপর ঐ সত্য কথাটা সবারে কও,
আলো ও ভালোর দিশারী দলপতি ও সেনাপতি হয়ে ঐ ঝান্ডাটা এখুনি ওরে হাতে তুলে লও ।
দিতে হবে হে বিদ্যান তোমাকে উত্তর,
স্বেচ্ছা নির্বাসনে কেন ওরে গিয়ে তারা দলেদলে হচ্ছে সবে যাযাবর,
আর কি পথ ছিলনা তবে, ভাল মানুষেরা কোণঠাসা কিবা ফেলে স্বজন ও ছেড়ে তাদের বাড়ী-ঘর ।
এখন তবে একটু ভেবে বলো সবে কোনটা মানুষ,
দাপিয়ে বেড়ানো ও উদ্ধত ঘুরা আর হরষে আকাশে উড়া ঐ দেহটা হয়ে এক রঙীন ফানুস,
দেয়না বাধা করেনা বারণ তবু সাবধান,
যদিও এখন সদা চুপ করে রয়, পরে দিবে সব সত্যের সাক্ষ্য প্রমাণ,  
নাকি সচল দেহটার ভিতর যে দেয় সকল বলের যোগান অচেনা অদেখা ঐ প্রশান্ত মহাপ্রাণ,
যারা আপন খেয়ালে চলে, গোচরে অগোচরে সদা করে মন্দ আর কেউ চাহে তার হোক অবসান ।
স্রষ্টা, পালক, প্রভু ও ঈশ্বর,
কেনরে বেছে নিল সে গোলামের জীর্ণ ঘর,
এবার বলো কে বড়, ঐ রুহ কেন হয় চির অক্ষয় ও চির অমর,
গোপনে আসে ও যায় আর যেথা নিরবে লুকিয়ে থাকে নির্বাক মহাজন, ঐ মাটির দেহটা নিথর ।
নিঃস্ব, অসহায় ও দূর্বলের দল তাদের ভয়ে মরে,
রাতটাকে যারা ইচ্ছে মতন গায়ের জোরে, ঝলমলে বাতি জ্বেলে দিবস করে,
মনে নেই, হঠাৎ একদিন যাবে মরে দুদিন পরে,
রাজার ঘরে নিজেরে দেনায় ভরে কি লাভ ওরে সুরম্য হেরেম গড়ে বালুচরে,
ঐ বুঝি আসিছে হিংস্র, বন্য ও বৈরী বর্গীর দল লয়ে বর্শা, বল্লম ও শাবল হয়ে ত্রাসের তান্ডব ঝড় ।
রাজার বেটাতো নয়, রাজ সিপাহী ও নফর,
তাদের ভয়েই জানিনা কেন প্রজারা যেন, দিন কিবা রাতভর সারা বছর কাঁপে থরথর,
সে কারণে বুঝি একের দেখাদেখি ভাই,
অন্যরা যেন পাচ্ছে সাহস ঐ প্রেরণা আর হচ্ছেও ঠিক তাই,  
কেন এ রাজার দেশে ন্যায় বিচার ও রুই-কাতলের অপরাধের কোন সাজা নাই,
একেতো পুকুর চুরি পরের ধনে পোদ্দারি তার উপর বড় গলার সিনাজুড়ি ও কতনা বাহাদুরি বড়াই,
যত চামচা ও চাটুকার হয়েছে প্রধান ও সরদার, আমলা ও বিচারক অবিচারি, পক্ষপাতি, জুলুমবাজ ও স্বার্থপর ।
এইতো আমার মহান খোদার বিধান ও কাম,
এগিয়ে নিতে আসবে সব ফেরেস্তারা হবে আয়োজন ও ধুমধাম,
আরশের সবার পক্ষ থেকে জানাবে তারা শুভেচ্ছা স্বাগতম ও সালাম,
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এই মানুষের লাগি, কেনরে খোদায় বানালো সাতটি জাহান্নাম,
ভালমানুষ শ্রেষ্ঠ গোলামেরে তার এই ছিল অংগীকার দিবেন সেরা পুরস্কার ও দাম,
কি লাভ হবেরে খোদার ভরে গিয়ে সবগুলি জাহান্নাম, শূন্য রলে পড়ে বেহেস্তগুলি তামাম,
জান্নাতে পাঠাবেন আল্লাহ তার, খাস কুটুমদেরে মোখ দেখে আর ডেকে ডেকে ঐ দাওয়াতি তালিকার নাম ।


পর্ব – ০৭


যারা একবার হয়ে গেছে খোদার প্রিয় সাম,
শোকর, সবর ও ক্ষুদ্র ভাল কথায় ও কাজে লভেছে দুনিয়ায় পুণ্য ও সুনাম,
কেজানে সে আখেরাতে,
আরও কত কি পুরস্কার পাবে তার হাতে,
ভাবতে পারো মহারাজ কুটুমের, কেমন হতে পারে সমাদর ও কতবা দাম,
হলে তাই যেথা নেই কোন নিষেধ বারণ কিছুই মন্দ বা হারাম,
হয়ে সেবাদাসী অগণিত ষোড়শী রুপসী চারপাশে ঘুরঘুর করবে আসি, কতনা সে বিনোদন ও সুখ-আরাম ।
ইশারায় চপল ও চতুর অস্ফট আহবান,
হেলেদুলে নুয়ে পড়া দেহটা আমোদে ও আহলাদে আটখান,
স্বচ্ছ রেশমী বসনে ভিতরে লুকানো গোপনে অপরুপ শোভাগুলি স্পষ্টত হবে দৃশ্যমান,  
কাছে পেতে ও সোহাগে দুহাতে জড়াতে সে কোন শিহরণ নয়ন ও দেহ-মন হয়ে উঠে চঞ্চল ও আনচান ।
একটু দানের এত বড় বিনিময় ও প্রতিদান,
বুঝেছি রাজার সনে ভাব হলে গোপনে, গোলাম প্রজাই হয় বেশী লাভবান,
হলো বুঝি ওরে তাই, সাতরঙে রাংগা ও একেবারে চাংগা চনমনে টানটান,  
নাহলে কেমনে আজিকে এ ক্ষণে বিষন্নতা ও ক্লান্তি ঝেড়ে অনটন পেরেশানি ও ভাবনার ফেরে পোড়া দেহখান,
বিশ্বাস মান্যতা বিনয় ভক্তি শ্রদ্ধা নির্ভরতা ও ভয় দিয়ে গড়া ভালবাসার কত দাম,  
অসহায় জনে করে সামাণ্য দান, জিকির, জবানে বয়ান ও গভীর মননের ফিকির ঝড়িয়ে মাথার একফোটা ঘাম ।
আমিও তাই করছি তা প্রকাশ ও প্রচার,
জিন ও ইনসানের লাগি যে পুরস্কারের ঘোষনা ছিল দয়াময় দাতা বিধাতার,
পাক কোরআনের বাণী মতে, ঐ সে কঠিন আখেরাতে তার নেক বান্দাদের যা হবে সওগাত তারই পয়গাম ।
মানুষ কেমনে আজও রহিল বেখবর,
সভ্যতা, বিজ্ঞান ও আধুনিকতার হলেও পার সহস্র শতাব্দী পর,
কেন আবার তারা হতে চলেছে যেন সেই আগের মতই হিংস্র, বন্য, অসভ্য, নিষ্ঠুর ও বর্বর,
এবার ওরে তবে ভাই, সকলে ভেবে দেখো তাই, যতই তুমি হওনা কেন বিদ্যান, বিত্তশালী কিবা ক্ষমতাধর,
আছে কিবা নাই জানা তোমার, দুনিয়ায় মানুষ সকল জীবের শ্রেষ্ঠ হওয়া আর, আখেরাতে পাস করিবার সূত্র ও মন্ত্রগুলির মূল ।