পর্ব – ০১


বদলে গেছে মানুষ,
উড়ছে হয়ে ফানুস,
মিথ্যা, মন্দ ও রঙের যেন নাই শেষ,
সবারই দেখি যেন মুখোশ ও বহুরুপী এক বাহারী ছদ্দবেশ,
বদলে হয়েছে এমনই কঠিন, সে যেন এক অচেনা রঙীন চমকিত পরিবেশ,
জীবন ও দিন প্রতিক্ষণে যার অতিব দ্রুত বাড়িছে ঋন, ক্ষিপ্র গতিময় হাতের বাঁকী সামাণ্য সময় ।
কালো কালো ক্ষুদ্র শষ্য দানা,
কি গুণ রয়েছে তার ভিতরে কেমনে জানিবে কানা,
তার অসীম অপার সৃষ্টির ভেদটুকু জানা কিবা খুঁজে পাওয়া কভু তার সীমাণা ।
শুধু মরণ ছাড়া,
নানা রোগে হয়ে তারা কিছুটা দিশাহারা,
একেশ্বর ও কোরআন-হাদীসে বিশ্বাসী হয়ে রয়েছে যারা,
তা কে না চিনে, মাঝে মাঝে কিনে ও প্রায়ই খায়, ওরে নাম তার কালজিরা,
সকল রোগের সাফা, তুচ্ছ তার কাছে জাফা, আমি শুধু নয় খোদ আল্লাহপাকেই তা সবারে কয় ।
ক্ষুদ্র কালো তিল,
বলে মানুষেরে ডেকে–বলো কি মুস্কিল,
কালোতে দোষ কি, আকাশের বাণী ও ঐ পাঠে থাকে যদি মিল,
খুঁজে পেয়ে ডুবিয়ে নেয়ে, সারা গায় মাখিয়ে আলো ও ভালোয় ভরা অথই ঝিল,
জানালা-দুয়ার সবই বন্ধ, বুঝি তাই মোহেতে বিভোর অন্ধ, যত অবিশ্বাসীরা সবে সাফ করো দিল,
দেখতে যেমন কালো খেতেও তেমন তিতে, ক্ষুদ্র এই দানাগুলিতেই ঢের তেল হয় ।
এত বড় এক ফল,
পাকিলে হয় তা রসেভরা টলমল,
মোখে দেবার আগেই তার যেন খুশবুতেই জিবে চলে আসে জল,
মিষ্টি রসের যেমন প্রয়োজন তেমনি মিথ্যে নয় আজীবন তেল ছাড়া এ দেহ গাড়ীটা অঁচল পড়ে রয় ।
বাতাসে মিষ্টি সুবাস ছড়ায়,
আর চুপিচুপি ডেকে বলে ওরে কে কে তোরা খাবি আয়,
মোখে দিলে অমনি গড়িয়ে যায়,
গলা বেয়ে নেমে উদরে গেলে পঞ্চ রসনা পূরায়,
খেলে যেমন পেট ভরে তেমনি বাসনার মনটা জুড়ায় ও ভরায়,
এ কেমন বিস্ময় তার জবাব কোথায়, এত বড় তালেও কেনরে হয়না, এক ফোটা তেলও হেথা নয় ।
জীবনে মানুষ অনেক কিছুই হারায়,
কেউ দিনভর আজীবন ঘাম ঝড়িয়েও রহে বড় অসহায়,
আবার কেউবা না চেয়েও কিবা অনায়াসেই যেন তার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী পায় ।
সুদূর গহীন নীলিমায়,
মানুষের দুই জীবনের অচিন দুই দুনিয়ায়,
থেমে নেই পাওয়া, না পাওয়া ও হারিয়ে যাওয়ার ঐ আসা-যাওয়ায়,
এতই বেশী যা কভু ছিলনা কারো ধারণায় আর কিছুতেই বিশ্বাস না হবার মতই তা এক বিস্ময় ।  
ঘৃনা কিবা অবজ্ঞা ও অবহেলায়,
মিথ্যে নয় কতজনে লভে পরম জয় বিশ্বাস ও ভালবাসায়,
কে নেবে হায় ঐ অবিচার, কারচুপি, জুলুম, পক্ষপাত ও বৈষম্যগুলির দায়,
কত পরিণতি, খেসারত ও ক্ষতি অজানায়, কেন হয়না সুমতি বেহিসাবীর তা চোখ এড়িয়ে যায়,
ঘাটেঘাটে দেখি মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা ও ফাঁকি, আরও কতযে রয়েছে বাকী কষ্ট-বেদনা ও জীবনের অবক্ষয় ।


পর্ব – ০২


ছিল তারা হাবসী ক্রীতদাস,
সারা বিশ্বময় একদা ছিল যাদের ঘৃণ্য, করুণ ও গ্লানিকর বসবাস,
দিনে দিনে তার শত বছর পর, বন্য, বর্বর ও হিংস্র ঐ মানুষগুলি যখন ওরে করিল পাস,
দরিদ্র শ্রমিক হয়েছিল পণ্য, দেখতে হেন কালো ও অসুন্দর যেন কেউ যেতোনা কাছে নিতোনা তালাস ।
আজ কেমনে জনমভর বারোমাস,
রুপে নয় গুণে, সকলেই বলে তারা নাকি চমৎকার খেলোয়াড় সাবাস,
দুরন্ত রমণ রয়েছে যাদের চাহিদায়,
কেউ কেউ যারা বলে, পুরুষের মত তারা চার স্বামী কেনরে নাহি পায়,
খুবসুরত মেমসাহেব শ্বেতাংগ রমণীরাও কেন এখন তাদেরেই বেশী জীবন সংগী করে নিতে বা পেতে চায় ।
ঘুমন্ত প্রেমের ঘরে ঝড়ের চেতনা ও মাতন যোগায়,
পুরুষের যৌবন রণ তার সুস্থ্যতা ও সততায় আর ডাকে বান পায় সতেজ প্রাণ স্ত্রীর উঞ্চ মধুর ভালবাসায়,
কোন্ সে অজানা মন্ত্রের যাদুর পরশ ছোয়ায়,
দাস কেমনে হলো সাহেব, সবাই এখন যারে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম  জানায়,
হাতের মুঠোয় তাদের বিবির মন, জানিনা কেমনে তারা ঐ লৌহ পৌরুষে ফের এ বিশ্বজগত করিল জয় ।
এক প্রহরের ভালবাসার,
বশীকরণ ঐ মন্ত্রটা ওরে ভাল জানা আছে যার,
ঘুমহীন বেসামাল দুরন্ত মাতাল ধুমের উদোম এ আদিম রসময় দেহটার,
গরম নরম টক-ঝাল নোনতা মধুর ও বারো মজায় ভরপুর তাই বুঝি ভাল লাগে তার বহিতে ঐ লৌহ-দন্ড ভার ।
ঐ সে রসের ডুব সাঁতারের খেলা,
রঙমাখা ও হরেক ছবি আঁকা নহে তা হেলাফেলা,
হরষ ও তামাসার দুদিনের এ দুনিয়াটা দুজনার এক সাজানো মেলা,
কে জিতে কেবা হারে তবু মন চাহে বারেবারে, যেন বেঁধে রাখে দুজনারে জীবন রবির অন্তবেলা ।
দেখে সাদা কালো আর,
জেনে বিদ্যা ও ধন কি আছে কার,
দেখতে সুদর্শন আর বয়সটাও কম হবে যার,
সবকিছু যার বেশী বেশী আমিযে শুধুই সংগী হতে চাহি তার,
মিথ্যে আশা দুহাতে উড়াবো, আকাশে ঘুরিব, চোখ ও মন জুড়াবো আর পূরাবো যত সাধ বাসনা দেহটার ।  
রুপ নহে গুণটাই বেশী প্রয়োজন,
বিদ্যা ও ধন তার হোকনা মোটামুটি চলনসই যেমন তেমন,
খাটি মাটির মানুষ সুবোধ সুজন,
যার ভিতরে বিচরে ভিজামাটির কোমল ও দয়ালু মন,
হওয়া চাইযে চাই সে,সবার সেরা ভালমানুষ একজন,
নেই ক্ষতি হলেও অতি সহজ ও সরল এমনই সাদামাটা সাধারণ,
হলে হোক তা অতিশয় কম, তবে হতেই হবেযে তা নিত্য ও হরদম আর সবটাই যার হালাল উপার্জন ।
সবার আগে সকলের,
ছিড়ে সকল মিথ্যা, মন্দ, ভুল ও মোহের ঘের,
কথা, আচরণ ও ব্যবহার,
মানুষের মত মানুষ হওয়াটাই সবচে বেশী দরকার,
তাই অনুক্ষণ মন, মনন, মানসিকতা, দরশন ও কাজগুলি যেন হয় দুজনার,
অনুভবে ও চেতনায় ঐ আলো ও ভালোয় ভরা যে মানুষ বানাবার একদা বড়ই সাধ হয়েছিল বিধাতার ।
ছোট্ট জীবন তার সময় যখন হয়ে যাবে শেষ,
দিলে তাড়িয়ে শেষে সব হারিয়ে, সবাই যখন ভিনদেশে হবে নিরুদ্দেশ,
কোন কারণে কিবা দোষে, পড়ে মহারাজার রোষে, আর কিছু নাই কেউ নাই একোন নিদান এক নিমেষ,
শূন্য হাতে আঁধার রাতে শেষে নির্বাক একাকি বসে,
মহারাজার কাছে জিন ও ইনসানের যার যা বকেয়া দেনা আছে, আখেরী হিসাবের ঐ কঠিন মজলিসে ।


পর্ব – ০৩


যদিরে বলে আর সে তার মোখ ফিরিয়ে লয়,
এবার আমার সমুদয় বকেয়া পাওনা চাই, অনেক দিয়েছি ছাড় ওরে তা আর নয়,  
যে খোদায় এখন গোলামের কষ্ট সহে, সব দুঃখের ভার বহে হয়ে এত ক্ষমাশীল, দয়া, করুণা ও মমতাময় ।
এক রাজা এক বিচারক মহাপাকজাত,
ষোলআনা একক মালিকানা যার, নাই কোন কারচুপি ও পক্ষপাত,
সপ্ত আকাশ, জল, মাটি ও বাতাস তার মহাসৃজন আর জীবের জীবন, উদয়-অস্তাচল ও অনন্ত দিবস-রাত ।
করিবেন সবার বিচার,
বাদশাহ ও নফর যত তার সকল বান্দার,
দিবেন যে যা হয় পাওনা তার নায্য সঠিক শাস্তি কিবা পুরস্কার,
দিয়ে জীবন ও সংসার দুনিয়ার ব্যবসার লাভ-ক্ষতি ও দায়-দেনার উপরই নিরুপন হবে সবার জয়-পরাজয় ।
বালাম দেখে, ওজন করে,
অডিও-ভিডিওর প্রমাণগুলি সব তুলে এনে ধরে,
হয়ে খোদার গোলাম, লয়ে সৃষ্টির সেরা হবার দাম, এসে দুদিনের সফরে,
কেন ভুলে গেছে সব ছেড়ে সব ফেলে দুদিন পরে চলে যেতে হবে মরে,
কত ভয়ংকর তার শাস্তির আযাব, গজব আর ক্রোধ ও ক্ষোভের অভিশম্পাত,
বুঝেনি দুনিয়ার যত অকৃতজ্ঞ, নাফরমান, মূর্খ ও বেঈমান কত সবল আর কত লম্বা তার ঐ ক্ষমতার হাত ।
সুখের লাগি প্রয়োজন,
শুধু একলা নহে, সংগী তারা দুইজন,
হওয়া তেমন মাটির মানুষ যার ভিতরে রয়েছে মাটির মন,
সুখ, সাফল্য ও বিত্ত-ধন পায় বা না পায়, তবে জানা যায় হলে তার সঠিক গবেষণ,
হয় সাধন, সবেতো সুখ চায় তবে কেন কেউ পায়না কেউ পায়, সবে জানতে হবে কি তার ভেদ ও কারণ ।
বধূয়া ও স্বামী,
হওয়া চাই দুজন দুজনের প্রিয় বন্ধু,পরম আপন ও দামী,
ঐ দুজনে দুজনার,
শুনেছি নাকি বিধাতার পরম নেয়ামত ও উপহার,
আজীবন আমরণ ওরে আমরা দুজন সুখে-দুঃখে পাশে রবো তুমি আর আমি,
কভু হবেনা তা হয়না সেকথা রাখিয়া স্বরণ,
দুজনেই হতে হয় যতদিন এ দেহে প্রাণ রয়, শোধিতে সংগীর সব পাওনা ও বকেয়া ঋন এমনই সুবোধ সুজন ।
মানুষ চিনিতে হলে ভুল,
কারো কারো জনমভর দিতে হয় তার কঠিন মাসুল,
করিতে না পারিলে হায়,
জীবনের দায়গুলি অতি বেড়ে যায়,
সব থেকেও কেউ কেউ হায়, হয়ে পড়ে বড় অসহায়,
জীবনের হর্ষ বিনোদন খুঁজে নাহি পায়, একজন সঠিক সুজন ভালমানুষ জীবনসংগী নির্বাচন ।
নাহলে ওরে নিশ্চয়,
জীবন তার হয় দূর্বিসহ, দুঃক্ষ ও যাতনাময়,
দুজনার সুখের লাগি পাশে থেকে রাত্রি জাগি, সব সুখ-দুঃখ দুজনেই তাই ভাগাভাগি করে নিতে হয় ।
কতজনে সুখ সুখ করে গোপনে কাঁন্দে,
পরকে আপন করে আপনজনারে পর, একটার পরে আরেকটা ঘর ভাংগে আর বান্ধে,
ছটফট ধড়ফড় করা বুক,
হন্নে হয়ে খুঁজতে নেমেও সুখ,
বন থেকে বনান্তর এ গাছ থেকে ওগাছে,  শেষে পড়ে গিয়ে আটকে আছে দারুণ মোহের ফাঁন্দে,
খোদার জীবন বিধান মানিতেই হয়,
আমি সব জানি ও সব পারি এমন ধারণা ও স্বেচ্ছাচারিতায় ই পরাজয়,
যেমন যার ইচ্ছে হয় চাহিলেই তা পাবে, নাক ডুবিয়ে খাবে ও দুহাতে উড়াবে সুখতো এতটা সস্তা নয় ।


পর্ব – ০৪


এমন কত জন থেকেও ঝলমলে প্রাসাদে,
প্রসন্ন বদন, অশ্রুহীন নিরব করুণ ক্রন্দন, কে বলিবে সে রয়েছে বিষাদে,
আকাশ ছোয়া ঘেরানো বিশাল প্রাচীর, স্বপ্নভংগের কষ্ট আর হতাশায় অধীর, বন্দিশালার লৌহ গরাদে ।
আপন সে গৃহ কারাগারে,
স্বাক্ষী বিহীন অজানা শত কষ্টের নিরব হাহাকারে,
একটুখানি সুখের আশায়,
পাবে কি পাবেনা ওরে তা সেতো সবারই অজানায়,
স্বেচ্ছা নির্বাসনে অতি গোপনে পালিয়ে যেতে যেন বসে ঐ সুযোগের অপেক্ষায়,
জগতের কেউ যেন কভু তা নাহি জানিতে পায়,
দূর গগণের স্নিগ্ধ রুপালী আলোর ঐ সে বিজন মায়াবী চাঁদে কেজানে কোন সুখ হেলায় গড়াগড়ি যায় ।
ছোট ছোট হেথা কত অগণিত ঘাসফুল,
সকলের চোখে পড়েনা বা কেউ রাখেনা খবর রয়েছে এমন সহস্র মুকুল,
পায়েচলা পথের ধারে,
ঝোপ-ঝাড়, বনানী, ঝর্ণা, ছড়া ও হ্রদের পারে,
তৃণদলে অনাদরে অযতনে বেড়ে উঠে ফুটে রয় তার সে অপরুপ বাহারে,
সবাইতো বিদ্যান ভদ্রলোক, তবে সবার কি আছে সেই চোখ, হয়তোবা হবে তারা এ জগতের নাঁচের পুতুল ।
হয়তো পদতলে পিষ্ট হয় ঐ ক্ষুদ্র জংলী ফুল,
তবুও যদি তা হয় ঘৃণা বা অহংকার, হয়তো হতেও পারে বিপদ সংকুল,
এ জীবনতো নহে বিচক্ষণ জনেরা কহে, তাজা ফুলের পাপড়ি বিছানো কোমল মখমল তুলতুল,
ছোট বলে কারেও অবহেলা নয়, তুচ্ছ নহে এ জগতে কারো অবদান, না যেন হয় কভু আর কারো হেন ভুল ।
কি শোভায় সাজিয়েছে বিধি এ প্রকৃতি অতুল,
দেখাবো কেমনে তা কহিব কত, সে সৃজন ও বিনাশ নিত্য অবিরত হেন প্রতুল,
হেন জীবন মূল্যহীন অকারণ,
পরের উপকার, কল্যাণ ও মংগল যা করেনা সাধন,
আর নাই যার বায়ু ও ছায়া শীতল, পত্র, লতা-গুল্ম, ছাল-বাকল, ফুল-ফল, বিকশিত প্রসারিত শাখা ও মূল ।
বিভোর ও বিভোল,
গুনগুন ভনভন ঐ সে মধুর কলরোল,
গ্রীষ্মে, শীতে ও বরষায়, বাতাসে সারাক্ষণ হেলেদুলে তারা খায় দোল,
মাথা নেড়ে ও হাতের ইশারায়, কজনে বুঝে হায় নাজানি তারা কি বলিতে চায় কোন সে আসমানী বোল ।
নাম না থাকা ও নাম না জানা ক্ষুদ্র ঐ ফুল,
ওরে যেন তারা খুশীতে দিশাহারা, চঞ্চল আনমন কোমল ও তুলতুল,
কে বলে নাই শোভা তার কিবা কোন সৌরভ,
আমি বলি আছে ষোলআনা সব, শুধু পায়েতে বাঁধা শিকল ও কন্ঠটা নিরব,
কেমনে হেরিবে কেমনে পাবে যার কাছে নেই দেখিবার ঐ চোখ স্রষ্টার সেই মহিমা ও মহাসৃষ্টির গৌরব,    
কত রঙ আর আকারের মাছি,
উড়ে উড়ে কাছে এসে চারদিকে ঘুর ঘুর হরষের নাঁচানাঁচি,
প্রজাপতি ও ফড়িং খুশীতে দিশেহারা তিড়িংবিড়িং কোনটাযে নিবে তারা তুলে বাছি,
তুচ্ছ ক্ষুদ্র হলেও এই ফুলের মতন জীবনই আমি, অনুভবে হতে দামী বিধাতার কাছে বিনয়ে কাতরে যাচি ।
এই ঘাসফুলের মধুটুকু খেয়ে,
তৃষিত ক্ষুধাতুর কোটি পতংগ প্রাণ পাতার ফাঁকেই পড়ে ঘুমিয়ে,
এমনি করেই তারা কোন বাড়ী-ঘর ছাড়া, সাজিয়ে মাতিয়ে এ বসুন্ধরা রয়েছে পরম সুখেতে বাঁচি,
যে যখন সুযোগ ও ফাঁক পায়, ছুটে এসে ফুলে বসে মধু খেয়ে চলে যায়, হলে তা একটুখানি নিংড়িয়ে সঞ্চয় ।


পর্ব – ০৫


ক্লান্ত পথিক ঘুমায়,
অশ্বথ গাছের তলে শীতল ছায়ায়,
পাখীরা এসে ফল খায় ও কেউ বসে একটু জিরায়,
যখন আর কোন কাজ নেই শেষে, বনের যত দুষ্ট প্রাণীরা তাই বুঝি এসে তাহারে শুধায় ।
অ বেটা একাই তুই কেনরে,
জানিসনা কতজনে প্রাণ বাঁচায় হঠাৎ ছুটে এসে মোর ডালেতে চড়ে,
এ বনের এত বেশী জায়গা জুড়ে, দেখছি তুই এখানেই রয়েছিস পড়ে কত শত বছর ধরে ।
বৃক্ষরে তোর নাম কি, চোখ রাঙিয়ে সে কয়,
শান্ত হয়ে বৃক্ষ বলে নাম দিয়ে তোর কাম কি ওরে নাম দিয়ে কি হয়,
দেখেছি অনেক দেখবো কত আর বিদ্যা, ধন, রুপ ও ক্ষমতার বাহারী জীবনের পরাজয়,
দেখবে সবে হলে সময় শুধু তারাই এ জগতে যারা মূর্খ নয়, কথায় নহে কাজে আর হবে তার ফলে পরিচয় ।
দেখি কতজনের থেকেও ধনের পাহাড়,
আবার নেই ধন উল্টো আছে শত অনটন তবুও কোন হাহাকার,
এখন ভেবে দেখি একটু বুঝি,
কে বেশী ধনী, সুখ বেশী কার ও কার আছে কতটুকু ধী,
সবে মিলে এসো তা খুঁজি, কোথায় খাটি সুখ পাওয়া যায়, কত দাম আর কোথায় আছে ঐ সুখের বাজার ।  
জীবন বিত্ত ও সুখ বিহীন,
দেখেছি অনেক কোথাও দুঃসহ মূল্যহীন,
আবার কখনও বাড়ায় তা শুধু জীবনের অশান্তি, কষ্ট, ঝামেলা ও ঋন ।
যাদের তা মোটেও নেই,
কই তারাতো হারিয়ে ফেলেনি তাদের জীবনের খেই,
হয়নি তাদের জীবন অঁচল, দেখিনি আমি তাদের মন বিষন্ন কিবা বিমর্ষ ও মলিন,  
যদিও জীবনে কিছুটা হয় প্রয়োজন তার, এ রুপ-যৌবন, উঁচু জাত-বংশ, বিদ্যা ও বিত্ত-ধনের বাহারী পসার ।  
শুধু দুটি তৃষিত তাড়িত চোখ ও মন,
আঁচলে ঠেসে বেঁধে করিতে চাহে যেন তাহারে শাসন,
কি লাভ এত আর সুখ সুখ করে, শান্তির এ ঘরটারে অসুখে ভরে জ্বালাতন,
যা আছে এখন আমার কাছে, শুধু তাই লয়েই নিজের ঘরে করিতে হয় অন্তরে অন্তরে সুখের অন্বেষণ ।
এমনি করেই নিজে হয়ে রাণী,
উগ্র ও ক্ষিপ্ত নয় বরং হয়ে সোহাগী কপট অভিমানি,
দূরে ঠেলে নয়, মধুর প্রেমের ছোয়ায় পতিকে লয়ে আরও অধিক কাছে টানি,
তাকে দিয়ে তার,
নায্য পাওনা সম্মান ও অধিকার,
আর আপন রাজ্যটার মহান অধিপতি ও মহারাজার সম্মানের আসন,
বহুদিন ধরে তিল তিল করে, এমনি ভাবেই নিতে হয় গড়ে বিশাল রাজ্য ও তার একখানা সোনার সিংহাসন ।
সুদর্শন সুপুরুষ স্বামীর সুখের ঘরেও আছে কত কালো বউ,
আবার এমনওতো আছে রুপসী বিদ্যান, ভরা যৌবন টানটান তবু কেন নাই দাম নহে মৌ মৌ,
নেইতো ঘূর্নিবায়ু কোন ভয়ংকর বাঁক, তবু কেন হেথা এত ঢেউ আর ঢেউ,
জীবন যখন বহিবে উজানে,
মাতাল হরষের শত সুখ-বিনোদন চঞ্চল বানে,
কেনরে হলো এমন বিরস, দুঃসহ বিষন্ন ও বিজন, জীবনে যার বেশী প্রয়োজন সেই প্রিয়বন্ধু এখন নেই পাশে কেউ ।
স্বামী ও স্ত্রী হয় দুজনে দুজনার পর,
কেন ভেংগে যায় ওরে এত সুন্দর সাজানো ঐ শান্তি-সুখের ঘর,
তা কেমনে হয় যেন কেউ কারো নয়, এক ছাদের নীচে বসত করেও জনমভর এক বিছানার উপর ।


পর্ব – ০৬


ছুড়ে পাও-হাত সারাটা রাত ছটফট ধড়ফড়,
ভাল লাগে কার এ নিরব হাহাকার দেখিতে ব্যাপীয়া মাস-বছর,
এড়ায় না জ্ঞানীর চোখ,
না’ও যদি বলে কিছু সুজন পড়শী লোক,
দেখেও তার মেঘকালো গোমড়া ঐ টুকটুকে সুন্দর মুখ,
পীড়ন সওয়া ও লালচে হওয়া নিদহীন তৃষিত কালোচোখ সারাটা দিনভর,
ঢোলের বাড়ি যায় সাত পাড়া ছাড়ি, মন্দ কথা ছড়ায় তারচে তাড়াতাড়ি, আঁচল তলে লুকানো নাহি রয় ।  
কেউ যেন কারো নয়,
আর ভিতরে ভিতরে তারা পর হয়ে রয়,
বলো তবে আর আপন ঘর অশান্তির জেলখানা কারে কয়,
কোন কারণে বলো কেমনে, বাহিরে কেন তাদের কপট ভালবাসার অভিনয়,
কেন এত ক্ষোভ রোষ, বলো তাতে কার দোষ, কেনযে হয় জীবনের হেন পরিণতি ও নির্মম পরাজয় ।
সে যে মহা সর্বনাশা ও ভয়ংকর,
স্বচ্ছ নীল আকাশ, পরিমল ও পরিপাটি চারপাশ তবু কেন উঠে ঝড়,
হলেও দ্বিমত হতে হবে একমত ও একই চলার পথ,
ঘুচিয়ে ব্যবধান চাহি সব সমাধান, নাহলে মাঝপথে ভেংগেও যেতে পারে সোনার রথ,
তারই হয় সাফল্য ও বিজয়,
করে বক্ষে ধারণ ও দুহাতে সব আপন শিরে তুলে লয়,
যে বেশী কষ্ট সহে, দুঃখের ভার বহে, বেশী শোনে ও কম কহে, এভাবেই সব জয় করে নিতে হয় ।  
সেযে এক কঠিন জীবন রণ,
সে যেন মেনে লওয়া স্বেচ্ছায় সহমরণ,
নির্বাসনে চলে যায় রাজ্য ও সিংহাসন দিয়ে বিসর্জন,
ইতিহাস কয়, জগতে ছিল কতযে রাজকুমার ও রাজকুমারী এমন,
রাখিতে তার চোখ ও মনের ভালবাসার চাওয়াটার দাম আকুল ঐ নাবলা আবেদন,
তাতে বলো কি আসে যায়, কেউকি আর জাত-কুল তার ধুয়ে খায়, যদি পায় মনের মত মন,
সংগী যদি সুজন কিবা ঠিক এমনই একজন ভালমানুষ হয়,
তবে উজার করে তারে সব বিলিয়ে দিতে আর ভালবাসায় তার ডুবিয়া মরিতে কিসের এত ভয় ।
কেউ জানতে চাহিলে কে আমি,
বলবো আমি মহারাজার এমন গোলাম ছিলাম অতি দামী,
মাটির তৈয়ার ইনসান হয়েও দামী বলনে, চলনে ও কাজে এখন আমি হয়ে গেছি অতিশয় কমদামী ।
হয়তোবা তার,
ধারে পাওয়া এ জীবনটা আর,
হয়েও ভিনদেশী এক চতুর মুসাফির ইজারাদার,
বিত্ত-বেসাত, ধন-জন ও অগণিত নেয়ামতের দাদন খেয়েও ভুলে যাওয়া এক ঋন খেলাপী আসামী ।
বিধাতায় অপার করুণায় বানিয়ে ইনসান,
নশ্বর এ দেহে দিয়ে তার, অনন্ত জীবন আর অবিনশ্বর প্রাণ,
শুধু তার স্থান-কাল,পাত্র আর পরিবেশ ও সময়ের ব্যবধান,  
তাইবা ওরে কম কিসের পেয়েছিতো একবার, স্রষ্টার বেশুমার সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ হবার ঐ উপহার ও সম্মান ।  
না হলেও আমি পুণ্যবান,
হয়েছিতো একেশ্বরবাদী একজন ঐ মুসলমান,
দুই জীবনের এক দেহের এক প্রাণ, তার যত নেয়ামত ধন-জন এক বিধাতার দান,  
এই অধম গোলাম ছাড়া শুধু কিছু কলঙ্ক বদনাম, না যদি হয় নাখোশ তবে মোর খোদা মহান ও মেহেরবান ।
কি নাই তার কাছে আর কি পারেনা ওরে যদি সে চান,
শূন্য হাতে ঐ আঁধার রাতে, তাই সে আশায় আছে বসে হবেযে তার মেহমান,  
মাটির এ দেহে দিয়ে রাখা তার প্রাণ কত মূল্যবান,
তার অদৃশ্য অপার নেয়ামত ও দানে পা হতে মাথার ডুবে আছে যে দেহখান,
আর কিছু মোর নেই পরিচয়, এক আল্লাহ আর প্রিয় আখেরী নবী উম্মতে মোহাম্মদীর প্রতি এনেছি ঈমান ।


পর্ব – ০৭


যদিও আমার কাছে তার নাই কোন প্রমাণ,
সেযে এক পরম পাওয়া, হয়েছি বাবা আদম ও মা হাওয়ার সন্তান,
বিশ্বাস, নির্ভরতা ও মুখাপেক্ষিতায় মানুষ হয় মহান,
ছিন্ন ভিন্ন ছোট ছোট হাড়গুলি কোনটা কোথায় কে করিবে তার সন্ধান,
পঁচে-গলে মাটি ও তেল হয়ে যায় তবু কেমনে ফিরে পায়, আবার জীবন-প্রাণ এত মূল্যবান,
পারিনি আমি সৃষ্টির কল্যাণ ও মংগলে করিতে তেমন কোন দান কিবা রাখিতে সামাণ্য ঐ মহান অবদান ।
হয়নি আজও ঐ দায়গুলি পূরণ তিনি যাহা চান,
আমার করা স্রষ্টা, দাতা, পালক, প্রভু ও মনিবের সঠিক গুণগান,
আমার কি দোষ, সাধতো ছিল তবু জানিনা কেন খোদায় ঐ সাধ্য মোরে করেনি দান ।
দিয়ে বুঝ না মানা চোখেতে নেশার ঘোর,
আর এত লোভ, মোহ ও বাসনায় করে রেখে জীবনের সারাক্ষণ বিভোর,
আমি যেন এক ঋন খেলাপী পলাতক বিবেকের চোর,
অনেক সূতা ছেড়ে দিয়ে,
রঙীন ঘুড়ির মত দূর আকাশের দামাল বাতাসে উড়িয়ে,
রেখেছে ধরে দেখে হাসে আর মজা করে, তার নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নাঁচন করা এক খেলনার মতন তার ডোর ।
কি মজার যেন সে এক ইদুর বিড়াল খেলা,
না মিটিতে শত সাধ ও আশা আর না ভাঙিতে রঙ্গ-রসের রঙ-তামাসার মেলা,
সবাই রাখিও জেনে,
ধরিয়া সেদিন আনিবে সবারে টেনে,
শেষ বিচারের তরে মহাআদালতের মহাবিচারকের সামনে,
দিনের শেষে হলেও অচিন ঐ আপন দেশে সব হারানোর করুণ ও কঠিন সন্ধাবেলা,  
অবিরাম শুধু দৌড়-ছুট ছিলেম আমি এতই ব্যস্ত ও পেরেশান, মনে ছিলনাযে মহাজন এক দিবেন হেঁচকা টান ।
তার কাছে আমার অনেক ঋন,
জানিনা এ বোঝাখানি আমি বহিব আর কতদিন,
দাদন খেয়েছি, না চেয়ে কতকিছু পেয়েছি, কি দিয়েছি আমি তার প্রতিদান,
তা কি কভু হবে পরিশোধ, সাধ্য নেই যদিও আছে বোধ, এক অধম গোলামের কাছে মহারাজায় যাহা পান ।
পাঠ করে করে, শুনে শুনে ও দেখে দেখে,
ছাড়া এই সত্য সুবচন মোর জবানে কহন আর তা কাগজে-কলমে লেখে,
যেটুকু লয়েছি শিখে তাই, সম্বল মোর আর কিছু নাই, মহা নিদান ও মুস্কিলে আহসান তাতে যদি পাই ত্রাণ ।
আর কিছু নেই কোন বিত্তধন,
সাধ্য নেই তবু আছে মোর সাধ ভরা একটা মন,
ভাল কিছু করা, ভাল কিছু গড়া ও দীনজনে ভাল কিছু করা বিতরণ,
শত অনটনে যারা অসহায়, তবু লোকের কাছে কিছু নাহি চায়, আপদে নিদানে থাকা জনগণ ।
সাধ আর সাধ্যে কেন দন্দ এমন,
হলেও স্বজন ধনী ও গরীবের ব্যবধানটা হয় যেমন,  
কেবা আসল কেবা নকল, কই আমার এত কাছের ঐ প্রিয় আপনজন,
কেউ যদি বলেও বলুক আমার চেয়ে বেশী তাদের সুখ, হয়েছে মোর পরাজয় নহে সাধন,
তবু ধন্য আমি হয়েছি তাতেই, কোন অভিযোগ, অভিমান বা ক্ষোভ নেই, এইতো আমার প্রথম ও শেষ পরিচয় ।  
না করে আলো ও ভালোর চাষ,
রাজায় বানাতে চায় রাজ্যের সব প্রজারে হুকুম তামিলের দাস,
বুঝিবে কবে আপন পায়েতে মেড়ে কুঠার কোন বিলাসে যেন উল্লাসে করিছে আপনার সর্বনাশ ।
স্বাক্ষী হয়ে ইতিহাস সব তিক্ত সত্য কথা কয়,
অন্যায়, অবিচার, আত্বসাত ও কারচুপি যদিরে তা না মিথ্যে হয়,
রয়েছে এমন লাখো অভিশপ্ত রাজ পরিবার ও শূন্য প্রাসাদ মহল বিশাল এলাকা জুড়ে লয়,
তবে নিশ্চয় জুলুম, পক্ষপাত ও বৈষম্যের বিকাশ ও প্রচলন হচ্ছে প্রতি ঘর, পরিবার, সমাজ ও গোটা রাজ্যময় ।


পর্ব – ০৮


আজও হেথায় কেউ শোনতে পায় কান্নার রোল ও হাহাকার সারা প্রাসাদময়,
কেউ যায়না, শুনেই গা ছমছম করা ভয়,
তা কেমনে হবে, সে কি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনেহয়,
চামচিকে, বাদুর ও পেঁচারা ছাড়া কেউ আর এখন তার বাসিন্দা নয়,
ঐ ঝলমলে প্রাসাদ পুরী,
অত্যাচার, জুলুম ও অহংকারের আগুনে পুড়েও কালের রশিটা ধরি,
আজও যায়নি ধ্বসে আছে দাড়িয়ে, ইটগুলি যার এক এক করে পড়ছে খসে ঝড়ি ঝড়ি,
দুঃশাসন ও শোষনের রোষানলে বুঝি ঐ রাজাদের হয়েছে চির জনমের করুণ পরিণতি ও পরাজয় ।
অতীত ও বর্তমানের নির্মম স্মৃতি বুকে লয়,
নাহলে কেনরে পাওয়া যায়না আজও খুঁজি কেউ পরিচিত নয়,
কোন কারণে ঐ প্রাসাদ ও জমিদারির কোন ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী কেউ নাহি আজও এসে দাবীদার হয় ।
কারো আঁখি ছলছল,
কারোবা চোখের জলে সিক্ত শাড়ীর আঁচল,
কথা বলিবার ছিলনা কারো কোন সাহস, অধিকার কিবা বল,
কেউ কেউ বলে, নাকি ভিড় করে সহস্র মজলুমের প্রেতাত্বাদের ছোট বড় দল,  
আজও এসে তাদের শোকের মাতন ঢল ক্রদ্ধ মিছিল করে বিচরণ নিঝুম ও বিজন ঐ অন্ধকার প্রাসাদময় ।
ছিন্নমূল যাযাবর মুসাফির কিবা ভিখারীর বেশে,
আজ তারা সর্বহারা পরিচয় ও ঠিকানাহীন দিশেহারা নিরুদ্দেশে,
কেজানে আজও তারা বহিছে কিনা ঐ বকেয়া ঋন, কবে শোধ হবে তা পৌছিবে শেষে ।
একজনের উপার্জন পূরা গোষ্টিয়ে বসে খায়,
কত সুখ-বিনোদন, ভোগ-বিলাস, হরষ-উল্লাস ও হরেক তামাসায়,
আর তা জুলুমের হলে, কোন না কোন কারণে বা ছলে তিন পুরুষেই হায় যায় ফুরিয়ে অজানায় ।
রাজপুত্র কিবা রাজকন্যা,
যাই হোক যার চাহিদা কিবা বাসনা,
না হলে এ মহাজগত, মহাসৃষ্টি ও মনুষ্য জীবনের ভেদ জানা,
কোন লাভ নাই, আসলে সবই মিথ্যে ও মূল্যহীন তাদের ছোট্ট এ রঙীন জীবনখানা,
হলেও রুপেতে সেরা দেখি তারা নানা ভুল ও মোহেতে ঘেরা, মনেহয় যত বিদ্যান ও বিত্তশালী সবাই কানা ।
মহান দাতা মহারাজা মহাজন,
হঠাৎ যখন এ জীবন আর সবকিছু সবার করিবে হরণ,
বুঝিবে তখন অলীক তার সব জানা আর বরফের প্রাসাদ যেন সবটুকু অর্জন,
নেই কোন সেই বোধ কিবা ভাবনা,
ভুল তার জীবনের দরশন ও মিছে ষোলআনা সে হিসাবখানা,
কেমনে কবে তা পরিশোধ হবে, কেন নেই দেখিনা তার কোন পেরেশানি কিবা তাড়না,
রয়েছে পড়ে বহুদিন ধরে, মহাজনের ঐ তহসিল ঘরে মাথাভারী যে বকেয়া ঋন সুদাসলে শুধু ইজায় টানা ।  
কহে গুরুজন,
সাবধান সবে রাখিও স্বরণ,
পলকের পিরিত ভেংগে যেতে কতক্ষণ,
ভাল করে মন না জেনে দিওনা কেউ কারেও কথা কিবা মন,
বিয়ের আগে অতি অনুরাগে, আবেগের ছলে পড়ে গিয়ে গায়ে ঢলে শেরষ বাহুর কোলেতে বিসর্জন ।
বিজ্ঞজনের অনুশাসনের বচন,
সংঘটন দেহমিলন না হতে বিবাহ বন্ধন,
সে ভালবাসাতো ভাল নয়, ভালর নামে অলক্ষুণে যত মন্দ হয় আর ভীষণ দুঃক্ষ, যাতনা ও কলংকময় ।


পর্ব – ০৯


সময়টাই এখন হয়েছে এমন,
সবারই যেন ডিজিটাল চোখ, মন, চলন, বলন, মানসিকতা ও আচরণ,
নারী-পুরুষের বিপরীত লিঙ্গের অনেক বন্ধু, অবাধ যৌন মিলন হলে দুজনের একই চাহিদা ও আবেদন,
পরকিয়াতে কেন তাদের তা নাহি হয়, বিবাহ করায় অনুভবে ও চেতনায় তারা পায় যতটুকু সরম ও ভয় ।
বুঝিবা তারা এটাই চায়,
নাহি নিবে কোন দায় কিবা অন্য ঝামেলায় জড়ায়,  
তাই কি তার কারণ,
দূর হতে ছুটে এসে যখন চাহিবে মন,
চলে যাবে চোরের মতন চুপিচুপি মধু করে আহরণ ।
নিশ্চয় তা সুস্থ্য মানসিকতা নয়,
উদ্ভট অতি আধুনিকতার সৃজন সে এক বিকৃত জীবন চরম অবক্ষয়,
সেযে এ যুগের নষ্ট মানুষের, নিজ হাতে তার আপনার ছোট্ট এ সুন্দর জীবনের ভয়ংকর পরিণতি ও পরাজয় ।
মাটির মানুষ আমি এইতো মোর পরিচয়,
আজও যদি ওরে নিজেরে চেনা-জানার সে কাজটুকু শেষ না হয়,
দুদিনের এ বানিজ্য সফরে ভিনদেশে এসে, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়েও কেন অকারণে শেষে মেনে লবে কলঙ্কিত পরাজয় ।  
মনের জানালায় বসি,
সব কাজ ফেলে রেখে, একাকি আসি,
আমরণ সংগী হয়ে রবে তা রাশিরাশি,
হাত গুটিয়ে চিরন্তন ব্যস্ততা, পেরেশানি ও তাড়নাগুলি নাশি,
অল্প কিছুক্ষণের লাগি, প্রয়োজনে রাত জাগি নিঝুম, নিরব ও বিজন প্রকৃতি ভালবাসি,
ছোট্ট এ জীবনের মরণ, সব ধন ও সবকিছু যে করিবে হরণ, ছদ্দবেশে সে ওতো সারাক্ষণ চলছে পাশাপাশি ।
হাতে আর কারো সময় বেশী নাই,
এ জীবন আর নিজেকে যদি ভালকরে চিনতে ও জানতে চাই,
কেন এ সফর, কি আমার কাজ আর কিবা সব দায় যা অজানায় মাথায় তুলে নিয়ে তাই,
তবে জলদি এসো ভাই, যাদের জানতে ইচ্ছে হয় মনের সবকটি দুয়ার দিয়ে খুলি ও হাতে নিয়ে একটু সময় ।
সব হারিয়েও লভিতে পরম জয়,
ঐশী আলোর প্রদীপ জ্বেলে পঙ্কিলতা পায়ে ঠেলে হয়ে জ্যোতির্ময়,
লুকিয়ে রাখা দেহের ভিতর দীপ্ত মনোহর, বন্ধ ঐ নয়নখানা যেন চির অবারিত অক্ষয় আলোকিত রয়,
চির বিস্ময়কর ও অরুপ সুন্দর সৃষ্টির অদৃশ্য যত স্থাপনা ও আকাশের শেষ সীমাণাবধি যেন ঐ নজর প্রসারিত হয় ।  
এই দুনিয়া মানুষের দুদিনের পরবাস চিরস্থায়ী নয়,
কয়দিন পরে সব ফেলে রেখে ছেড়ে ও সবারে পর করে, জনমের তরে চলে যেতে হয়,
আজও যার তা জানা হয় নাই,
পাথেয় কিবা পথের সম্বল কি আছে কার সংগে তাই,
না হতে জীবন ষোলআনা মিছে, সে তালাস নিতেতো কারো জাতের ক্ষতি নাই,
কোথায় সে মহান বাণী-পাঠ ও মহাজ্ঞান এসোনা তা আমরা সবে খুঁজে বেড়াই ।
সব হারিয়ে হয়ে নিঃস্ব কাঙ্গাল,
পথের ধারে খুঁজে পেলে পুরাতন এক বিশাল ছাইয়ের টাল,
কি আছে হেথায় এসোনা দেখি তাই দুহাতে উড়াই,
কি লয়ে কবে, আবার ফিরে যেতে হবে, কোথায় সে ঠিকানা ভাই,
হলেও ঘর্ম ক্লান্ত না হয়ে হতাশ ও ক্ষান্ত, হাত-পায়, মোখ ও মাথায় যদিও মাখামাখি হয়ে যায় ছাই,
পেলেও পেতে পারি সে অমূল্য রতন,
যে পাওয়ায় ওরে হতেও পারে, অনন্য মহাধন্য দুই জগতের ক্ষুদ্র নগণ্য এই এক জীবন,
বিজ্ঞজনে যা কহে তা কভু মিথ্যে নহে বা কঠিন কিছুই নয়,
শুধু মান্যতা, নিবেদন, আরজি, আকুতি, ভয় ও সাধনায়ই হয় সাধন ও মহাবিজয়,
বিশ্বাস, ভক্তি, নির্ভরতা ও বিনয়, যুগে যুগে হয়েছে, এখনওযে হয় এবং মহাকাল ওরে তা হবেই হবে নিশ্চয় ।