আজব এই ঢাকা শহর ॥
কত প্রিয় কতযে চেনা,
তিক্ত মিঠা কত স্মৃতি ভোলা যায়না,
বিনা মূল্যে প্রেমের দামেই যেন হয়েছে কেনা,
রঙতুলির ছবি অাঁকা, যতনে লুকিয়ে রাখা, এই বুকের ভিতর ॥
এই রাজধানী,
কত পেরেসানি টানাটানি,
তবু যেন কোন সে মায়ার হাতছানি,  
এনেছিল বুঝি মোরে কেন জানি জোড় করে টানি,
পরিবার শুদ্দ ধরে,  
সেইযে কবে কেমনে মোরে,
কিছু পিছুটান কিছু ঋন, তবু কোন ফাঁকে বহুদিন, কেটে গেছে তারপর ॥
চেয়েছি কত,
আমি হতে তার মনের মত,
প্রতিদিন সারাক্ষন,
হইনি কেনযে তবু আজও আপন,
আমি প্রানপণ করেছি সাধনা করছি কত রণ,
জানিনা কোন রোশে, কিবা দোষে কার জোড়ে, তবু সে মোরে রেখেছে করে পর ॥
আছে সংসার,
এক বিবি চার বাচ্চার পরিবার,
হাল ভালনা, এই কলির জমানার,
কাছে রেখে সন্তান মানূষ করা দরকার,
তাতে ওতো হয় দেখি কত অনিয়ম ছাড়খাড়,
তাই আমি ভাড়াটিয়া,
মাসে মাসে অনেকগুলি টাকা দিয়া,
এই শহরে, মোখ বুজে আছি পড়ে, যতই আসুক অনটন আর টানাপোড়নের প্লাবন ঝড় ॥
যেন কোথাও জায়গা নাই,
আসলে জায়গা আছে, বড় টাকার অভাবটাই,
সে ওবা কম কি, নাহোক নিজের আমার, তবুতো মাথা গোঁজার আছে একটুখানি ঠাই,
কত সাধ সাধনা পূরণ হয়না,
তবুও ঢাকায় থাকার প্রয়োজন তাড়না,
রাজার কাছে আমি কত ঋনী, নাহয় করতে পারিনি করা হয়নি, আজও একটা আমার নিজের বাড়ীঘর ॥
তা আমার মনে নেই,
কেমনে বলো তার হিসেব দেই,
তারিখ লেখিনি গনেও দেখিনি, আসলে হয়েছে কেটে গেছে, এই ফাঁকে এভাবে কতটি বছর ॥
যাই কোথায়,
যেন একেবারে নিরুপায়,
থাকি তাই টিনের ঘরের এক ভাড়াটে বাসায়,
কি করিবে জাতে, মানতো আর তাতে নাহি টুটে যায়,
বেঁচে আছি কোনমতে ডালভাতে, একহাতের এই অল্প টাকায়,
অতী আপনজন সবার লাগি সবার মন, দেখি ভূবন জোড়া সারাক্ষন করে ছটফট ধড়ফড় ॥
এভাবে যাতায়াত করে অল্প বয়সে যাব মারা,
সেইতো যায় জলের মত বহুটাকা যাতায়াত ভাড়া,
কি লাভ তাতে, সময়ের অপচয় আর জানের কষ্ট ছাড়া,
দূরে রলে ঘরে পড়ে থাকে মন,  
পাগল অ দুটি নয়ন করে সারাক্ষন জ্বালাতন,
নিত্য সাঝে ও প্রাতে একই আংগীনাতে, মন চায় ভাল লাগে খেতে বসে পেতে ঐ চোখের দেখার খবর ॥
ভেবে দেখেছি বসে,
দুদিনের এই দুনিয়ায় এসে,
মুখোশধারী এক যাযাবর মুসাফির বেশে,  
জানি কতকিছু নাই, এই শূন্যতা আর ঘাটতি লয়ে যদি কভূ হঠাৎ চলে যাই, তবে কি লাভ হবে আর শেষে,
তাই শূন্য হাতেই চলেছি ভাই, কাঁধে লয়ে বয়ে তাই, অটল বিশ্বাস আর নির্ভরতায় করুনা  বিধাতার সাহসে দিয়ে ভর ॥
এইতো জোয়ার এই আসে ভাটা,
কি করা যায় যদি হয় ভাগ্যটা খারাপ আর কপাল ফাটা,
আমার বিফলে,
সাথি যদি চোখের জলে,
পেতে একটুখানি সুখ যখন মাঙে,
কি হবে বলো তবে এ বুকের ঢেউহীন প্রেমের গাঙে,
কি করিব আমি, হয়ে গেলে আরও কমদামী, যদি এই থাকে মোর ভাগে আর হঠাৎ জাগে
একটা বিশাল চর ॥
মনেরে বুঝাই,
আমার যা আছে তাই,
ঐটুকুতো দেখি কোটি জনের নাই,
সেইতো আমার ভরসা আর অনেক পাবার বড়াই,
ওরে দায় যার, সে ইতো যোগাবে আহার, নেবে আপদে নিদানে তড়াই, তবে আর আমার কিসের ভাবনা কিসের ডর ॥
আজব দৃশ্যপট,
কি ভীষন যান জট,
কোথাও যাওয়া যায়না ঝটপট,
চাহিলেও মন,
নেইযে উপায় এমন,
হলেও কভূ কোন জরুরী প্রয়োজন,
থমকে যেন থেমে যেতে চায় এ শহর জীবন,
গাড়ীগুলি যেন জিরিয়ে নেয় থেমে থেমে,
কাছের পথ হলে, বসে না থেকে কেউ যায় চলে নেমে,
হেন ক্লান্ত, নাহলে কেন হবে ক্ষান্ত, যেন সে গিয়েছে বড় ঘেমে,
বিনা কাজে হায়,
কেউ ইন্টারনেটে ভালই কাটায়,
গাড়ীতে বসে থেকে মূল্যবান সময়টা চলে যায়,
মনটা যায় তেতে,
কেউ বিভোর ভোগেতে মেতে,
ক্ষুধা লেগে যায়, কারো মন চায় কিছু খেতে,
এইকি খেটে খাওয়া মানূষের ভাগে, তিন ঘন্টা লাগে যেতে মাত্র একঘন্টার সফর ॥
সারিতে দাড়িয়ে থাকে সারিতে চলে,
কোন দুঃখে যেন তারা একেঅপরে জড়িয়ে ধরে গলে,
চুপিসারে, আহারে ফিসফিস করে, নাজানি কি কথা বলে,
আমিও কখন হেটে কিবা দৌড়ে যেতাম চলে, গন্তব্যটা কাছে হলে,
কে বসে থাকে এতক্ষন অকারন, না হলে নিতান্ত অসহায় কিবা বোঁকার দলে,
মাথায় লয়ে, পেরেসান হয়ে, জরুরী অনেক কাজের সে যেন এক বিশাল জগদ্দল পাথর ॥
হর্ন বাজায় ড্রাইভার,
আছে হেলপারেরও চিৎকার,
আর কিছুক্ষন পর পর কষে মারে প্রচন্ড থাবর,
হলেও কেউবা কানা,
কোটি মানূষের জীবন ও জীবিকাখানা,
এই ঢাকার উপর যেন হয়ে আছে একেবারে ষোলআনা নির্ভর ॥
মাছি মশা আর,
জমে থাকা নোংরা পানি নর্দমার,
এখানে সেখানে স্তুপাকার আবর্জনার ভাগাড়,
বর্ষার দিনে বৃষ্টির জলে চারপাশ হয়ে যায় তার একাকার,
যেমনই হোক খানাখন্দ,
নালা নর্দমা আস্তাকুড়ের ভীষন দূর্গন্ধ,
এই নিয়েই নিত্য জীবন এলাকাবাসীর কপাল মন্দ,
তবু সবাই করে সবর, এই শহরতো তাদেরই বসতঘর, যাই হোক যেমনই হোক শব্দ দূষন আর ধূলো বালি ও ধূয়ায় ধূসর ॥
বর্ষায় রাজপথে এক বুক কর্দমাক্ত জল,
নাড়াচাড়ায় ঢেউ খেলে যায়, বাতাসে করে ছলছল টলমল,
এমনটা করা যেতেও পারে, সে এক নব বাহারে, পৌরসভার ব্যানারে, রাজপথে হয় যদি নৌকার চল,
রাজধানীতে দারুন মজার, এক যানবাহন যার মজাটাই হবে আহারে একেবারে ভিন্নতর ॥
ঐ জল নহে নির্মল,
এলাকার বখাটে ছেলের দল,
এরা কার ছেলে,
ছন্নছাড়া যত বাউন্ডেলে,
গোসলের নামে কাজকাম ফেলে,
নাই ভাবনার চিন, তাই অর্ধদিন যায় চলে ডুবখেলা খেলে,
সেতো নয় ঝিল কিবা নদী, সে ছবি দেখবে যদি আমার সংগে চলো, না হলে তাদের আর তবে হবে কার টাইফয়েড সর্দ্দিজ্বর ॥
যাদুর মায়াটা এমন,
তবু ছাড়িতে চাহেনা মন,
একি ভালবাসা নাকি কোন দায় প্রয়োজন,
শুনেছি বলিতে গাঁয়ের গুরুজন,
আগের, গ্রামের সেই,
রুপ ও মজা এখন আর নেই,
যেওনা কেউ তবু ছেড়ে এই ঢাকা ,
যদিও থেমে যায় থমকে দাড়িয়ে গাড়ীর চাঁকা,
কেউ পায় কেউ পায়না দেখা, বাতাসে নাকি উড়ছে অঢেল টাকা,
যদিও সবে তার ভাগ স্বাদ নাহি পায়,
কোন না কোনভাবে আধো সুখেতো দিন চলে যায়,
কত চোঁখে সোনালী মধুর স্বপ্ন আঁকা,
দেখি শত মায়াবী রঙ রুপসীর ঢঙ মোখেতে মাখা,
যেওনা ছেড়ে, থেকো বসে খুটি গেড়ে, ঘূপটি মেরে, যদিও কভূ পড়ে এই শহরে কহর ॥
ঢাকার ভিতরে আছে এক অন্য ঢাকা,
কত অজানা কষ্ট, ঠাসাঠাসি করে পূরো পরিবারে এক ঘরে থাকা,
কত মালামাল, এলোমেলো বেসামাল, একটার উপরে তিনটা গাদাগাদি করে রাখা,
ঘরে বাহিরে যেন শুধু খাই খাই, ভোর হতেই সবার চাই, লাগে তাই অগনিত টাকা আর টাকা,
বাসায় থাকার জায়গা নাই,
তাই দিনেদিনে চলে যেতে হবে, যা আছে খাবার খাই,
কোন মেহমান,
আজকাল কেউ আর নাহি চান,
তবুও সবার প্রিয় এই আধূনিক বিরস যন্ত্র জীবনখান,
ঢাকার ভিতরে রয়েছে ঢাকা,
অজানা নাবলা কত কথা সুখ ব্যাথা লুকিয়ে রাখা,
কত স্বপ্ন আশা পথভ্রষ্ট, কত না পাওয়া কিবা হারাবার বুকফাটা কষ্ট, গোপনে জমে থাকা এই মনের ভিতর ॥
নিশ্চয় শুধু নয়,
সবকিছু কালিমাময়,
তবে কবেইতো যেতাম ছাড়ি,
না গেলেও বা কিছু না পেলেও দিতেম আড়ি,
কত সারি সারি,
উঁচূ উঁচূ অগনিত বিশাল বাড়ী,
দামী দামী লক্ষ কোটি কত বাহারী বিলাসী গাড়ী,
দোতলা সড়ক, তবু ঐটুকু পথ বাস লরীগুলো কেন পারেনা দিতে পারি,
অভিজাত আবাসিক এলাকা,
যেন ছায়াঘেরা মায়ময় যাদুর আবেশ মাখা,
হাতির ঝিল,
মাছে ভরা কিলবিল,
শান্ত সুনীল পদ্ম শাপলার বিল,
ছুটোছুটি করা মাছরাঙা পানকৌড়ি গাঙচিল,
পেতো যদি মন কখনও এমন, কত ভাল হত নয়নাভিরাম মনের মত, মনেরাম পরিপাটি সুন্দর ॥