পর্ব – ০১


গায়ে ছিল দুরন্ত ছুটে চলার ঘাম,
সজোরে আমি দ্রুত দরজার কড়া নাড়ছিলাম,
কার আছে কার নেই আলো ঝলমল রঙমহল সুরম্য প্রাসাদ ধাম,
এ যেন হার-জিতের এমন এক দৌড়, শুধু অল্প জনেই জানে তার চরম পরিণাম ।
জানতেই হবে বিদ্যা ও বিত্ত-ধনে,
নাকি আসলে লোকের অন্য কোন গুণ কিবা কারণে,
অধিক মন্দজনের এ লোকসমাজে,
যেথা গহীনে নিরবে অবিরাম ভয়াল অশনি ঘন্টা বাজে,
আচরণে, কথায় ও কাজে নাকি সংশয় কিবা লাজে কম-বেশীর হেরফের হয় মানুষের দাম ।
অবিরাম শুধু নাড়ছি আর নাড়ছি,
যা মোর মন চায় আমি কিরে তা করতে পারছি,
চাওয়া ও পাওয়া কিবা না পাওয়ায় অবিরত শুধু কিরে তবে হারছি,
সাগর জলের জলন্ত ঐ আগ্নেয়গিরিটার সে কি অরুপ বাহার, তবে কি সেদিকেই সবে বাড়ছি ।  
বাহিরে বহিছে প্রচন্ড দমকা হাওয়ার বাদল ঝড়,
ঐ সে দামাল ঝাপটায় জলে ও কাদায় দিয়েছে আধো ভিজায় সব মোর কাপড়-চোপড়,
বিজলীর ঘন চমকে উঠে থমকে ইশারায়,
মাঝেমাঝে পলকের একনজরে পথ-ঘাট ও নিজেরে ক্ষণিক দেখা যায়,
ঐ সে রুপ যেন বিভৎস মৃত্যুকূপ, অমাবশ্যার গভীর রাতের মেঘলা কৃঞ্চ আকাশটা ভয়ংকর ।
আমি যেথা এক ভিনদেশী মুসাফির,
সব হারিয়ে যেন তাই বড়ই অসহায়, ক্লান্ত ও অধীর,
নাইবা পেলে ওরে সোনার মুকুট ও সিংহাসন কিবা ঢাল, তলোয়ার ও তীর ।
সত্য বলো সুপথে চলো এ বাণী চিরন্তন,
মানুষ হও অ মানুষ নামের জগতের যত অমানুষগণ,
হয় কি বিশ্বাস পড়ে কি স্বরণ, মরণের পরেও আছে একটা অনন্ত জীবন ।
কেনরে হয় এমন,
মাটির মানুষের মাটির দুনিয়ার জীবন,
এত মনোহর চাহেনা করিতে পর যে মধুর শিহরণ,
বেলা বয়ে যায় মজার খেলায়, হঠাৎ এসে ধরে নিয়ে যায়রে মরণ,
আফসোস, অভিযোগ, হতাশা ও অতৃপ্তির ক্ষরণ,
অনেক কাজ, অনেক সাধ ও অনেক দায়-ঋন তবে কেনরে তা শুধু কিছুক্ষণ ।
দেরী কেন তিলক্ষণ হোক শুরু এখন,
ভালকথা বলা ও ভালকাজ করার এসো সবাই করি পণ,
দুঃখের সনে সন্ধি করে ও ঢেউগুলিরে ঝাপটে ধরে নতুন জীবন করি গঠন,
ছিলনা রাজ্য কিবা রাজার বিত্ত-ধন,
যেটুকু সামাণ্য হয়েছিল আহরণ ঠিক খড়কূটোর মতন,
যার দান সে ই আবার কেন করে হরণ,
দেওয়া নেওয়ার মাঝে প্রতি কথায় কাজে পরীক্ষা যাচাই সারাক্ষণ,
তাইতো হতেও পারে এমন, সব হারিয়েও ঐ নিঃস্বের ধন সবার শেষে তুমিই মহাবীর ।
ঝোপের ভিতর,
একখানা পুরাতন ইমারত ঘর,
অচিন এলাকা মাঠ-ঘাট পথ-বাট তেপান্তর,
যেথা বেধেছে বসত জোনাকি ঝিঝিরা ও পোকা-মাকড়,
সাপ, ব্যাঙ, কেঁচো ও কচ্ছপগুলির নিরাপদ বিচরণ বাস মাটির ভিতর,
ঝুলছে বাদুর, ডাকিছে ডাহুক নির্ভয়ে উড়ছে ও ঘুরছে সব প্রজাতির পাখীরা নিশাচর,
ভিতর থেকে ছিল যার বন্ধ দুয়ার,
ঐ ঘরখানার, ভিতরেও যেন গড়েছে আসন করেছে দখল ঘন কালো অন্ধকার ।


পর্ব – ০২


আশেপাশে যেন নেই কোন লোকালয়,
এমনই বিজন, শুধু বাতাসের শনশন, নিরব ও নিঝুম মনেহয়,
আমি আরষ্ঠ ও জব্দ, গগন ফাটা দেয়া ডাকার শব্দটা ছাড়া ঝাপটে ধরা গা ছমছম করা ভয় ।
ভিতর থেকে এবার এলো আওয়াজ,
কাঁপা কাঁপা তবে যেন ছিল তা গুরুগম্ভীর ও দরাজ,
কে তুমি, কোথা হতে কেন আসা, কি চাও বলো এখানেইবা কি তব কাজ ।
ছাড়ো বাহাদুরি ও অহংকার,
দেওয়া ও নেওয়ার মজার সে খেলার,
যখন যেমন ইচ্ছে তার ষোলআনা ক্ষমতা ও অধিকার,
পাষাণ প্রাচীর, লৌহ ফটক ও সোনার কপাটে শক্ত খিল আঁটা আছে যার,
বলো কে তোমার মালিক আর তুমিইবা কার, তবেই ভাই মিলবে ঠাই খুলে যাবে সব দুয়ার ।
ভয়ংকর অদৃশ্য সাজ,
হতে পারে এখনই শুরু আসমানী ঐ বাজ,
যদি ভাল চাও জলদি পালাও, এখন যাও ভাই আর বেশী কথা নয় আজ ।
আমার কেউ নাই কিছু নাই,
আমিও বেচুইন, বড়ই পেরেশান ও অসহায় তাই,
ঐ রাজারে খুঁজে আজও আমি নাহি পাই, জানিনা কি করি এখন আহারে কোথা যাই ।
অসৎ ও জুলুমবাজেরা সব গড়ছে ধনের পাহাড়,
চারিদিকে শুনি কান্নার রোল আর মিথ্যা, মন্দ ও ভন্ডদেরই জয়জয়কার,
ঐ মহারাজা কই, এসে হিসাব লই রাজারে দিবে উচিৎ সাজা ও বিচারকদের করবে বিচার ।
অক্ষমতার কছে মেনেছে আজিকে হার,
চক্ষু বুঁজে কানে দিয়ে তুলো ডানামেলা সব সোনালী সাধগুলি আমার,
তাই অতি গোপনে এ স্বেচ্ছা নির্বাসনে খুঁজে পেতে চাহে কোনঠাসা বসত মম শত বাসনার ।  
করেছি আমিও হিজরত,
হারিয়ে শেষে নিরুদ্দেশে সব দিক ও সকল সহজ পথ,
ফেলে এসেছি আমি চোখ ভরানো যত মনের মত দামী বিত্ত-ধন, আপন জন ও সংসার ।
আমিযে একা, ঘরেতে আমার,
নাই বিছানা, মশারি, বালিশ ও চাদর কোন খাবার,
যা ছিল মোর জীবনের কর্মগুলির সমাহার,
বড় অসহায় বোধ এই বুঝি প্রতিশোধ নিশ্চয় নির্মম বিনিময় প্রতিফল তার ।
আলো আর ভালো নেই,
নহে আমি আর ওরে আগেকার নবাব সেই,
সাধ আছে মোর সাধ্য নেই, বলো কি আমি তোমারে দেই,
ভরা দীনতা শুধু আজ, দেখা আর নিরবতার অনুভব ছাড়া বাকী সব কিছুতেই,
ভয়েতে অসাড় অক্ষমতা কিছু করার, সারা ঘর ভরা হু হু হাহাকার করা এক ঘন অন্ধকার ।
আমার মাথায় মহারাজার,
দয়া করে দেওয়া যত নেয়ামত ও উপহার,
খতিয়ানে লিখে রাখা সমূহ তার দানগুলি অপার,
দাদনের বকেয়া যত সব দায়-দেনার বিশাল বোঝার ভার,
আমি নিজেই এখন বড় আপদে ও নিদানে, কেউ নাই আর কিছুই নাইযে আমার ।
এইযে ভূতল আর,
তার বুকে শুধু জল আর জলে একাকার,
পানিতে ভাসমান এ পৃথিবীখান বিষয়টা কি দারুণ মজার,
আর খুঁটিহীন সাত আসমান, অফুরান নেয়ামত দান, কোন সীমাণা নাই যার ।
যত উপহার করুণার,
শুধু তারই একক মালিকানা যার এ মহাবিশ্বটার,
ক্ষমার তলে যতনে ও কৌশলে ঢেকে রাখা অদৃশ্য চমৎকার পুরস্কার মহাসম্ভার,
আমিযে ভাই এখন ওরে তাই বড়ই অধীর, করেছে কাতর ভাবনার ভীড় ও মোহতাজ হয়ে আছি তার ।  


পর্ব – ০৩


আমি আবু হক,
জীবন ভরা শুধু ভুল, অপরাধ আর ঠক,
সুবক্তা ছিলাম, নহে নিতে জ্ঞান দিতে জনমভর শুধু করেছি বকবক,
অবকাশ নাহি পাই, হয়নি করা যাচাই ও বাছাই সত্য-মিথ্য, ন্যায়-অন্যায় ও মন্দ-ভালোর পরখ ।
খুঁজেছি শুধু সোনা,
ভরেনিতো মনের সব কোণা,
তাই হয়নিতোরে ভাই পুণ্যের বীজ বোনা,
বিভোর মোহ ঘের নাকে দিয়ে রশির হেঁচকা টানে বিষানো জীবনখানা,
ছিলেম বলে কানা বুঝি তাই যা দেখেছি ভেবে সুখ ও বিজয় হয়েছে পরাজয় মজেছি দেখে ঝলমলে ও চকচক ।
ঐ মানুষ আমি – মাটির তৈয়ার ইনসান,
যে নবীর নূরে উজালা সাত জমিন ও সাত আসমান,
মোহাম্মদের কালেমা পড়েই মাফ হয়েছিল বাবা আদমের গুনাহখান,
আমি তার উম্মত, চেয়েছি রহিতে সৎ, দিশারী কান্ডারি কুলমাখলুকের যিনি শ্রেষ্ঠ ও চিরমহান ।
ঘুম হতে জেগে দেখি ভাই,
রাতভর আমি ঐ মাটির মেঝেতে ছিলাম ঘুমাই,
দুনিয়ায় যাদের ছিল ঔদ্ধত্য, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, ছল ও বড়াই,
শেওলা ভরা, ঘুণে ধরা ও ইটগুলি খসে খসে পড়া যে বাড়ীর এখন আর কোন ওয়ারিশই নাই,
চেতনা ফিরে অনতি দূরে সমবেত শুরে, আমি মহানিদানের নরকের আত্বাদের করুণ চিৎকার শুনতে পাই ।
হে প্রভু তোমার ক্ষমা ও করুণার সাহায্য চাই,
মিথ্যে নহে মম ধারণা, বলো তুমি কি পারোনা আর কি ধন তব কাছে নাই,
দুহাত পেতে ও ডালা সম থালা বিছাই,
দুনিয়ায় যেখানে যত আমারই মত সে আশায় অবিরত রয়েছে ঠায় দাড়াই,
আর দুনিয়ায় যারা তোমার সৃষ্টির সেরা ও যতনে আদরে করুণার চাদরে ঘেরা মর্যাদায় সমতুল কেহ নাই ।
নিঃস্ব, নিরীহ আদম সন্তান,
নাই হারামের কামাই ও নহে যারা অবৈধ ক্ষমতাবান,
তমসা আসিছে ঘনায় তাদেরই মাঝে আমি অসহায় একজন অতিশয় ম্রিয়মান ।
নিষ্ঠুর বর্বর ও কঠিন পাষাণ,
যেথা দর্পে বিচরে লাখো বিধর্মী, নাফরমান ও বেঈমান,
হয়ে বন্দি মন্দের সনে করে সন্ধি বাঁচিবার তরে আনচান ছটফট করা এক প্রাণ,
তুচ্ছ নগণ্য অতি সাধারণ, একজন বাংলাদেশী নাই তেমন বিত্ত-ধন, বিদ্যা ও পেশী হেন মুসলমান ।
ফেরেস্তা ও জীনকুল সবাই,
করেছে বিরোধিতা বলেছে খোদা তার দরকার নাই,  
তব মহান সহস্র নেয়ামত ও দান তবু তুমি তোমার মাটির এ মহাজগতে দিয়েছ ছড়াই ।
সব বিশ্বাসী ও অনুগতরা লয়ে দুহাতে কুড়িয়ে তাই,
তারা ধন্য হয়েছে মরেও বেঁচে রয়েছে, ভিতরে বাহিরে সারা গায় সে সুধা মাখিয়ে ভরাই,
তব ইচ্ছা হয়েছে ও হবে যখন যাই,
আমিতো সদাই সেকথা বলি আর, তব অপার সে ক্ষমতার গুণগান গাই,  
বড় হতভাগা সে জানেনা করেনা যে তব বড়ত্বের বড়াই,
হে প্রভু তুমি গড়েছ ও রুপে ভরেছ জগত, তোমার কুয়ত কুদরত করুণা মহাজ্ঞান ও রহমত কিছু বাকী নাই ।
ভাবিনাতো জয়-পরাজয়,
কি আছে মোর কি নাই তা নহে বিষয়,
মনেতে অনেক আশা যদিও বুকেতে লুকানো বিপুল ভয়,
ক্ষুদ্র সৃজন মম এ সত্য বচন ও লিখন ছড়িয়ে দিওগো প্রভু তব সারা বিশ্বময়,
করিতে চাহি তব মহিমা গাহি ঐ সে কাম, আমারে হে মনিব যেমন তোমার করাতে ইচ্ছে হয় ।
তবে বলো হে পাকজাত আর কিসের ভয়,
ঐ পয়গাম ও সওগাত জগত করিতে জয়,
আকাশ. বাতাস. মাটি ও জল নিশ্চয়তো আর কারো নয়,
আমার বড় পুণ্য করিতে বাসনা হয়,
তোমার যত সত্যগুলি লেখে ও বলি আর বুকে ধরে, দুহাতে শিরে তুলি লয়,
ধন্য আমি আবু হকে পরমানন্দে কয়,
হয়েছি যে সৃষ্টির সেরা ও দামী, একেশ্বর প্রভুর গোলাম এইতো আমার আসল নাম ও শ্রেষ্ঠ পরিচয় ।