ঋতু দর্পণ
অচিন্ত্য সরকার
গ্রীষ্মে তপ্ত ধরা, রুষ্ট দিবাকর
মাঠঘাট চৌচির পিপাসার্ত ঘর।
খাঁ খাঁ দুপুর বেলা ক্লান্তিতে কর্মে হেলা,
ঊর্ধ্বে দু’হাত তুলি চাষি মাগে বর
মেঘ দাও,বারি দাও হে করুণাসাগর।
মাঝে মাঝে বৈশাখী ঝড় ওঠে প্রবল
যেন সে আনিবে প্রলয় এই তার ছল।
শ্বেত বলাকার দল সব নীড় পানে ধায় করে কলরব,
হুংকারি ছুটিয়া চলে কালো মেঘদল
টান পায়ে ঘরে ফেরে পথিক সকল।
বর্ষায় সরস ধরা পরিপূর্ণ তটিনী
কেতকি কদম মালা পরিল ধরণী।
যৌবনে উর্বশী বর্ষা আজ এলোকেশী,
সিক্ত বসন তার সিক্ত উড়নী
সলিল মগন কায়া ধরিল অবনী।
বাদল টুটিল প্রায়, শরৎ আসিল
সাথীহারা মেঘদল আকাশে ভাসিল।
সবুজে জীবন্ত ধরা প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা,
বর্ষা জাগাল প্রাণ নির্জিব যা ছিল
সুরভিত শিউলীরা দল মেলে দিল।
লক্ষ্মীর আশীষ-পুষ্ট হেমন্ত পড়িল
চাষির আঙিনা তাই ফসলে ভরিল।
নবান্নের উৎসব করি বাংলার নর নারী,
ঘরে ঘরে পিঠে পায়েস সকলে রাঁধিল
বাতাসে হিমের ছোঁয়া শিহরণ দিল।
কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে তরা
আসিল কম্পিত শীত সবজী ভরা।
নতুন খেজুর গুড় স্বাদে গন্ধে ভরপুর,
দুর্লভ সূর্য কিরণ অতি দর্পে ভরা
পত্রহীন বৃক্ষ শাখে ছেয়েছে ধরা।
পিক ডাকে পোহালো শীতল যামিনী
ফুলসাজী হাতে দাঁড়িয়ে ঋতু-কামিনী।
কৃষ্ণ চুড়ায় আগুন দ্বারে এসেছে ফাগুন,
দক্ষিণা মলয় ব্যজনী দুলায় সোহাগী ঘরণী
ফুল শষ্যায় শায়িত আজিকে রুপসী মেদিনী।