(শ্রদ্ধেয় এডমিন আশফাকুর রহমান পল্লব মহোদয়ের প্রেরিত বাণী)


''আজকের এই ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী কবি সম্মেলন ২০১৯’-এর সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ ও আয়োজক সহ উপস্থিত সবাইকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবারের অনুষ্ঠানেও আমি সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। তারপরও আমার এ বক্তব্যের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আছি, এটুকুই আমার সান্ত্বনা। আসলে চাইলে পরেও সবসময় সময়, দূরত্ব ও পারিপার্শ্বিকতার সীমা অতিক্রম করা যায় না। আপনারা যারা এই সীমা অতিক্রম করে আজ এখানে এসে মিলিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন!


আপনারা জানেন, বাংলা-কবিতা ডটকম-এর প্রতিষ্ঠার ইতিমধ্যে দশ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুব সাদামাটা ভাবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু কবিতার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা ও সম্পৃক্ততায় এটি এখন অনলাইনে বাংলা কবিতার এক অনন্য সংগ্রহশালা ও চর্চাপীঠ। দশ বছরে নানারকম ফিচারে সমৃদ্ধ হয়েছে এই সাইট। কবিতার আসরের পাশাপাশি আলোচনা বিভাগ ও আড্ডাঘর রয়েছে। কবিতার সাথে আবৃত্তি ও কবিতার বই যোগ করার ব্যবস্থা আছে। আছে সরাসরি বাংলায় টাইপ করা ও বানান যাচাইয়ের ব্যবস্থা। সাইটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আসরেরই নিবেদিতপ্রাণ ১২৪ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন।


এই দশ বছরে আমাদের দশ হাজারের ওপর সদস্যের সোয়া দুই লাখেরও বেশি কবিতা এখানে সংরক্ষিত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের মতো পাঠক কবিতা পাঠ করছেন। তার চেয়েও বড় কথা একে অপরের সাথে কবিতা বিষয়ক ভাব আদান প্রদানের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই আরও ঋদ্ধ ও পরিশীলিত হয়ে উঠছি কবিতা লেখায়। আমার নিজের দশ বছর আগের লেখাগুলোর সাথে বর্তমানের লেখার তুলনা করলেই পার্থক্যটা চোখে পড়ে।


আগেও বলেছি, আবারও বলছি। এতো কিছু সম্ভব হয়েছে আসরের প্রতিটি সদস্যের আন্তরিক অংশগ্রহণে। আপনারা এই আসরকে আপন করে নিয়েছেন, নিজেদের সময় ও শ্রম দিয়ে একে নিয়ে এসেছেন বর্তমানের এই অবস্থানে। তাই আজকের এই বিশেষ ক্ষণে আসরের সকল সদস্যের প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা।


এই ওয়েবসাইটের মূল লক্ষ্য ছিলো দু’টি; প্রথমত: কবিতা লেখালেখির এক অনলাইন প্লাটফরম তৈরি করা, এবং দ্বিতীয়ত: অনলাইনে বাংলা কবিতার এক সংগ্রহশালা তৈরি করা। গত দশ বছরের কার্যক্রমে এই দু’টি লক্ষ্যই বলা যায় পূরণ হয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যেমন তৈরি হয় নতুন চাহিদার, লক্ষ্যেও পরিবর্তন আসে। তাই আমাদের নতুন লক্ষ্যের প্রতিও কিছুটা আলোকপাত করতে চাই এই সুযোগে।


আমাদের কবিতার আসর মূলত: এক অনলাইন পোর্টাল। কিন্তু কবির মন শুধুমাত্র ভার্চুয়াল জগতে সীমাবদ্ধ থাকার মতো নয়। এই মন সতীর্থদের সাথে সরাসরি দেখা করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সদস্যেরা বর্তমানে প্রায় প্রতিমাসেই বলা যায় নিয়ম করে কোথাও না কোথাও মিলিত হচ্ছেন কবিতার আড্ডায়। এটি নিঃসন্দেহে কবিতার চর্চায় নতুন এক মাত্রা এনে দিয়েছে। তৈরি হচ্ছে সম্প্রীতির নতুন বন্ধন! এই বন্ধনের শাখা-প্রশাখার বিস্তার দেশ ও স্থানভেদে আমাদের সবাইকে এক প্লাটফরমে এনে দাঁড় করিয়েছে! এবং আজকের এই ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী কবি সম্মেলন’ তারই অনন্য উদাহরণ। ভবিষ্যতে এধরণের মিলন পর্ব আরও কার্যকর ও নিয়মিতভাবে করতে পারাটা আমাদের নতুন এক লক্ষ্য।


এছাড়া আমাদের কবিতার আসর অনলাইন ভিত্তিক হলেও প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বাঙালী পাঠক মাত্রেই বই হাতে নিয়ে পড়ায় এক আলাদা আমেজ অনুভব করেন। কবিও চান তাঁর কবিতা যেন বইয়ের পাতায় শোভা পায়। আর তাই আমরা বিভিন্ন সময় আসরের সদস্যদের কবিতা নিয়ে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি ইতিপূর্বে। আমাদের অনলাইন পোর্টাল অবাণিজ্যিক লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকটি থেকেই যাচ্ছে। তাই নিজস্ব প্রকাশনার মাধ্যমে আরও কম খরচে ভালো মানের বই প্রকাশ করা নিয়ে ভাবছিলাম অনেক বছর ধরেই। কিন্তু প্রবাসে বসে অনলাইনের পোর্টাল পরিচালনা সম্ভব হলেও প্রকাশনার মতো কাজ সম্ভব নয়। তবে সেটিই গত বছর থেকে সম্ভবপর হয়েছে আমাদের আসরের একনিষ্ঠ সদস্য কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের নিঃস্বার্থ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। গত বছর বাংলাদেশে অর্ক প্রকাশনী নামে যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তা অনিরুদ্ধ বুলবুলের নিজস্ব প্রচেষ্টায় অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিমধ্যেই তাঁর সম্পাদনায় স্বল্প খরচে বেশ কিছু বই যেমন প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে, তিনি নিজ খরচায় প্রতিমাসে ‘আলোর মিছিল’ নামক এক সাহিত্যপত্রও প্রকাশ করে যাচ্ছেন। আমাদের সব সদস্যের কাছে এই প্রকাশনীর সেবা পৌঁছে দেয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আরও কম খরচে কিভাবে বই প্রকাশ যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে খরচের অনেকটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্য আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।


অপর একটি বিষয়ে আলোকপাত করে আমার বক্তব্য আমি শেষ করবো। একজন লেখক হলেন সমাজের দর্পণ। তাই কবি হিসেবে সমাজের প্রতি আমাদের প্রত্যেকেরই দায়বদ্ধতা আছে। সেটা শুধু কবিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমার মনে হয় অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব। কিছুদিন আগে আমাদের প্রবাসী সদস্য ড. শাহানারা মশিউর প্রস্তাব রেখেছিলেন প্রতিবন্ধী শিশুদের উৎসর্গ করে বই প্রকাশের। এ লক্ষ্যে অর্ক প্রকাশনীর পক্ষ থেকে সম্ভবপর সবরকম পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা সবাই আমাদের আশেপাশে সমাজসেবা মূলক কিছু না কিছু করতে পারি। কি করা যেতে পারে তা নিয়ে ভেবেচিন্তে আপনাদের মতামত তুলে ধরুন আমাদের আলোচনা বিভাগে। আমাদের নিয়মিত আড্ডাগুলোর কিছু অংশ এ নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনায় ব্যয় করা যেতে পারে।


একজন মানুষ যখন একটি স্বপ্ন দেখে, সেটি স্বপন রয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। কিন্তু একটি সমষ্টি যখন একসাথে সেই স্বপ্ন দেখতে থাকে, তখন তা আর স্বপ্ন থাকে না। বাস্তবে পরিণত হয়ে যায়। তাই যার যার স্বপ্ন তুলে ধরুন কবিতায়। চলুন সবাই এক সাথে এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। বাস্তবে ফুটিয়ে তুলি আমাদের এক একটি স্বপনকে।
সবাই ভালো থাকুন। এই কামনায় আজকের মতো এখানে শেষ করছি। ধন্যবাদ!''