//একা হলে অকারণে


হে সুদীর্ঘ রাত্রি ঘন, জলো অন্ধকার
আবার আমাকে খোলো, খুঁজে দ্যাখো সব,
আমার অরূপ দেহ, নীরবতা মোহ
ছেনে দ্যাখো সবখানে, মাথার গহিনে
মধুর চাকের মতো সূর্যমুখী যত
হেলে আছে ঢেউতোলা স্রোতের ভেতরে—
যত অতলতা রাতের আঁধার হয়ে
চোখের জানালা ভেঙে ঢুকে গেছে ধীরে—


তাদের নিকটে দ্যাখো পিপাসা তারিয়ে
শুয়ে আছি অবিরাম ভাষাহীন স্বরে—
কী-বা হবে শুধু ভেবে মাস্তুলের পরে
কেন চাঁদ লেগে থাকে শরত-নরমে—
কেন শুধু একা হলে পরিযায়ী লাগে
কী-বা হবে শুধু শুধু অকারণ ভেবে!


//কী আছে অথবা নেই


গহিন পথের দেহে জমানো পাথরগুলো
মনে হয় যদি মৃত অথবা ধূসর জলো—
যদি গাছের পাতায় নদীর জলের কালো
গাঢ় কোনো আঁচ রাখে, আর দৃশ্যের শরীরে
কোনো এক অকারণে সৌদামনী রাত আনে—
কিংবা যদি পেরুবার সব উদাম প্রবেশে
কুয়াশা পিছলে যায় ক্রমশ ক্ষয়ের দিকে,
বা করোটিতে এসব কেবলই অবিদিত—


নিঃসঙ্গ মাথার কাছে কাঁপে তব বিচলিত—
আত্মকরুণার দিকে কেবল অনঙ্গ কোনো
ঘন ছায়ায় নিকানো সমুদ্রের ঢেউয়েরা
সাদা বুকের ভেতর ছোটো ছোটো ঘোরলাগা
বর্ষার নরম ছাঁট সাময়িক রেখে যায়—
আর হাওয়ায় ওড়ে কোনো একক পিপাসা—


//তাকে শুধু রোদ বলি


আকাশে আকাশে আজ উদাম ফুটছে সুমাত্রার রোদ
মাথার পেছনে সূর্যের ধারালো ছায়া শুধু দীর্ঘ হয়—
জলের দোকান থেকে পিছলে আসছে মানুষের হল্লা,
বনের ভেতরে আমি শিকারীর বেশে তবু বর্ষা খুঁজি—
ঘন মরীচিকা চরাচরে ছেয়ে গেছে—যেন দুটো জুন
ভাঁজ করে রাখা আছে বাতাসে বাতাসে—ধবধবে সাদা
আরবি ঘোড়ার কাছে অবিরাম কাঁপে সবুজ ফলেরা,
যেন তাদের শরীর গাঢ় হয়ে গেছে উষর বাতাসে—


তবু শিকারির বেশে মহুয়ার ফুলে আমি রোদ দেখি—
মাথা দোলানো বনফুলেরা নুয়ে পড়ে সমূহ বাতাসে,
যেন তাদের কাছেই কোজাগরী রাত মৃদু হেলে আছে
কিংবা পাখিদের নিবিড় বাড়িতে দেখি কিছু উৎসব—
তাদের করোটির ভেতর যেন সব পৃথিবীর রঙ
জ্বলজ্বলে অভ্যাসে নিকানো আছে বিকেলের মতো—  


//আলাদা আহ্নিকে আলাদা কুহক


দিনভর রাতভর সমূহ বর্ষার পায়ে নিভু নিভু কেঁপে
পাতাদের ফাঁকে ফাঁকে সাদা-কালো মিনা করা ঘন সারিবাঁধা
ক্রমশ সরে যাওয়া ডাগর শামুকদের গাঢ় নির্জনতা
গভীর দেখেছে যাওয়া, অথবা বর্ষার জাঁকালো ভ্রান্তিতে নুয়ে
সে সব কিছু না দেখে বর্ষাতি ব্যতীত সব জলো সীমারেখা
দ্রুত পার হয়ে যারা হেঁটে গেছে অগোছালো পথের ভেতরে
কিংবা অনেক সহজে দোটানায় পড়ে সব ফণা নত করে
ফিরে ফিরে আসে যারা খসখসে রোদ আর গাছের ছায়ায়—


তারা কিংবা পথিকেরা, পৃথিবীর সব পর্যটক মানুষেরা
জলকাটা জুতো খুলে বর্ষার মাথার পাশে নগ্ন পায়ে যদি
পরিযায়ী হেঁটে যায় উদাম সন্ধ্যের কোনো ভাঙা অনুপলে—
আচমকা কিংবা ধীরে ভিজে যায় শরীরের সবগুলো নখ
আর মিহি পশমেরা—তবুও কুহক থাকে সবার আহ্নিকে
ভারী জলে কেউ ভাসে, কেউ শুধু কাঁপে মৃদু ঝরা সান্ধ্য জলে—