দিনের শেষ প্রহরে রক্তিম রবি ডুবে যায় যায়,
অলস একা বসে আছি দখিনের জানালায়।
দূর দিগন্তের পানে চেয়ে ডুবেছি আপন ভাবনায়,
আমিও যে আজ দাঁড়িয়ে আছি জীবনের শেষ বেলায়।
খোলা জানালা ধরে বাতাস আসে, আসে হতাশা
চোখ বুজিতেই ভ্রম ভাসে, নিজেকে করি জিজ্ঞাসা,
কি করেছি এত কাল, করিলাম কার জন্য?
সঞ্চয় বলিতে কিছু নেই আজ, আছে কেবল শূন্য।


আহারের পাতে মাংস পোলাও ছিল প্রতি বারে,
পাশের বাড়ির রহিম শেখ মরিল অনাহারে।
রাজ প্রাসাদে সুখের নিদ্রায় ছিলাম বৃষ্টির রাতে,
রহিমের খাট ভিজেছিল সেদিন বৃষ্টির জলেতে,
ঘুরিয়া ফিরেছি কত দেশে দামী জামা দিয়ে গায়,
ছেঁড়া জামাটাই সম্বল ছিল রহিমের শেষ বেলায়।
শহরের বড় ডাক্তার দেখিল মাথা ব্যথা ছিল মোর,
ঔষধ ছাড়াই রহিম শেখ বাঁচিল এতটা বছর।
নিজের কথাই ভেবেছি কেবল ছুটেছি ধনের পিছে,
বিধির বিধান ভুলিয়া ছিলাম দেখি নাই আশে পাশে।


আজ মোর ধন অনেক আছে অন্যের উপভোগে,
ভোগ করিতে পারিনা নিজে ভুগছি নানা রোগে।
আমিও যাবো পৃথিবী ছাড়ি হয়তো নিকটে সেদিন,
রহিম, আমি একসাথে রবো শেষ বিচারের দিন।
আমার পাতে মাংস পোলাও রহিম কেন অনাহারে?
ছেঁড়া জামা গায় রহিম কেন চিকিৎসাহীন মরে?
সেদিন কেন বৃষ্টির জল ঝরেছিল রহিমের ঘরে?
এমন হাজার প্রশ্ন সেদিন জিজ্ঞাসিবে মোরে।
উত্তর কি দিব ভাবিতেছি, কি সাজা হবে মোর,
ভয়ে তরতর কাঁপিতেছি আজ, কাঁদিতেছে অন্তর।
নিজের জন্য করেছি ভেবে গড়েছি কত ধন,
অলস বেলায় বসে ভাবি এত সব নিষ্প্রয়োজন।
আজ বুঝিলাম জীবনের মানে শেষ প্রহরে এসে,
নিজের জন্য করেছি যত সবটাই তার মিছে।
আজি দুহাত তুলেছি তার দরবারে, অশ্রু সজল আঁখি
হে দয়াময়, দিও ক্ষমা মোরে, আজ এই করি মিনতি।