অদম্য কৌতূহলের বাক্সটাকে হৃদয়বন্দি করে
অবশেষে পা রাখা গেল ঠাকুরবাড়ির উঠোনে ।
পঁচিশের সকালে তখন ছা-পোষা কেরাণী থেকে
বুদ্ধিভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবি, নেতা-নেত্রী, কে নেই সেখানে ?
বাইরে নামী-অনামীদের কবি প্রণামের আয়োজন,
অন্দরমহলে অগণিত মানুষের বিহ্বলিত চোখ ।
হঠাৎ নজরে এল পাথরে খোদাই করে লেখা,
“মোর নাম এই ……. আমি তোমাদেরই লোক” ।
অব্যক্ত যন্ত্রনায় বুকটা হু হু করে কেঁদে ওঠে,
“সব ঝুট গুরুদেব, আমরা তোমার কেউ নই” .
আমরা বিশ্বায়ণের পূজারী, সংস্কৃতির ব্যাপারি
তাই রকে-পপে তোমার গান ফেলেছে হৈ চৈ ।


ত্যাগী বাঙালি আজ পদবী ছাড়া সব ছেড়েছে
আমাদের বাঙালিত্ব প্রমাণে তুমিই শুধু সম্বল ।
বিজ্ঞাপণের কোটেশনে, নেতা-নেত্রীর বক্তব্যে
যতই ভুল থাক, তুমিই তাদের স্ট্যাটাস সিম্বল ।


ঠাকুরবাড়িতে সব থেকেও মনে হয় কিছু নেই
চিত্র-ভাস্কর্য্য, পত্রে, পান্ডুলিপিতে তোমার ছোঁয়া,
শুধু নেই শিলাইদহের পদ্মা, সবুজ-শ্যামল ক্ষেত
নেই ভাটিয়ালির সুর, নেই সারি বেঁধে ধান রোয়া ।
নেই প্রেম-পূজা-প্রকৃতি, আপনহারা মাতোয়ারা প্রাণ
আজ হিংসা-বিদ্বেষে জর্জরিত তোমার সাধের বঙ্গ,
গ্রাম ছাড়া হয়ে তোমার উপেন হয়েছিল ভবঘুরে
নিজ বাসভুমে পরবাসী হয়ে তুমিও, একা নিঃসঙ্গ ।
যদি পূরাণের গল্পের মতো অমরত্ব পেতে তুমি
সার্ধশত বর্ষ পরেও হয়তো তুমি এখানেই থাকতে,
তবে নিশ্চিত ভুলতেই তুমি মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম
তোমার কবিতা গল্প লিখতে হিন্দি কিম্বা ইংরাজীতে ।