লতুন বছরের বাধাঁই দিয়ে লতুন কথাটো আর কি বলবি ?
তুদের ফঁপরা বুলি শুনে শুনে হামার কানগুল্যা ভঁতে গেছে
ইটা কবতে হবেক, উটা করব্য, কবেরল্যে শুনেই যাছি
উ কথাগুল্যা আর হামদের মনে লিছে নাই, বাপের কিরা ।
হাটের মোড়ে চঙা লাগাই তরা গরম গরম বক্তিমা করে
বলতে পারবি - তরা থাকতে কেউ ভুখা মরবেক নাই,
গাঁয়ে-ঘরের কন নুনা-নুনী আর আনপঢ় রইবেক নাই,
পৈসার অভাবে বিনা চিকিচ্ছায় আর কেউ মরবেক নাই,
শিয়াল শকুনে মা বিটির ইজ্জত চ্যাটেপুটে খাবেক নাই,
যা, দম আছে তো বলে দে, তাবাদে আসবি ভট মাঙতে ।


হামি গাঁয়ের মুখ্যুসুখ্যু ধুলামাটি মাখা গরীব মানুষ আজ্ঞা,
জম্মের থেকে ক্ষ্যাপা মোষের পারা অভাবটা খেদাড়ে বুলছে
ভটের কাগজের ছবিগুল্যায় ছাপ দিতে দিতে বুঢ়াই গেলম
মাথা গুঁজার ভিটা নাই, লাজ ঢাকার টেনাটাও জুটছে নাই ।
তিনকুড়ি বছর ধরে শুনছি ভটের আগে উঁদের বিকলানি
ভট পাহিরালেই সব মিছা, শাঁষ চুষা আমড়া আঁঠির মত ।
বোশ্যাখে লতুন বছর মানানো হামদের লাগ্যে লয় রে বাপ
দুনিয়ার গরীব ভুখাদের বছরের শুরুও নাই, শেষও নাই
যিদিন জিউ জুড়াতে টুকু মাড়-ভাত আর নুন-নঙ্কা পাই
সিদিনই হামদের লতুন বছরের শুরু, ভুখা থাকলেই শেষ ।


* কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রচলিত গ্রাম্য কথ্য ভাষায় রচিত


শব্দার্থ :
লতুন (নতুন); বাধাঁই (শুভেচ্ছা); ফঁপরা (ফাঁপা); ভঁতে (মজে যাওয়া); কবেরল্যে (কবের থেকে); কিরা (দিব্যি); চঙা (মাইক); বক্তিমা (বক্তৃতা); ভুখা (অনাহার); নুনা-নুনী (ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে); আনপঢ় (অশিক্ষিত); পৈসার (পয়সার); চিকিচ্ছায় (চিকিৎসায়) বিটির (কণ্যার); দম (সাহস); তাবাদে (তারপর); মাঙতে (ভিক্ষা করতে); পারা (মতো); খেদাড়ে বুলছে (তাড়া করে চলেছে); বুঢ়াই (বৃদ্ধ হওয়া); লাজ (লজ্জা); টেনা (কাপড়); বিকলানি (বাজে বকবকানি) পাহিরালেই (পেরোলেই); মিছা (মিথ্যা); মানানো (পালন করা, উদযাপণ করা); যিদিন (যেদিন); জিউ (জীবন); জুড়াতে (তৃপ্ত করতে); টুকু (সামান্য); সিদিন (সেদিম)