যখন শুরু করেছিলাম ভাবিনি এতদুর এগিয়ে যাব । কিন্তু বাংলা কবিতার আসরে দুই বাংলার কবিবন্ধুদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ও সহযোগিতায় ২০০তম প্রকাশণীর মাইল ফলকটা শেষ পর্যন্ত স্পর্শ করার সৌভাগ্যটা ঘটেই গেল ।
আমি নিতান্তই এক সরকারী কর্মজীবি শখের কবি । মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের “কবি” পরিচয়টা যেন কাক হয়ে ময়ূরপুচ্ছ লাগানো । আমি কবিতা লিখি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যেতে পারবোনা বলে, আমি কবিতা লেখার চেষ্টা করি সমাজের যে হতদরিদ্র চির অবহেলিত মুখগুলো আমায় অহর্নিশ তাড়া করে বেড়ায় তাদেরকে একটা যুৎসই উত্তর দিতে পারবো এই আশায় । জানি না, ওগুলো আদৌও কবিতা হয় কিনা । তবে কবিতাগুলো আমার হৃদয়ের তৃপ্তি, অন্ততঃ ওদের অবহেলিত জীবনের কথা তো কমপক্ষে ৫০ জনের গোচরে আনতে পারলাম । না বন্ধু, আমার ক্ষমতাই নেই কোন সমস্যার প্রতিকার করার, শুধুমাত্র স্বান্ত্বনা জানাতেই পারি ।
আমি “কবি” নই এই কারনে – প্রেম, প্রকৃতি আমাকে সেভাবে দোলা দেয় না, যতোটা দেয় মানুষের সুক্ষ অনুভূতিগুলো, আধুনিক কাব্যিক প্রকাশভঙ্গিতে আমি শিশুমাত্র, উপমা-অলঙ্কারের ব্যাবহারে আমার দক্ষতা নেহাত শিক্ষানবীশ পর্যায়ে । সহজ কথাটা সহজ ভাবে বলতে আমি ভালোবাসি, হয়তো সেটা বিদগ্ধ কবিদের মোটেই সন্তুষ্ট করেনা ।
কেন জানিনা মধ্য পঞ্চাশে দাঁড়িয়েও আমি এখনও তাগিদ অনুভব করছিনা অন্ততঃ একখানা কাব্যগ্রন্থের জনক হবার । যদিও মুষ্টিমেয় কিছু সংবেদনশীল শুভাকাঙ্খী বন্ধু আমাকে প্রকাশনার জন্য উত্যক্ত করে চলেছেন । যদি অদুর ভবিষ্যতে এধরনের কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে তার জন্য মোটেই আমি দায়ী হবোনা, কৃতিত্ব-সমালোচনা সবই ওদেরই প্রাপ্য হবে ।
“কবিতার আসর” যেন অতিদীর্ঘ পথের এক রেল ভ্রমণ, কতো কবিযাত্রী উঠছেন, কতো নামছেন, আমরা ক’জন বসে বসে শুধু নবাগতদের স্বাগত জানাচ্ছি, পুরানোদের বিদায় জানাচ্ছি । তবুও কি ভোলা যায় ? ওঁদের কাব্যের মুগ্ধতার রেশ মাঝে মাঝেই মনকে গ্রাস করে – মৃদুলভাই, শামা বোন, প্রণবদা, প্রণবেশ আরও কতজন ! আমি ভাগ্যবান টিকিট নবীকরণ করে করে এতদুর পৌঁছে গেছি, জানিনা কবে আমাকেও গাড়ী থেকে নেমে পড়তে হবে ।
আজকের ২০০ তম প্রকাশনার পূণ্যলগ্নে আমি কৃতজ্ঞ আসরের প্রতিটি কবিবন্ধুর কাছে যাদের অকুন্ঠ সহযোগিতায় এই ঐতিহাসিক মাইল ফলকটি ছোঁবার সৌভাগ্য আমার হল । প্রত্যেককে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই ।