টেঁড়্যাবেঁকা ভাষা দিয়ে
পইদ্দের ছন্দ
লাল মাটি শাল বনে
মহুল্যার গন্ধ ।
মুহ টিপ্যে হাসা হাসি
কইলকাতা কবিদের
ব্যাটা দেখ ছিঁড়ে দাঁড়ি
খুদ রবিঠাকুরের ।
কানে তুলা দিয়ে লেখে
ভবতোষ কবিয়াল
কথা দিয়ে আঁকে শুধু
সমাজের হালচাল ।
খরা পুড়া ঝড়ে উড়া
ভুখাদের কান্না
শাগ পালা গেঁড়ি পাল্যে
মেঝানির রান্না ।
চাল নাই চুলা নাই
ভুখা পেট সম্বল
ধরনেতে জল নাই
জাইড় রাত্যে কম্বল ।
তবু লিখে দিন রাইত
ফরিয়াদি কবিতা
কেউ কেউ ছাপ্যে দেয়
বাকী ভরা বস্তা ।
নাই মালা নাই মান
গেরামের কবিদের
যাই লিখে হেঁজি পেঁজি
সম্মান শহুরের ।
তবু আজও লিখে যাছে
আদিবাসী লোকগান
সাথে আছে আজও তক
মানুষের সম্মান ।


• লোককবি ভবতোষ শতপথি আঞ্চলিক বাংলা কবিতার এক অসামান্য প্রতিভা । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে বসে রচনা করেছেন বহু কালজয়ী কাব্য । তাঁর লেখা লাইন ‘ভোগের নিদ্রা অকালে ভাঙায় ভুখাদের চিৎকার’ বা ‘তীক্ষ্ণ পাটন করে টনটন নগ্ন টাঙ্গির ধার/ প্রতিশোধ নিতে পশুবলি দিতে উদ্যত হাতিয়ার’ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জঙ্গলমহলের সেই কিংবদন্তি কবি ভবতোষ শতপথি আজ চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় দু বছর ধরে কবি ভবতোষ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন না। এর আগে দুঃস্থ কবি হিসাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য পেতেন জনপ্রিয় এই কবি। চরম আর্থিক কষ্টের কারণে তাঁর দু’চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। পঁচাশি বছরের এই মানুষটির দুটি চোখেই ছানি পড়েছে। অস্বচ্ছ দৃষ্টি নিয়েই বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে চলেছেন কবি। লিখছেন বাংলা কবিতা। আধুনিক গান। সংস্কৃত–ঘেঁষা জয়দেবের গীতগোবিন্দ বাংলায় রূপান্তর করছেন। কিন্তু একদিকে বয়সের শেষপ্রান্তে আর্থিক সঙ্কটের সমস্যা আর অশক্ত দুর্বল শরীরে বয়সের ভার তাঁকে দিশেহারা করে দিয়েছে। তবুও হাল ছাড়ার পাত্র নন বাংলার এই অন্য ধারার কবি। কবি ভবতোষ ইতিমধ্যে চণ্ডালিকা, রথের রশির মতো কবিগুরুর অমূল্য সৃষ্টিকে দক্ষিণ–পশ্চিম অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় রূপান্তর করেছেন। দু হাজার আঞ্চলিক ভাষার কবিতা, দু হাজার বাংলা কবিতা ও এক হাজার ঝুমুর ও টুসু গান লিখেছেন। তাঁর সাড়া জাগানো কাব্যগ্রন্থ ‘অরণ্যের কাব্য’। চার দশক ধরে সীমান্ত বাংলার এই কবি সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। তাঁর লেখা ‘দেড় বিঘা জমিন’, ‘শ্রীচুনারাম মাহাতো’ বা ‘পলাশডাঙা’র মতো কবিতা মানুেষর মুখে মুখে জীবন্ত হয়ে গেছে। আপন ভোলা এই কবি তাঁর এই চরম সঙ্কটের কথা মুখ ফুটে বলতে লজ্জাও পান। ঝাড়গ্রাম শহরের রাজকলেজ সংলগ্ন এলাকায় বেশ কষ্টেই দিন গুজরান করছেন কবি।