হেঁই বাবু, চিনতে লারছ্য ন’কি ?
হামি বংশ্যা গ বংশ্যা,
তুমাদের কুমার পাড়ার বংশীবদন গ !
আর হুঁই দেখছ ছঁড়াটো মুবাইলে বিকলাছ্যে,
উ মদন গ, হামার ভাগ্না মদনা –
আট কেলাস তক্ক পড়েও নকরি নাই ।
না বাবু, শুক্কুবারের হাটটো আর নাই
পাকা পীচঢালা সড়ক - মটর গাড়ি
হুঁশ করে শহুরে যাওয়া যায় ।
বিক্কি বাট্টা করে দু’পৈসা জাদা লাভও মিলে
তাই গাঁয়ের সব সামান শহুরেই চলে যায় ।
আর মাটির হাঁড়ি কলসী ? কে লিবেক ?
খালি মানুষ মল্লে শমশানে লাগে ।
তবে চায়ের ভাঁড়টা এখনও চলে
শহুরের বাবুদের ভাঁড়ের চা মনপসন্দ
উটাই মাঝে মধ্যে বনাই, পাইকার লিয়ে যায় ।
সেই গরুর গাড়ীও আর নাই
চকচক্যা পীচ কুলিতে লুহার বেড় দিয়া চাকা
আর চলবেক নাই – পঞ্চায়েতের হুকুম ।
তাই ব্যাঙ্কের লুনে হুঁই ভ্যানগাড়ীটো কিনলি
মশিনে চলে – তেল খরচটা উপরি বাঁশ ।


সেই কনকালে দাঁড়ি ঠাকুরকে দেখেছিলি
হামদের বক্সীগঞ্জে স্বদেশী মেলায় ।
হামার বনানো কুঁজাল্যে জল খাঁয়ে কী তিপ্তি !
তাবাদে ত তেনার পইদ্দে হামদের নামটো জুড়ে
হামকে আর মদনাকে ধইন্ন করে দিছেন ।
আনপঢ় গাঁওয়ার হয়ে তেনার মম্ম কি আর বুঝব ?
সেই দাঁড়ি ঠাকুরও নাই, তেনার জমানাও নাই
ইখন গাঁগুল্যান শহুরকে টেক্কা মারছ্যে
ঘরে ঘরে ফটফটি, বকা বাক্স, বিজলী বাতি ।
কলসীর আখের গুড় ইখন প্যাকেটে মিলে
মাছির বাপও ভনভনাতে পারবেক নাই ।
গরীবি হঠাতে যাঁয়ে গরীবেই হঠে গেছে
কানাইরা ইখন লটরীর টিকিট বিচে ।
ছিল্যাপিল্যারাও আর পখুরে সাঁতরায় নাই
বাপ মা সাঁতরাত্যে দিবেকেই নাই
গরম জলের সাঁতার পুল আছে ন ?
ইখন কামার কুমার বলে কন নাই বাবু
যার যা খুশী কাম কাজ চাই
চাষীর ছিল্যাও আর চাষ করবেক নাই
কুমারের ছিল্যাও আর চাক ঘুরাবেক নাই
সব্বাই নকরি চায়, দশটা পাঁচটা আপিস বাবুদের পারা ।


হামার চাকা কিন্তুক থামে নাই, চাইপাক চাইপাক ঘুরেই যাছে
কখনও ভাঁড়, কখনও পরদীপ, কখনও কলসী, কুঁজা
কুছু না কুছু বনায়েই যাছি – খদ্দার হোক আর না হোক
ছাড়ল্যে চলবেক ? দাঁড়ি ঠাকুরকে ত কুছুই দিতে পারি নাই
জান দিব তবু তেনার উঁচু মাথাটো হেট হতে দিব নাই ।