হঁ আইজ্ঞা দেখার পারা দেখলি বটে
ই আগুন্যা বোশ্যাখেও শরীলটোয় ফাগুন্যা বাসাত লাগল্য
মনটো যিমন কেঁদপাকার পারা টুসটুস্যা হয়ে গেলেক ।
কেনে যে বাপ আসলি সময়ে জানতি পারি নাই
জানল্যে হামদের আমড়া আঁটি জীবনটোয়
টুকু রস ত ঢুকত, আন্ধারা জীবনে টুকু আল ত পড়ত !


আইজ্ঞা আপনেরা কত বড় বড় পন্ডিত লক
মটা মটা কিতাব পড়েছেন, ইস্কুল কলিজ গেছেন
আর হামরা ? লাইড় কাটার থাক্যে শমশান ঘাট
খালি লড়াই লড়াই আর লড়াই । পেটের গাঢ়াটো
ভরাত্যে, লাজ ঢাকার টেনা জুগাত্যে আর মাথা
গুঁজার ফাটাফুটি ঝুপড়ির লাগ্যেও জান কবুল্যা লড়াই ।
হামদের ক বলত্যে কপাল ফাটে চ বলত্যে চইমকে উঠে ।
বাপের কালে কবি ঠাকুরের নামটোই শুনি নাই
তার আবার উনার পইদ্দ গপ্ফ গান কথাল্যে শুনব্য ?


উদিন শুনলি ডিমডিহার হাবুল মাষ্টর কিসের একটো
ফানছান কইরবেক, তা ঘর ভরাত্যে লক পাছে নাই ।
পাবেক কি করে ? ই ভট পরবের হুজুকে কি লক জুটে ?
গাঁয়ের আধেক লক ত ইস্কুল মাঠে ল্যাতার বক্তিমা শুনছে,
বুঝ আর নাই বুঝ, হাততালি মার, দিনে দু পাত্তি কম লয় ।
আর আধেক লক হুড়কা দিয়ে চুঁহার পারা ছুঁপাই আছে,
কে আর বাপুত্যা পরানটোকে আনতাবড়ি ঘুঁচাতে চায় ।
শুনলি মাষ্টর ন’কি ভাত ডাল ডিংলার ঝাল খাওয়াবেক
পহলে ভাব্যেছিলি ভাতের লোভ দেঁখাই উ ভটের মিটিন
কইরবেক, তাবাদে  সামলাও লিজের মা বিটির ইজ্জত !


আইসে দেখলি, না ইটো ত কন ভটের মিটিন টিটিন লয়
ঝন্ডা নাই লারা নাই লেতা লেতির গরম গরম বক্তিমা নাই
তক্তার উপর কাপড়া বিছায় সাদা ফুলের মালা জড়ানো
কুথাকার এক দাঁড়িয়ালার ফট,  । কিমন সাধু সাধু ভাব ।
ভাবলি – হাবুল মাষ্টর বধহয়, বাপের ছেরাদ্ধ ছান্তি কচ্ছে !
ইয়ার পরেই দেখলি লালপেড়্যা শাড়ী পইরে কটা নুনহী
হারমনি লিয়ে গান ধরল্য, গানটোর কথাগুল্যা বড় সোন্দর ।
উরা যাত্যেই লাল লীল শাড়ী পইরে, চুলে বেলফুল বান্ধে
কটা নুনহী হাত দুলায়ে কমর লাইড়ে লাচাগানা করল্য
দুটা ছুটকা পইদ্দ বলল্য, সবেই ন’কি দাঁড়িদাদুর লিখা !
ইবার বুঝলি – ইটো ত বাবু ছেরাদ্ধ লয়, গুরুসেবাও লয় ।
আর তখনই হাবুল মাষ্টর মাইকে বক্তিমা শুরু করল্য
বলল্য আইজকে বোশ্যাখের এক কুড়ি পাঁচ দিন, হামদের
পেরানের কবি রবি ঠাকুরের জনমদিন, আইজ রবীন্দজয়ন্তী ।
জমিনে পাতা তিরপলে থাপসি গাইদে বইসে বক্তিমা শুনছিলি
হামার বগলেই ছিল মনভুলা, পাঁচ কেলাস তক্ক পড়েছে ।
উঁকেই শুধালি – ইটো কন ঠাকুর রে বাপ ? যজমানি ?
উ বলল্য – বহুৎ বড় কবি, বাংলায় লিখত পইদ্দ গপ্ফ
কত সোন্দর সোন্দর গানও আছে, জনগণমন শুনেছিস ?
তাই বটে, পেরাইমারি ইস্কুলের নুনহা নুনহীরা গায় বটে ।
তাপরেই  একটো ছকরা পইদ্দ বলত্যে উঠল – শুধু বিঘে
দুই ছিল মোর ভুঁই – আর সবই গেছে ঋণে, বাবু বলিলেন
বুঝেছ উপেন এ জমি লইব কিনে”- লে বাপ ইযে হামার
কথাই লিখেছে  রে –  কুথাল্যে জানল ই সব কহানিগুল্যা ?


ইখনও পাসুরে যাই নাই উ দিন গুল্যানের কথা – পাঁনস
টেকা করজা চুকানর নামে পরধানবাবু হামার ভিটামাটি
জমিন  জবরজস্তি কাগজে  টিপছাপ লিয়ে কাড়াই লিল !
বাগদির ছিলা হয়ে বামুনদের সনে লড়ব্য কন তাগদে ?
কথাল্যে জানব্য ঠাকুর বাবা হামদের পারা ভঁকা পিঁধাদের
দুঃখের কথাও লিখে গেছেন, লড়বার তাগদ দিয়ে গেছেন ।
শুনলি উনি নকি জমিনদার ছিলেন – তাও হামদের কথা
এত ভাবতেন ?  হামদেরই লক হয়ে থাকত্যে চেয়েছিলেন ?
হাবুল মাষ্টরকে গাইল দিতে মন লাইগছে – ইমন একটো
ফানছানের লাইগে লক জুটাতে খাওন দাওন লাগবেক ?
বুঢ়ার ফটটার দিকে ভাইলতে ভাইলতে হামার মনে হল
লকটা যিমন সুয্যি ঠাকুরের পারা আল ছড়ায়ে হামদের
মনের আন্ধার ঘুঁচাই রোদ ঝলমল্যা করে দিল, দুনিয়ার
কন রাহুই উ সুয্যিতে কভু গেরন লাগাতে পারবেক নাই ।


কিছু শব্দার্থ
বাসাত > বাতাস; কেঁদপাকা > সফেদার মতো পাকা ফল; টুসটুস্যা > রসে টইটম্বুর;লাইড় > নাড়ি; শমশান > শ্মষাণ; গাঢ়া > গর্ত; টেনা > কাপড়; ফানছান > ফাংশান; হুড়কা > কাঠের ছিটকানি, দরজা বন্ধের মোটা কাঠ; ছুঁপা > লুকান; বাপুত্যা > পিতৃদত্ত; তাবাদে > তারপর; লারা > শ্লোগান; ছেরাদ্ধ > শ্রাদ্ধ; নুনহী > বালিকা; হারমনি > হারমোনিয়াম; সোন্দর > সুন্দর ; লাইড়ে > নেড়ে; লাচাগানা > নাচগান; যজমানি > যে পূজা অর্চনা করে জীবিকা নির্বাহ করে; পাসুরে > ভুলে যাওয়া; করজা > ঋণ; জবরজস্তি > বলপূর্বক; ভঁকা > নিরন্ন; পিঁধা > নিবস্ত্র; তাগদ > শক্তি; ভাইলতে > দেখতে; গেরন > গ্রহণ