নব বধু আঙ্গিনায় পা রাখিয়া বলেছিল— তোমার বাবা মায়ের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্বভ হবেনা ৷
আমি শান্তনা দিয়ে বলেছিলাম— চিন্তা করোনা কেয়া, সব ঠিক হয়ে যাবে ৷


পুত্র বধুর মুখে কথাটি শুনে বাবা যতটা কষ্ট পেয়েছিলেন, সারা জীবন খেটে খেয়েও এতটা কষ্ট পাননি ৷
আমি শান্তনা দিয়ে বলেছিলাম— চিন্তা করোনা বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে ৷


মা এগিয়ে গিয়ে কেয়ার হাত ধরে বরণ করে নিলেন ৷
বাবাকে এগনাতে নিয়ে বুঝিয়ে বলেছিলেন— আজ কাল অনেক মেয়েরা স্বামীকে নিয়ে একা থাকা পছন্দ করে৷ তুমি চিন্তা করোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে ৷


বাবা নিজ হাতে সুন্দর একটি বাসায় তুলে দিলেন আমাকে আর কেয়া'কে৷
জীবন সাজিয়ে তুলেছিলাম ৷


একদিন কেন যানি নিজেকে এতো একা একা লাগছিল ৷
রাতের বেলা বাড়ি গিয়ে মায়ের পায়ের কাছে গুটি শুটি খেয়ে শোয়েছিলাম ৷
মধ্যরাতে মা উঠে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে বলেছিলেন— ছেলেটার ছোট মানুষি এখনও গেলনা ৷
মা মশারি টানিয়ে হাত পাখায় বাতাস করছিলেন৷
আমি সেদিন মাকে জরিয়ে বিষণ কেঁদেছিলাম৷
মা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেছিলেন— কাঁদিছ না বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে ৷


যদি সকালের অপেক্ষায় বসে থাকা কোনো পথ হারা পথিকের সামনে রাতের অন্ধকার কেটে প্রভাতের উদয় হয়, যেমন করে মেঘে ঢাকা পূর্নিমার চাঁদ একটু ফাক পেয়ে আলোয় ভরিয়ে দেয় ফুল ফোটা সরিষার ক্ষেত,
তেমন করে আলো জ্বালিয়ে সংসারে এসেছিল আমাদের সন্তান ৷


ক্ষয় রোগের তালাশে বাবা চলে গেলেন ওপারে ৷
দু-বছর পর মা'ও ৷


ছেলে বড় হয়ে গেছে৷ এখন পুত্র বধু আনিবার পালা৷
কেয়ার পছন্দ মতো পুত্র বধু ঠিক করিলাম ৷


বসন্তের এক দিনে, বেনারসি পরিয়ে, সানাইয়ের সুরে সুরে পুত্র বধুকে ঘরে তুলেনিলাম ৷


সে আসিয়া পরিষ্কার বলে দিল— আমরা আলাদা থাকতে চাই ৷


কথাটি শোনে কেয়া খুব কষ্ট পেয়েছিল৷
আমি শান্তনা দিয়ে বলেছিলাম— চিন্তা করনা কেয়া, সব ঠিক হয়ে যাবে ৷


কেয়া কেঁদে কেঁদে বলেছিল— হায়! জীবনের শেষ সিমান্তে এসে বোঝতে পারলাম আদরের সন্তান দুরে থাকা কত মর্মান্তিক ৷