মাসী বাড়ি বেড়াতে এসে তোমার সাথে দেখা
ভুলিনি সেই কথা আজও জান কি সুলেখা।
মাসীর মেয়ে সুদেষ্ণা সে তোমার সখী হয়
বলল চল সখীর সাথে করবে পরিচয়।
সুদেষ্ণা কয় আমার সখী তোমার কেমন লাগে
ভাববে এমন কারো সাথে হয়নি দেখা আগে।
হই নির্বাক তাকিয়ে থাকি আমার দু চোখ মেলে
মাদুর পেতে বসতে দিলে বললে কখন এলে?
শীতল জলে প্রাণ ভরালে সাথে মধুর বুলি
প্রাণ থাকতে সে সব কথা কখনো কি ভুলি।
তোমায় দেখে মনে হল প্রতিমা হল দেখা
তোমার রূপের নেই তুলনা জান কি সুলেখা।
কাজল বরণ রূপ কন্যা গভীর দুটো আঁখি
তোমার পানে না তাকিয়ে কেমন করে থাকি।
মাসী বাড়ি এসেছিলাম মাধ্যমিকের শেষে
"আমিও দেব আগামী বছর" বললে তুমি হেসে।
বয়স সবে ষোল বছর উঠেনি গোঁফের রেখা
মনটা আমার উথাল পাথাল হয়েছিল সুলেখা।
তোমাকে বলার অনেক কথা ছিল আমার মনে
আর কারো নয় তুমি শুধু হবে আমার কনে।
হয়নি বলা মনের কথা এসেছিলাম চলে
ভেবেছিলাম বলব সে সব আবার দেখা হলে।
পরের বছর এলাম আবার দেখার আশা নিয়ে
শুনলাম অমতে তোমার হয়েছে কোথাও বিয়ে।
বাজ পড়ল যেন মাথায় কি করে এমন হয়
দেশটা শুধু স্বাধীন তবে মেয়েরা স্বাধীন নয়।
আজও ওরা পায় না ওদের ইচ্ছে মতের দাম
অনূঢ়া হয়ে রইলে ওদের দেয় লোকে বদনাম।
সুদেষ্ণা কয় সখীর বাবা ছিলেন নিরুপায়
সংসারেতে ছিল না ওদের তেমন কোন আয়।
বলেছিলেন বিদায় দিতে চাইনে আমি তোরে
কিন্তু আমি ধরে রাখি তোকে কেমন করে।
বৃষ্টি হলে ফুটো চালে জল গড়িয়ে পড়ে
ঝড়ের হাওয়ায় ঘরের খুঁটি ঠকঠকিয়ে নড়ে।
শকুনগুলো আকাশ থেকে নজর রেখে ঘোরে
ছোঁ মারে যদি,সেই দুঃখ সইব কেমন করে।
মত না থেকেও বাবার মতে দিয়েছিল সে সায়
গরিব বাপের গরিব বেটী অনেক যে তার দায়।
সুদেষ্ণা কয় শুধিয়েছিলাম কেমন আছিস সই
সে কয় যারে মন দিয়েছি তারে পেলাম কই।
ভুল যেন না বোঝে আমায় বলিস সখী তারে
নদীর দু কূল মিলবে না আর দুই জন দুই পারে।