আজও ঘটা করে মহা ধুমধামে
             পালিত হয় আমার জন্মদিন
কেউ স্বাধীনতা বলে করে তারে অভিহিত
খামতি থাকে না জৌলুসে এতটুকু
মনের কথা, জানতে চায় না কেউ
চাকচিক্যের আড়ালে সকল মালিন্য ঢাকা পড়ে
অবাক হয়ে ভাবি কোন খুশিতে ওরা মাতে উল্লাসে।
আমার চোখে পড়ে ক্ষুধার্ত জনতা
বস্ত্রহীন অগণিত নরনারী
বাসস্থানহীন কত জনতার আশ্রয় ফুটপাত
মাথার উপর একমাত্র বিশাল আকাশ আচ্ছাদন.........
আবার অদূরে গগনচুম্বী বিশাল অট্টালিকা
বিলাসী জনতা আরাম আয়েশে মত্ত
উদ্বৃত্ত তাদের খাদ্য, বস্ত্র
অনাদরে পড়ে থাকে অব্যবহৃত।
খুব সহজেই ধরা পড়ে কি বিশাল পার্থক্য
জন্ম নিয়েছে একটু একটু করে
তাই অনৈক্য মাথা চড়া দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে খুঁজে
আমার করার কিছু নেই, শুধু দেখে যাই মুখ বুজে।
বয়স আমার সত্তর অতিক্রান্ত
প্রৌঢ়ই বলা হবে আজ সমীচীন
বহু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েও চুপ করে রই ঠায়......  
আমার বংশধরের সংখ্যা বাড়ছে নিরন্তর
মন্বন্তর টানতে পারেনি দাড়ি কক্ষনো তায়।
কলেবর আমার সবার নজর কাড়ে,
পরজীবী কৃমি ঘাটি গেড়েছে জঠর অভ্যন্তরে
রক্তাল্পতায় ভুগছি নিত্য তাই
শরীর হয়েছে হাড় জিরজিরে অত্যন্ত দুর্বল
ভূকম্পনে মাঝে মাঝে ভীত নড়ে উঠে আজকাল।
বাঁচার তাগিদে আঁকড়ে ধরি যত পুরাতন স্মৃতি
সময় যতই গড়াচ্ছে ভয় বাড়ছে ততই মনে
ক্রমশঃ হতোদ্যম হচ্ছি পদে পদে।
দু চোখ ভরা স্বপ্নের দেশে লেলিহান অগ্নিশিখা
শীতলতা বয়ে আনে না দখিনা হাওয়া
হা হুতাশ শুনি এখন চতুর্দিকে।
বিবেক এখন অনির্দিষ্টকালের নির্বাসনে
সিংহাসনটার জবরদখল নিয়েছে দুর্নীতি
মা সারদা ভাবেনি কালিমালিপ্ত হতে হবে এইভাবে
লজ্জায় আজ দুই হাতে মুখ ঢাকি।
চারিদিকে শুধু ভেঙে খানখান হওয়ার আওয়াজ শুনি
রঙে রঙিয়ে ক্ষতের দাগ ঢাকার চেষ্টা চলছে
ঘোড়ায় লাগাম পরানোর কেউ নেই
ঘুরছে মাথা আর শরীরটা টলছে।
আমার শরীর শিল্পীর হাতে যেন বালু দিয়ে গড়া
যথেচ্ছাচার করেছ তোমরা না ভেবে তার প্রতি
দুর্গতি আজ শিয়রেতে এসে হাতছানি দেয় তাই
বালুকণাগুলো সম্প্রীতির বাঁধনে ছিল মজবুত বাঁধা
জুড়ে রাখার সেই বাঁধন ক্ষমতা দেখি আজ আর নাই।
প্রতি বালুকণা শক্তির আকর
                                  কেহ নহে নগণ্য
যদি ভালবাস মোরে আর চাও রাখতে শক্তিশালী
বিচ্ছিন্ন হতে দিও না যেন কোন এক কণা বালি।
সত্তরতম জন্মদিন আজ আমার
সব্বাই আজ দাও এই প্রতিশ্রুতি
আমার অবয়ব ছিন্নবিচ্ছিন্ন কখনই হতে দেবে না
অটল চিত্তে রক্ষা করবে সর্বদা সংহতি।