কবিদের উদ্দেশ্যে হরিদাসের চিঠি-
হে কবি, তোমাদের বলছি-
স্বচ্ছ আকাশে ছেঁড়া-কাঁটা মেঘের আড়ালে বসে
প্রেমের কবিতা লেখার সময় এখনো আসেনি,
বিরহের ইজেলে স্থির চিত্রের মতো
কবিতাকে চিত্রিত করার সময় তোমার সামনে পড়ে আছে।
অদ্ভুত উল্লাসে,
অভিমানী মেঘেদের অঝর কান্নার আওয়াজ কিংবা
চাঁদ থেকে কবিতার বিনিময়ে জোৎস্নাকে কিনে এনে
আত্মতৃপ্তি কব্জা করার সময় শুরু হয়নি এখনো।


যেখানে পৃথিবীর পথে পথে গেরিলারা মুক্তি কিনতে
বারুদের বিনিময়ে মূল্য পরিশোধ করছে,
যেখানে তুমি স্বাধীন চিত্তে কবিতা লেখার জন্য
আকাশের ন্যায় একটি বিশাল ক্যানভাসের মুক্তির নেশায়
আগ্নেয়গিরির অন্ধকূপে ঝাপ দিচ্ছে;
যেখানে মৃত্যুর ক্ষুধার্ত আহ্বানে সারা দিয়ে
পৃথিবীময় শতকোটি মানুষের ক্ষুধার ফয়সালা চাইছে,
যেখানে ধর্মীয় গোড়ামী ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে
বারুদের বিছানায় ঘুমোচ্ছে;
যেখানে ফাটল-ধরা পৃথিবীকে মেরামত করার জন্য
শতকোটি স্বপ্নের দেউলিয়াত্ব ঠেকানোর নিমিত্তে বেগানা পরগনায় মিছিল,
যেখানে পৃথিবীব্যাপি নিষ্পেষিত ক্ষয়িষ্ণু মানবতার মুক্তির পথে
মুমূর্ষু বিপ্লবে  প্রাণ দিতে চাইছে,
সেখানে “প্রগতিশীল যৌগ পৃথিবী“ বিনির্মানে
তোমাদের কি কোন ভূমিকা নেই কবি?


একযোগে জেগে ওঠো কবি,
তোমাদের কলমে শান দাও,
সূর্যের কাছ থেকে হাজার টন হিলিয়াম ছিনিয়ে এনে
তোমার কলমে ভরে আগুন জ্বালিয়ে দাও;
পৃথিবীর সমস্ত আগ্নেয়গিরির লাভাগুলো তোমার বুকে ভরে নিয়ে
তোমার রক্তে আগুন ধরিয়ে দাও কবি।
পৃথিবীর সমস্ত কাগজ, গাছ, লতা-পাতা, পথ-ঘাট, বিল্ডিং, উপত্যকার কার্নিশে
প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে তোমার দ্রোহের আগুন লিখে যাও কবি;
পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে ছিন্নভিন্ন লাশের মিছিলে কবিতা পাঠ করে যাও।
এখনি সময় বিপ্লবের-
তোমার কবিতার আঘাতে পুঁজিবাদের দুর্গ চুড়মার করে দেওয়ার,
ক্ষুধার বিপ্লবকে উস্কে দিয়ে শষ্যভান্ডারের দুর্গপ্রাচীরে লাত্থি মারার;
মজলুম অসহায় কাফেলার মুক্তিবাদী ইস্তেহার বিলি করে যাওয়ার,
সাম্রাজ্যবাদের মসনদ তোমার লক্ষ বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা করে দেওয়ার।
তুমি দুনিয়ার সমস্ত পরগনায় তরবারির কোপে লিখে যাও মুক্তির গান,
তোমার কবিতার বেয়নেটে নিষ্পেষণের শরীরে তীব্র আঘাত হানো এখনি,
অত্যাচারি জালিমের বুকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড় তোমার কবিতা দিয়ে;
তোমার কবিতা দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত প্রাঙ্গণ নিকিয়ে দাও কবি
কবিতার সুরে মোহাবিষ্ট করে ফেল পৃথিবীর প্রান্তরের অশুভকে।
তারপর লিখতে বসো কবিতা।