অনলাইন ভিত্তিক অনেক কবি মনে করেন, আজকাল মানুষ কবিতা পড়তে চায় না। কবিতার পাঠক নেই। অথচ আমি সারাদিন অনলাইনে থাকাকালীন এমন দু’চারটা কবিতা চোখে পড়ে, যেসব কবিতার পাঠক সংখ্যা অনলাইনের সমস্ত কবিতার পাঠক সংখ্যার চাইতেও বেশি। তাহলে সেসব কবিতায় পাঠক আসে কোথা থেকে? আসলে কবিতা সেই দু’চারটাই। আর বাদবাকি অধিকাংশই পাঠক কবিতা মনে করে না, কবিতা মনে করি আমরা যারা লিখি তারা নিজেরা। কবিতা হলে অবশ্যই পাঠক পড়বে। পাঠককে টেনে ধরার মতো শব্দচয়ন এবং বিষয়বস্তু কবিতায় থাকা বাঞ্ছনীয়। কবিতা পড়ে যদি পাঠক মজা পায়, আনন্দ বোধ করে কিংবা চিন্তা করার খোরাক খুঁজে পায়, কবিতা যদি পাঠককে নাড়া দিতে পারে, সেই কবিতা অবশ্যই পাঠক পড়ে। আমার মতো অকবির কবিতা পড়ে পাঠক সময় নষ্ট করতে চাইবে না।


কবিতা চর্চা করা খুবই ভালো। শব্দ-বাক্য এবং ভাষার খেলা একজন মানুষকে চিন্তাশীল হতে শেখায়। তাছাড়া আজকাল অনলাইনে অশ্লীলতার যুগে একজন মানুষ যদি কবিতা চর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তাহলে এর চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই। কবিতা চর্চা একটি সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কবিতা যেমন সাহিত্যের রস আস্বাদনের এক মজাদার মাধ্যম, আনন্দ পাওয়ার অন্যতম উপাদান, নিজেকে ঋদ্ধ করার জায়গা, অন্যদিকে কখনো কখনো কবিতা হয়ে উঠতে পারে শোষণের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার। কিন্তু আজকাল যা-তা কবিতা লেখা এবং নাম-ডাক কামানোর যে চেষ্টা দেখা যায়, সেই চেষ্টা যদি কবিতা চর্চা এবং শেখার প্রতি থাকতো, তাহলে যুগশ্রেষ্ঠ কবিতাও বেড়িয়ে আসতে পারতো বলেই আমার ধারণা। তাছাড়া একজন প্রকৃত কবির কবিতা পড়ে বোঝার জন্যও কবিতার যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী।


দুঃখজনক সত্যি যে,  আজকাল অনলাইনে এমনও দেখা যায়, ফটোশপে নিজেই একটা থামনেইল বানিয়ে, সেখানে নিজেই বিভিন্ন সংগঠনের নাম লিখে পুরষ্কার জিতে গিয়েছেন বলে ফেসবুকে পোষ্ট করতে দেখা যায়। কিন্তু যে কবিতায় পুরষ্কারটা দেখানো হয়, সেই কবিতাটা পড়লে বমি আসে। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে একটা ক্রেষ্ট পাওয়ার জন্য কোন কোন কবি নাকি দেন-দরবারও করে থাকেন এবং টাকা পয়সার বিনিময়ে একটা ক্রেষ্ট সংগ্রহ করে থাকেন। একজন ব্যক্তির প্রকৃত কবিসত্ত্বা থাকলে, এসব কর্মকাণ্ডে লজ্জিত হওয়া উচিত। কবি মানসিকতার একজন পবিত্র ব্যক্তি কখনোই এমন কাজ করতে পারেন না। একজন কবি কিছু পাওয়ার জন্য লিখেন না। কিন্তু যদি যোগ্যতার পুরষ্কার পাওয়া যায়, সেটি হয় অত্যন্ত আনন্দের এবং স্বীকৃতির।


আমার এই নিবন্ধ উদীয়মান কবিদের নিরাশ করার জন্য নয়, কিংবা কাউকে তাচ্ছিল্য করা বা ছোট করার জন্যও নয়। কবিতা চর্চা করতে করতে একদিন ভালো কবিতা বেড়িয়ে আসবে, আমি এই সত্য বিশ্বাস করি। কিন্তু শুধু লিখে গেলেই ভালো কবিতা বেড়োবে না, বরং শুদ্ধতম কবিদের কবিতা পড়লে এবং মনোযোগ সহকারে খেয়াল করলে অনেক কিছুই শেখা যাবে। আজকাল কবিতা লেখা শেখার জন্য অনেক মাধ্যম আছে। অনলাইনে ঘাটাঘাটি করলে সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব। কবিতা চর্চা করা এবং কবিতা লিখতে শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যেই আমার আজকের লেখাটি।


আশা করি কেউ ভুল বুঝবেন না বা মন খারাপ করবেন না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, সাহিত্য চর্চা একদিন আমাদের সমাজটাকে বদলে দেবে। আমাদের যাদের কবিতার প্রতি আগ্রহ আছে, লেখার জন্যতো বটেই, অন্তত কবিতা পড়ে বোঝার জন্যও কবিতা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা খুবই দরকার। প্রতিদিন নিয়মতান্ত্রিক একটু একটু চর্চা করলেই একদিন কবিতা শুদ্ধতম হয়ে উঠবে। কবিতার নিয়ম-কানুন জেনে কবিতা লিখলে এবং কবিতার ভেতরে কিছু থাকলে সেই কবিতা পাঠক অবশ্যই পড়বে। আমরা যারা কবিতা শিখতে এবং লিখতে আগ্রহী, তারা কবিতা চর্চা করে এবং লিখেও সমাজকে সহযোগিতা করতে পারি। হাজার হাজার কবিতার ভেতর থেকে, আমার একটি কবিতা যদি পাঠক পড়ে এবং আনন্দ পায়, আমার জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। শুভকামনা থাকলো সমস্ত কবি এবং পাঠকদের প্রতি।