হৈমবতী
দূরে নয়--
এইখানটিতে এসে বসো একবার,
তোমার বিভূতি-পাণ্ডুর ললিত বাহুর বিদ্যুৎ
জড়িয়ে দাও রুদ্র-ভৈরবের নীল কন্ঠে।


এই যে,--
তোমার রথের স্পন্দনে শুনছি
মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুর ডমরু আহবান, হৈম:
একটি অগ্নি মুহূর্তের প্রজ্বলতায়
কোথায় মিলিয়ে গেল
পঙ্গু নরের কার্পণ্যে উপহত বিশ্বের বুদ্বুদ!
শুধু তোমার অবন্ধ্য ত্রষণার প্রলয়-পিচ্ছিল খরস্রোত
তার আদি নাই, অন্ত নাই.....
আমার ক্ষণভঙ্গী ভাবনার নিবিড় স্ফুলিঙ্গ
সহস্র রশ্মির উদ্ভাস্বর বিস্ফোরণে
ছড়িয়ে পড়ছে তার হানায় হানায়, --
আর,
তুষার মৌনা অলকানন্দার স্বপ্ন
কোন্ উন্মত্ত বজ্রের অধীর আশ্লেষে
গলে পড়ছে আকাশ-উজানী কিশোরী উষার
কুঙ্কুম-আভায়।


হৈমবতী,
শাম্ভরী-দৃষ্টির অন্তিম সঙ্কর্ষণে
একটি অণু-প্রভঞ্জন জ্বালার বিচ্ছুরণ
শূন্যের করোটিতে:
তারই প্রচ্ছটায়
তোমার অধিদৈবত সিদ্ধবীর্যের চিদ্ঘন রূপায়ণ
ঐ নির্নিমেষ চেয়ে-থাকার অবর্ণ যবনিকায়।
তার গমকে-গমকে
তোমার অধিভূত-ভাবনার আকাশকুসুম
ফেনিয়ে উঠেছে বর্ণের বন্যায়।


হৈমবতী,
এ কোন্ হিরণ্ময়ী কামনার কমলদ্যুতি, --
আমার শীর্ষণ্য-চেতনা নিস্পন্দ হল
কোন্ ঋতাবরী-মূর্ছনার পঞ্চশিখ বিদ্যুৎঝলকে!


তোমার গায়ত্রী-তনুর মালঞ্চে ফুটল
বসন্তের পদ্মকরবীর গোপন আকূতি,
নিদাঘের চম্পকে স্বপ্নের ধূপছায়া,
বর্ষার কেতকী-হিয়ায় উন্মনা কৈশোরের সজল নিঃশ্বাস,


শরতের কমলদলে অরুণা ভালবাসার নিটোল আমন্ত্রণ,
আর শিশিরের শেফালী তনুর পাণ্ডুর সুবাসে মৃত্যুর কিঙ্কিনী।


পুষ্পধন্বার পঞ্চশর
ত্রিপুরসুন্দরীর নিমীল-দৃষ্টির কুহরে জাগলে
এ কোন অস্পর্শরতির শূন্যাভিসারিণী সান্দ্রতার কনকচ্ছটা
ওগো হৈমবতী,
এই কি তোমার অষ্টাদশী ইন্দুকলার অমৃত-নিষ্যন্দ--
আজও যা মর্ত্যচেতনার অগোচর।