বৃষ্টিযাপন / অনিরুদ্ধ আলম


একটা কবিতা লিখছি সকাল থেকে
বৃষ্টি নামছে ডুমুরের ডালে রুমুরঝুমুর নূপুর ছন্দে খুব  
বৃষ্টি পড়ছে মিষ্টি কবিতা। ধুলোর গন্ধ আনন্দে নেয় মেখে  
ইশকুল ঘর উচ্ছল ঘোরে হঠাৎ দিয়েছে ডুব।


ডুবে গেছে হাট। মাঠ জলে থইথই
কোথাও যে যাব, সে-উপায় নেই মোটে
খুলে বসে আছি কবিতার খেরো বই
ক্রিংক্রিং ধ্বনি তুলে সাইকেলে এবেলা কে ওই ত্রস্ত গতিতে ছোটে?  


বৃষ্টি নামছে সেতারের তার ঘেঁষে
গানের কেলাশ আজো বুঝি বাদ যায়
বৃষ্টির মতো ক’রে নিরালাও কথা কয় হেসে-হেসে  
নিরালা কি ঝুম ভিজছে তাদের ছোট্ট উঠোনটায়?


লেবুর গাছটা লাগছে ভীষণ একা
ইশটিশনের ঘণ্টা বাজল। মনটা আচমকাই কেন চমকাল
দৃষ্টি ছাপিয়ে কে যেন অধীর দিচ্ছে কেবল দেখা
এ কেমন বৃষ্টি! জলে ভিজে-ভিজে সারাবেলা কী যে নিদারুণ জমকালো!  


জলেঘেরা গাঁও যেন ছোটো কোনো দ্বীপ
সেই তো সকাল। সকাল গড়িয়ে দুপুরের খোঁজ নাই  
কদম গাছটা নিরালার মতো পরেছে ফুলের ক্লিপ
মন ভালো নাই। মন ভালো আছে। হাওয়ার সানাই বেজে যায় আইঢাই।  


বৃষ্টি নামছে থেকেথেকে পোড়ো পাগারের আড়াআড়ি  
তোলপাড় হল হিজলের ডালপালা
কাকভেজা ডাকপিয়ন নাড়ছে দরজায় কড়া জয়ন্তীদের বাড়ি  
ইশকুল ঘরে উত্তাল এক ঝুলছে ঢাউস তালা।


বৃষ্টি সে এক তিস্তা পারের মেয়ে
ভুল করে বুঝি বাঁধে নাই তার চুল  
হাট-করে-খোলা চৌকাঠে এসে নিরালার সুরে গেয়ে
বাঁধাল হুলুস্থুল।  


ঘাস। পাখি। পাতা। লাউয়ের লতা। মেঠো পথটার নুড়ি
এক পরিবার হয়ে মিলেমিশে জানালার পাশে অবিরল নিশ্চুপ
নিরালা এমনই। সারাবেলা জুড়ে হৃদয়ে ওড়ায় নৈশব্দের ঘুড়ি
বৃষ্টিযাপনে নৈশব্দ হয় আরও বেশি অপরূপ।


নিরালা কি জানে যখন বাতাসে আরো কেঁপে ওঠে বৃষ্টির গাঢ় ঝুঁটি
দুই চোখ জুড়ে ভালোলাগা জাগে অফুরান বৈভবে
আমাদের বাড়ি তোমাদের বাড়ি দূরত্ব এক মুঠি
উঠোনের জলে জ্বলে-জ্বলে ওঠে তার মুখখানি। ঠিক নিরালাই হবে!    


কবিতা লিখছি। কবিতা লিখছি। লিখি এক ইতিহাস
নিরালা ভীষণ ভালো গায় আধুনিক
মেঘের ওড়না মুছে দেয় সব ডহর দীর্ঘশ্বাস
আকাশ উড়ছে। আমিও উড়ছি। আহা এ বৃষ্টি খুবখুব মানবিক।