একদিন তুমি বলেছিলে
যেন যাই না ভুলে-
মিশে আছ আমার সাথে,
ভোরে শীতের কুয়াশাতে
আমার পা ধুয়ে দিতে,
অবসর কিংবা ক্লান্তিতে
বসেছিলাম তোমার পরে
কখনও শুয়েছি শীতলপাটি ভেবে,
এভাবে কতদিন কতরাত কেটেছে
একান্তে তোমার সাথে
তুমি কত কথা বলতে
দূঃখে নিঃশ্বাস ফেলতে
যত্ন করেনা কেউ তোমাকে
বেড়ে ওঠো আপনা হতে,
পানিতে তললে তুমি যাও মরে
আবার জম্ম পানি সরে গেলে -
নিজেই নিজে থেকে,
অশেষ কুদরত তোমাতে
- মহান সৃষ্টিকর্তা থেকে।

তোমাকে কত কষ্ট দিয়েছি
তোমাতে পাষুন চালিয়েছি
কেটে কেটে লাল গাভীটিকে খাইয়েছি,
বেশী দুধও পেয়েছি।
যেখানে গিয়েছি
তোমাকে সেখানেই পেয়েছি
এহেন আচরণে ক্ষমা চাই ভাই ।
ঘাস ফুল, ধুতরা, লজ্জাবতী -
এরা এখন কেমন আছে ?
আমার কথা কি মনে করে !
স্কুল ছুটির পরে কয়েকজন মিলে
গুটি- কাল- গোলাপ জামের গাছে
উঠতাম পাল্লা দিয়ে, পিছন পাড়াতে,
ঢিল মারতাম বড়ইয়ের গাছে -
সারস, টুনটুনি, চামচিকা, বাবুই
কত গান শুনেয়েছে মাঝে-মাঝেই
কামরাঙ্গা, খেজুর, জলপাই
পড়ে থাকত গাছের নিচেই ।
এখনও কি সবকিছু আগের মতই আছে ?

কত সময় কেটেছে চালতা তলে
সেখানেও তুমি ছিলে -
তোমাকে ভুলে কি করে !
ফাল্গুন চৈত্রে তেঁতুল তলে
যেতাম না কেউ দুপুর সন্ধ্যা হলে
সে সময়ে কি না ভূত-পেত্নি আসে,
বাস্তবতা কিছু আছেও বটে -
একদিন ভিতু চাক্ষুস ঢিলের শব্দে
জ্বিন পরীও হতে পারে ।
কাঠ ফাঁটা রোদে কোকিলের ডাক
কাকাতুয়ার জলের ফরিয়াদ
রাতে গারোয়া শিয়ালের হাক
শিম বরবটির জাংলায় পাখির বাসা
কত রং কত তামাশা,
হা-ডু-ডু, ছি-বুড়ি, কানামাছি খেলা
না বলে পেয়ারার গাছে ওঠা
দৌড় বকুনি খাওয়া,
লাফ দিয়ে পাঁয়ে কাটা ফোটা  
সাপ বেজির লড়াই
বন্ধুরা ঝগড়া খামাকাই
ইত্যাদি কি ভোলা যায় সহজেই !
নিশ্চয় তোমার মনে আছে
পড়তাম তুলশীঘাট কাশীনাথে,
আমার বাড়ি থেকে পূর্বদিকে -
ভাব হয়েছিল সূর্যটার সাথে,
সবসময় থাকত কপালে ঠেকে
অনুরূপ বাড়িতে ফেরার পথে,
বিশ্রাম নিয়েছিলাম বটতলে বসে
সেখানেও তুমি পাশে ছিলে,
বলে দিও, মিনতি তাদের কাছে -
আসতে আরও কিছুদিন দেরি হতে পারে।

আচ্ছা,ওরা কি কাঁদে আমার জন্যে!

ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট পেরিয়ে
এখন কর্মরত শহর উপশহরে
ব্যস্ত অফিস কলকারখানাতে
লোহালক্কর, এসি, বিদ্যুৎ বিভাগে,
এখানে খুঁজি তোমাদেরকে-
নিষ্ঠুর সবাই, পাইনা কোনখানে,
আমার মন কাঁদে বারে বারে -
ভাল নাই আমি তোমাদের ছেড়ে,
জান কি! চাষী ভাইদের প্যারা, কাউন,
কেমন হয়েছে- আউশ, ইরি, আমন ।

ফেলনা বলি কারে -
ঝড়া পাতা কি বিনা কারণে !
পরে গাছে নতুন জীবন আসে
ঝড়া পাতা মফিজ ফেলানির উনুনে ।

তুমি কি বলবে আমাকে !
মফিজ ফেলানি কেমন আছে ?
গতকাল ওরা কি ছিল কাজে !
আজ তাদের উনুনে কি হবে ?
আমার সালাম দিও পৌঁছে -
একটু সময় পেলেই আসব ছুটে।

শেষ পর্যন্ত তুমি আমাকে -
ঋণি রাখবে তোমার কাছে,
আমার কবরের ওপরে -
তুমি নিজ হতে ডালপালা ছড়াবে
তোমার ভালবাসায় সিক্ত রাখবে।

দোস দূর্বাঘাস- তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ,
সৃষ্টিকর্তা অসীম ক্ষমতাবান -মনে রাখ,
তিনি এক, অদ্বিতীয়, আল্লাহ্ মহানপাক।।



২৮ পৌষ, ১৪২০
১১ জানুয়ারি, ২০১৪
০৯ রবিউল আউয়াল, ১৪৩৫

উত্তরা, ঢাকা।