পানি নাই গ্যাস নাই
বিশুদ্ধ হাওয়া নাই
কালো ধোঁয়ায় থই-থই
পানি নিষ্কাশনের উপায় নাই
ঢাকা কোঁথাও ফাকা নাই।
যানজটের শেষ নাই
দোকানির দাপটে ফুটপাথে পথিক নাই
ওভারব্রিজে ওভারলোডে ওভারকাম নাই
বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর বাহানার শেষ নাই
পাশের ফ্লাটের সমাচার নাই;
কেউ কিছু খাইলো- কি- খাইলোনা
তা জানার সময় নাই,
কে কি পড়লো- কি- পড়লোনা
তা দেখার যেন কেউ নাই।


ভোরে মোরগের ডাক নাই
পাখির কিঁচির মিঁচির নাই
মাঠ নাই সবুজ ঘাস নাই
সূর্যের কিরণ নাই
চাঁদের ফোকলা হাসি নাই
নদীর কল-কলানি নাই
হুমা-নাটির সংঘর্ষ নাই
দিদির হাতের আচার নাই
নানি-দাদির আদর নাই
মায়ের হাতের রান্না নাই
কি একটা মোহে ব্যস্ত সবাই
শহরে সকলে যেন যন্ত্র সদাই
শান্তির বদলে অশান্তি কুঁড়াই।

ঢাকা আমি এখুনি ছাড়তে চাই  
চলো- গাঁয়ে ফিরে যাই;
নারীপোতা ভিটা নতুন করে সাজাই।
আজ আমি শহুরে বড় সাহেব!
শিশু খেলায় ছিলেম কোথায়?
কাদের কোলে পিঠে হয়েছি মানস?


কি নাই আমার গ্রামে;
বৃষ্টি মাখা নন্দন রংধনু আছে
শীতল করা শারদীয় হাওয়া আছে
বাধা-বাধা কাঁচাপাকা নারিকেল আছে
সারি-সারি সুপারিগাছ আছে
বাঁধাকপি গাজর বাহারি কলা আছে,
গাড়ি গাড়ি কৃষাণির মান আছে
মাথা নত করেনা অন্যায়ের কাছে।


কি নাই গ্রামে;
উঠানে কাঁঠাল আছে
আম-জাম-লিচু ,বড়ই আছে
নব-দম্পতির অর্গানিক বাসর আছে
দৃষ্টি ভরা প্রেম আছে
মিষ্টি ঝরা হাসি আছে
বৃষ্টি ভরা অভিমান আছে
মনের ভেতর মন আছে।


কি নাই গ্রামে;
বাতাবিলেবু কাঠবিড়ালি পেয়ারা আছে
ঝাঁকেঝাঁকে কবুতর ওই যায় উড়ে
মনের খেয়ালে শীতের পাখী বাসা বাঁধে,
লাউ গাছের টাটকা ডগা আছে
ধনিয়া পাতার ঘ্রাণ আছে
শিম বরবটি সরিষা ক্ষেত পাট আছে
বিকেলে সুন্দরীদের মহরা আছে
কুয়াশায় ভিজে শরীর চর্চা আছে
ভদ্র বাবুর লিমন টি-ও আছে।


কি নাই গ্রামে;
কালোগাভীর দুধ আছে
সাপ-বেজির খেলা আছে
গোয়ালের ঘটা ঘণ্টা আছে
আঁকাবাঁকা কাচাপাকা মেঠোপথ আছে
পথের দুইধারে হাজারো গাছ আছে
ঝড় বাদল এলে ওরা শুয়ে পড়ে-
বৃষ্টি-রোদে পথিক তলে আশ্রয় খোজে,
বাঁশের পাতার সনসনি ডাক আছে।


কি নাই গ্রামে;
কোকিলের সুর আছে
চাতকের আর্তনাদ আছে
টোনাটুনি, কুনো ব্যাঙের বিয়ে আছে
কানাবকের লাল সিঁদুর পুঁটি আছে
জোনাকির আলো আছে
ভূমিকম্পে নিরাপত্তা আছে
অগ্নিসংযোগে সকলে পাশে।


কি নাই গ্রামে;
আদর স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতা আছে
খোদার রহমত বেশি বেশি আছে,
বোকাসোকা মানুষগুলোর হেম্মত আছে
গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ায় হড় হামেশে
সখিনার কষ্টের ভাগীদার আছে
ফেলানির কাঁটাতারের আঘাতের ব্যথা আছে,
চৌদ্দ পুরুষের কবর আছে,
নব বধূর কেশে ঘিয়ের ঘ্রাণ আছে
ডাগর চোখে পাগল করা চাহনি আছে।


কি নাই গ্রামে;
মাজার পূজার প্রতিবাদ আছে
গ্রেনেড হামলার ধিক্কার আছে
পেট্রোলবোমার ঘৃণা আছে
শ্লীতাহানীতায় বুড়ো ঝাটা আছে,
মসজিদে মসজিদে সুমধুর আযান আছে।


কি নাই গ্রামে;  
সূর্যমুখী বকুল গোলাপ চন্দন আছে
ধান ক্ষেতের মূহ-মূহ ঘ্রাণ আছে
বাদলা হাওয়া মেঘ আছে
পল্লী মাটিতে নিঃঝঞ্জাট ঘুম আছে,
নিশুতি রাতে ঝি-ঝি পোকার ডাক আছে।
দাদা-নানার গাল ভরা গল্পের সত্যতা আছে;
মন্ত্রণালয়ে এই পাড়ার সচিব আছে
সংসদে ওই পাড়ার স্পিকার আছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বূয়েট-মেডিক্যালে
ওই গ্রামের উপচার্য আছে,
শিল্পপতির ছেলেবেলা কেটেছে এই আসরে।


কি নাই গ্রামে;
শীতের পিঠের আমেজ আছে
বৈশাখি মেলা আছে-
পান্তাভাতের সাথে কাঁচা মরিচ লবণ পেঁয়াজ আছে,
বসন্তে শিমুল ফুটে জানিয়ে দেয় সবাইকে
কমলমতি বুঝে যায় বোঝানোর আগে,
রজনীগন্ধা হাস্নাহেনা কোমরে দোলে।


কি নাই গ্রামে;
বুক ভরা শ্বাস আছে
শাপলা পদ্ম ঝিলের জলে জেলে ভাইয়ের বর্ষি আছে
ঝাটকা জালে হরেক মাছ আটকা পড়ে,
আধুনিক আকাশ বার্তা আছে
সুন্দরী নারীর মন ভুলানো কথা আছে
স্বামীর সোহাগ সাধে কি আর কপালে জোটে,
সকলে হার মেনেছে প্রকৃতির কাছে।