আমি একটি চিঠি লেখেছি, চিঠিটি পাঠিয়ে
দিলাম ডাকে, চিঠিটি পেয়ে অপরাজিতা হাসবে,
নাকি রাগ করবে? বুঝতে পারছি নে!
চিঠিটির প্রতিটি লাইনে আছে-এক একটি স্পন্দন,
পড়ে স্থির থাকতে পারবে কিনা জানি নে!
তবুও মনে শঙ্কা জাগে এই ভেবে
তার মনটা কি আসলে স্পন্দিত হবে?
হঠাৎ আমার কাছে অপরাজিতার একটি চিঠি আসে।
এটি ছিল একটু বেদনাদায়ক যেন আমার
বুকে কাঁটা বিধছিল। তার কথাগুলো ছিল যৌক্তিক,
আমার পক্ষে কতটা যৌক্তিক হবে
সেটা সে উপলব্ধি করতে পারেনি।
তবে চিঠিটির ধরণটা একটু এ রকম-
“আমি সে রকম মেয়ে নই, কারো ভালবাসা
খর্ব করার অধিকার আমার নেই,
ভালবাসা তো মহান যা যুগে যুগে মানুষ
তাই জেনে আসছে। আপনার ভালবাসা অম্লাণ হয়ে থাক।”


এরপর চিঠিত যুক্ত ছিল বেদনাদায়ক শব্দ চয়ন।
পড়ে স্থির থাকতে পারিনি।দেখা করা আবশ্যক।
চিঠিটির শেষ লাইনটা পড়ে অবাক হয়ে যাই
সেও আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।
নিচে ঠিকানাটাও দিয়েছিল সে।
দেখা করতে যাচ্ছিলাম,ভাগ্যটা মনে হয়
ধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছিল।সড়ক দূর্ঘটনা।
হাসপাতালে ভর্তি আমি। ফোনটা অকেঁজো।
হাসপাতালের ফোনে আপরাজিতাকে ফোন করি।
“হ্যালো, আমি আনিছুর বলছি।”
“আপনার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।”
“দুঃখিত,সড়ক দূর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আমি।
কি করছো নার্স আমার ব্যথা লাগছে তো?”
“আপনার খুব লেগেছে তাই না! আমরা আসছি।”
ঐ দিনই হাসপতালের বদ্ধতা থেকে মুক্ত হলাম।
সুস্থ না পর্যন্ত তিন দিন অপরাজিতার বাসায় ছিলাম।
এই কয় দিন যেন তার পরিবারের একজন হয়ে ছিলাম।


এরপর কিছুদিন কেটে গেল। ফোন দিলাম।
“হ্যালো, অপরাজিতা!”
“হ্যা, আপনি ভালো আছেন তো ভাইয়া?”
“তোমাদের দোয়াই ভালই আছি। শুধু তোমার জন্য
তোমার পড়ার টেবিলে একটা উপন্যাসের বই রেখেছি।
পেয়েছো কি? আমার লেখা উপন্যাস!”
“পেয়েছি এবং পড়েও ফেলেছি। খুবই রোমাঞ্চকর।”
“কি বুঝলে? আমাকে জানাবে না?”
“এ উপন্যাস তো আমার সাথে দেখা হওয়ার আগের লেখা।
মনে হচ্ছে এ উপন্যাস আমায় নিয়ে লেখা হয়েছে।”
“ঠিকই ধরেছো।
তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?”
“আপনি বলুন কোথায় দেখা করতে পারি?”
“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে কেমন হয়?
ভালোই তো। প্রকৃতির সাথে ভাব জমানো যাবে।”


অপেক্ষা করছিলাম। প্রকৃতির সাথে অপরাজিতাকে
কল্পনা করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম-উন্মুক্ত কেশে
মলয় দিচ্ছি দোলা, কাজল কালো আঁখিতে বিস্ময়,
সবুজ রঙের শাড়িতে অপরাজিতাকে অপরূপ লাগছে।
“কি! অমন ভাবে কি দেখছো?”
“তোমাকে। তুমি যেন প্রকৃতির সাথে মিশে গেছো।”
“তাই না!‍তুমি আমাকে কি জন্য দেখা করতে বলেছো?”
“আমার উপন্যাস পড়ে তুমি বুঝনি তোমাকে কেন ডেকেছি?”
“বুঝেছি। আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তুমি ফিরে যাও।”
“আমি সে রকম ছেলে নই ভালবাসাকে অমর্যাদা করব।
তোমার হাতটা কি একটু ধরতে পারি?”
“না! তুমি তা পারবে না!”
‍‍‍“কেন তুমি এসব বলছ? তুমি কি আমাকে ভালবাস না?
যদি তাই হয় আমার কথায় তুমি এখানে আসতে না।
আমার বিশ্বাসকে তুমি মরিচিকার মতো ধুলোয় মিশিয়ে দিলে।
আমি চলে যাচ্ছি। তবে এটা জেনে নাও
আমার ভালবাসাতে কোন অভিনয় ছিল না।”


অপরাজিতা মনে করেছিল আমি আবার ফিরে আসব।
আমাকে ফিরতে না দেখে অপরাজিতা নিজেই
নিজেকে খুবই অপরাধী মনে করছিল।
দৌঁড়ে এসে আমার হাতটি ধরল।তার চোখে পানি!
আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল।
বুকে অনবরত তার হাতের মৃদু আঘাতে আমি আবেগাপ্লুত!
আমার দুহাতের আলতো ছোঁয়ায় তার মুখটি আমার দিকে তুললাম।
“কি হয়েছে তোমার!তুমি কাদঁছো কেন?” সে বলল-
“আমার দিকে একটু তাকাও-
দেখো, আমার চোখের কাজলগুলো এমন হল কেন?
কেনই বা আজ আমার উন্মুক্ত কেশ, গায়ে সবুজ শাড়ি।
তুমি কি লক্ষ্য করো নি তোমাকে তুমি বলে ডাকছি।এরপরও!
বুঝনি তুমি, কেনই বা এসব করছি আমি!!!
শুধুই তোমার জন্য! তুমি একটা আস্ত বোকা,
আমার মনে কি চলছে বুঝতে পারনি?
জানো না! মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না!”
আমার চোখে পানি! আমি বুঝতেই পারি নি!
“তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে।
তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি।না করবে না তো।”
“ধরো। না করব না। না করলে তো আবার অভিমান করবে!”
চিঠিটির প্রতিটি লাইনে নয় বরং বাস্তবে মনটা স্পন্দিত হচ্ছিল।
অপরাজিতা ও আমার ভালবাসার নতুন সীমাহীন প্রান্তরে।