নির্বাসিত রোহিঙ্গা জীবন
আনোয়ার হোসেন বাদল
_____________________


আমাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলো ক্ষুধা
দু'দিন উপোষের পর
একথাল ভাতের সাথে দুটো পোড়া মরিচ
আহা মান্না সালওয়া
ক্ষুধা মেটাতে সেই আমার প্রথম নির্বাসন।


যেদিন প্রথম ছেড়েছিলাম জন্মজঠর
সেদিন দেখেছি কাঁচা পেঁপে ছিড়লে যেমন টপ টপ করে কষ ঝরে
তেমনি ছিড়ে গিয়েছিলো আমার আর মায়ের শুকনো স্তন
নির্বাসিত আমার বুকে সারাক্ষণ জেগে থাকতো মায়ের আধখানা মুখ।


দ্বিতীবার নির্বাসন দিয়েছিলো নদী
জন্মভিটে গিলে খেয়েছিলো অতিকায় এনাকোন্ডা
গিলে খেয়েছিলো মৌলতা ধান ক্ষেত, হোগল পাতার অরণ্য আর আমার প্রিয় শটি বন
আমি নির্বাক তাকিয়েছিলাম লুটেরার দিকে
আমার গোয়াল ঘর, খেলার মাঠ,
সাঁতার কাটা পান্তার খাল আমার সাথে সেদিন খুব কেঁদেছিলো।


আর তৃতীয়বার নির্বাসন দিয়েছিলো আমার প্রেম
আমার ভালোবাসায় পারফিউম ছিলো না
ইয়াকুদ জমরুদের অট্টালিকা ছিলো না বুকে, আমার ঘর ছিলো না
বিত্তবান সুরুঝ মিয়ার গলায় মালা দিলে
বেদখল হয়ে যায় আমার রাষ্ট্র
প্রেম হয় নদী, অরণ্য, আকাশের সাথে।


এই বিতারিত রোহিঙ্গাস্রোত দেখো,
রাষ্ট্র বিতারিত জনতার ঢল
তারও প্রেম ধর্ষিত হয়েছে,
লাউ-কুমড়োর খেত হয়েছে বেদখল
নিকানো উঠোনে রক্তস্নাত হয়েছে পুত্র কন্য
এই রোহিঙ্গা মানুষকে আমি খুব চিনি
কেননা পাঁচ দশকই আমার রোহিঙ্গা জীবন।


______________________
পটুয়াখালি ১৮/০৯/২০১৭