আপনারা জানেন নাকি-
                আমি কে?
                আমার পিতা কে?
                আমার মাতা কে?


প্রথমে আমার মায়ের কথাই বলি,
তাকে নিয়ে বলার কিছু নেই।
সে দুঃখিনী ঘরের, দুঃখিনী কন্যা,
ঘর বাড়ি তার ভেঙে দিয়েছিল শীতলক্ষ্যার বন্যা।
তারপর এক ভাঙা পালকি করে
এলো এক ভাঙা ঘরে।
এক কনকনে শীতের রাতে নাড়ি কেটে বের করলো;-এই আমি।
আমি সেই নাড়ি কাটা ছেলে।
যার নাড়ি কাটতে ধারালো কোন দামি ব্লেড লাগেনি,
কোন হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়নি,
ডেটল আর তুলো দিয়ে কেউ রক্তগুলো মুছে দেয়নি।
পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগম।- বিখ্যাত দাই।
সে এসে এক কোপে কেটে দিল নাড়ি,
গায়ে জড়িয়ে দিল মায়ের পুরোনো শাড়ি।
ওরে শেফালি,
তোর পোলা হইছে। তবে কেন যানি কালা কালা লাগে।
শেফালি বলে, "মর্জিনা খালা, এ আমার ভাঙা ঘরে চাঁদেরকণা।
আমি সেই কণা, তবে এখন ধূলোকণা।


এবার বলি বাবার কথা-
সে ছিল হাবশি গোলাম।
ইংরেজদের বুটের তলে কেটে যেত তার দিনরাত,
লাথি গুতোই মিলেছে তার চিরকাল।
মাথা নিচু করে চলত, কারন সে শ্রমিক ছিল।
ওই ইংরেজদের নায়েবেরা প্রতি সপ্তাহে ধরে নিয়ে যেত তাকে,
চাবুক দিয়ে মেরে মেরে টানাতো ওদের গাড়িটাকে।
ওদের ঘোড়া গুলো নাকি বিশ্রামে থাকে,
তাই ঘোড়া রূপে শেফালির স্বামীকে নিয়ে যেত আদর করে।
সা সা সা করে চাবুকের আদর দিত সেই হাবশি গোলামের পিঠে।
বাহ! কি সুন্দর বিভৎস।


আমি সেই গোলামের ছেলে।
আমি সেই শ্রমিকের ছেলে।
আমি তার ছেলে
আমি তার ছেলে
আমি তাদের ছেলে।
দুঃখিনী মায়ের চাঁদেরকণা।