’মা’ আমি আজ কবরে
এক অনাবিল প্রশান্তির ঘরে
আমি নড়তে পারছি, বসতে পারছি
দাঁড়াতেও পারছি ’মা’!
শুধু ঐ বিশাল পৃথিবীতে পারলাম না
চলে এলাম, ঠিক যেন উদয়ের পথেই
ডুবে গেলাম আমি এক রবি।


’মা’ আমি অনেক কেঁদেছি
আকুলি-বিকুলি করে কেঁদেছি
কর জোরে ক্ষমা চেয়েছি
হাতে-পায়ে কত ধরেছি
কিছুতেই ওদের মন গলাতে পারি নি,
বুক ফাটা তৃঞ্চা নিবারনে
এক ফোটা, মাত্র এক ফোটা পানি চেয়েছি
দেয়নি, ওরা দেয়নি ‘মা’!
দিয়েছে আঘাতের পর আঘাত
প্রচন্ড প্রহার, অনেক, অনেক কষ্ট হয়েছে ‘মা’
কত কষ্ট হয়েছে তা প্রকাশ পাবে
আজ, কাল, বহুকাল-, সবার অনুভবে।


তুমি কেঁদো না ‘মা’, তোমারও হার্ট বান হবে
সকল পাঠকেরও, আর লেখকের তো হচ্ছেই,
আমার হৃদয় বিদারক প্রস্থান,
আর ওরা হাসলো, অনেক অট্টহাসি
মনে হয়েছে ঐ হাসি হতে পারে আমার মুক্তি
না ‘মা’, ওদের হাসি ছিল প্রহারের তীব্রতা
এতই তীবৃ! আমি ছাড়া কেও বুঝবে না।


বাপের শাসন বারন
’মা’ তোমার আদর স্নেহ অনুশাসন
সব নিয়ে ভালোই তো ছিলাম,
ওদের তো আমি কোন ক্ষতি করি নি,
’মা’ তুমি নিশ্চয় বিশ্বাস করবে
জগতের আরও সবাই করবে
আমি চোর নই ’মা’! আমি চোর নই-!


ওরা ঐ খুনিরা সবাই মিলে
আমাকে পিটালো, আর পিটালো
পিটাতে পিটাতে মাটিতে শুইয়ে দিল
বহু সময় ধরে, এক ঘন্টা নয় তারও অধিক
আমার ক্ষত-বিক্ষত দেহ নিরব-নিথর হয়ে গেল
আমার দেহ-মন পরাজিত হলো
পবিত্র অন্তরাত্মা বললো, আর পারি না, আমি যাই!
তুমি চলে এসো, এখানে আর না!


পবিত্র রোজার মাস, ‘মা’ তুমি তো রোজা
আমিও রোজা, কোন দিন একটা
না পেরে কোন দিন দুইটা, কিশোর বয়সে,
সকালেই বেঁড়িয়েছিলাম কাঁধে নিয়ে
সবজির পসরা, বিক্রি করতে পল্লীতে,
আজ ইফতারে একটা ডাব নিব
সম্ভব হলে দুটো খিরে, এক ফালি তরমুজ
’মা’ তোমার জন্য নিব, আমাকে তো তুমি দিবেই,
আমার ছোট ভাইকে না দিয়ে তুমি খাবেই না
কিন্তু কই? খুনিরা সকালেই আমাকে থামিয়ে দিল
শুধু কি তাই! দুনিয়া থেকেও
করে দিল বিদায় চির তরে
যথার্থই কবি, ‘উদয়ের পথে ডুবলো রবি।


’মা’, নির্মম প্রহারে আমি হলাম তিরোধান
গোপনে নয়! প্রকাশ্য দিবালোকে
শুধু কি তাই! চিত্রায়িতও মৃত্যুর করুন দৃশ্য
প্রকাশিতও প্রতি ঘরে ঘরে, প্রতি জনে জনে
মারতে মারতে আমার প্রান কেড়ে নিচ্ছে,
একি খুনিদের সাহস, না কি দুঃসাহস!
না কি অন্য কিছু! ক্ষোভ-বিক্ষোভ বিশ্ব জোরে
সিলেটে, বাংলাদেশে, এমনকি গোটা পৃথিবীতে।


আমি নিহত, আমার হত্যার বিচার চায়, বিচার!
’মা’ আমার হত্যা-চিত্র তুমি আর দেখো না
আর কেঁদো না! তোমারও হার্ট বান হবে যে!
অনেক শেখ, সামিউল, আলম ও রাজন রবে
আমাকে দেখতে চাইলে, ’মা’ ওদের দেখে নিবে,
তুমি চলে এসো ’মা’ -, অসময়ে নয়, সময় হলে
দেখা হবে ‘মা’--- আমি অপেক্ষায় থাকবো----
কাল বহুকাল, দেখো খুনিরাও আসবে অসময়ে
দেখা হবে, কাল কিয়ামতে হাশরের মাঠে।


মোঃ আতাউর রহমান
টরন্টো, ক্যানাড
১৪/০৭/২০১৫ ইং