সে রাতের সেই স্বপ্নের কথা আমি আজও ভুলতে পারিনা।
সে স্বপ্ন দেখার পর জীবনে আমার কী পরিবর্তন হল তার বর্ণনা করাই এ কবিতার মূল কথা।
তুমি আমার স্বপ্নে এসে বলেছিলে যে,
তুমি নাকি আমার সন্তান হয়ে আসছ।
এমন কথা শুনে আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলেছিলাম-
সত্য মিথ্যা ভালো মন্দ স্বর্গ নরক ঈশ্বর শয়তান সবকিছু।
ভেবেছিলাম এ কী করে হতে পারে?
এ সম্ভব নয়,
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও সম্ভব নয়।
কীভাবে হবে?
তোমাকে যে কয়েক ঘন্টা আগেই দাহ করে এলাম,
তোমার চিতাভস্ম আমি নিজে গঙ্গায় ভাসালাম,
ভোর রাতে বাড়ি এসে যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
তখনই তুমি আমার স্বপ্নে এলে।


যখন স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল তখন সবে ভোর হয়েছিল।
আমি ছাদ থেকে এক শিশুর কান্না শুনতে পাচ্ছিলাম।
বিছানা থেকে নেমেই এক ছুটে ছাদে গিয়েছিলাম।


তোমার হাত থেকে সেই যে শেষ ফুলটা পড়ে গিয়েছিল,
যা দেখেছিলাম-
সেটা আর নেই সেখানে।
আর ঐ স্থানেই একটা শিশু দুই চোখ বন্ধ করে
দুই হাত মুঠো করে শুয়ে কাঁদছিল।
আমি দৌড়ে এসে তাকে কোলে নিয়ে
সঙ্গে সঙ্গে তাকিয়েছিলাম এদিক ওদিক,
উপরের আকাশের দিকেও।


অবাক হয়ে ভেবেছিলাম
তুমি আমায় যে স্বপ্ন দেখালে তাই সত্যি হল।
কিন্তু এও কী সম্ভব,
তুমি আমার সন্তান হয়ে এলে?
তোমার সঙ্গে ঘর করলাম মাত্র একটা রাত-
শুধু ফুলসজ্জার রাতটুকু।
পর দিন সকালে স্নান সেরে তুমি ফুলের সাজি নিয়ে ফুল তুলতে এসেছিলে ছাদে।
কয়েকটা ফুল তোলার পরে যেই শেষ ফুলটা তুলতে গেলে-
তখনই তোমার পায়ে কামড়েছিল একটা কেউটে সাপ।
ওটা বোধহয় বাড়ির গা বেয়ে বেয়ে উঠেছিল।
ফুলটা আর সাজিতে ঠাঁই পেলনা
তুমি লুটিয়ে পড়েছিলে ছাদে।
তোমার চিৎকার শুনে ছুটে এসেছিলাম
এক মুহুর্তও দেরী না করে।
তোমায় পায়ে সেই সাপে কাটা স্থানে
আমার মুখ দেওয়ারও সময় দিলে না-
ভেবেছিলাম আমিই বিষটা তুলে দেবো
কিন্তু তার আগেই তুমি চলে গেলে।


তোমায় দাহ করে ফিরেছিলাম ভোর রাতে
একটু ঘুমিয়ে পড়তেই তুমি এসেছিলে স্বপ্নে।


এরপর কেটে গেছে অনেক বছর,
বাবা আর মেয়ে মিলে সুখেদুখেই দিন কাটাচ্ছি।
এখন আমার মেয়ের বয়স কুড়ি বছর।
তোমার নামটাই দিয়েছি ওকে, সুপর্ণা।
কিন্তু একটা ব্যাপার যে,
ওকে দেখতে পুরো তোমার মতন হয়েছে।
একেবারে যেন তুমিই এসেছ আমার কাছে,
তোমার মতন মুখ টানাটানা চোখ একই রকম গায়ের রঙ।


সেই যে তুমি এসেছিলে আমার জীবনে
যখন তোমার বয়স ছিল পঁচিশ,
তোমায় তখন যে রূপে দেখেছিলাম সেই রূপ আমি আজও ভুলতে পারিনা।
সেই একই রূপ যে আমার মেয়ের মধ্যেও প্রকাশ পাচ্ছে ক্রমশ তা বললে অত্যুক্তি হয় না।
তুমি তখন ছিলে আমার স্ত্রী
আর এখন হয়েছ আমার কন্যা।


মাঝে মাঝে এখনও ভাবি একটা কথা।
আমার এ সন্তান এল কোথা থেকে?
ঈশ্বরের স্থান স্বর্গ থেকে,
নাকি তোমার স্থান প্রেতলোক থেকে?


---- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
১৮ই মে,২০২৩,রাত ৭টা, বারুইপুর