দৈনিক পত্রিকার ভিতরের পাতায় বেরিয়েছে খবরটা
'উলিপুরে ক্ষুধা ও রোগযন্ত্রণা সইতে না পেরে কিশোরী
সামছু আরার বিষপানে আত্বহত্যা'। ছোট্ট খবর, ইতস্তত
জায়গা করে নিয়েছে পত্রিকার ভিতরের পাতার দেড়
দু'ইঞ্চি কলামজুড়ে।


'মাননীয় মন্ত্রী আপনি কি... খবরটি পড়েছেন পত্রিকান্তে?'
ভয়েসয়ে জানতে চাইলো জনৈক সাংবাদিক। জবাবে
টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে সুবেশী মন্ত্রী মহোদয়
বললেন, 'হ্যা পড়েছি। দুঃখজনক, খবরটা সত্যি
দুঃখজনক। '


এটুকু বলেই তিনি দ্রুত চলে যান সেখান থেকে,
চোখেমুখে রাজ্যের উষ্মা। অবশ্য নির্বিকার সাংবাদিক
এসব দেখে না মোটেও, সে যথারীতি তার পুরনো
কলমটি চালিয়ে যেতে থাকে ঝড়ো গতিতে,
'দুঃখজনক, খবরটা সত্যি দুঃখজনক।'


#
২০০৩ বা ০৪ সালে উত্তর বঙ্গের মঙ্গা কবলিত কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে সামসু আরা নামের একজন বার তের বছর বয়সী কিশোরী ক্ষুধা ও রোগ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহনন করে। কোনও একটি জাতীয় দৈনিকের ভিতরের পাতার দেশের খবর নিয়ে লেখা পাতার এক কোণে দুয়েক ইঞ্চি কলামজুড়ে অত্যন্ত অবহেলার সাথে ছাপা হয়েছিল খবরটি। তখন আমার কিশোর মনকে ঘটনাটি দারুণ প্রভাবিত করেছিল। আমার মনে হয়েছিল ঘটনাটাকে আরও গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। এটা প্রথম বা শেষ পাতায় আরও গুরুত্বের সাথে, আরও বিষদভাবে, আরও তথ্য সহকারে ছাপানো উচিৎ। একটি সভ্য দেশে একজন শিশু এভাবে না খেতে পেরে রোগে ভুগে আত্মহত্যা করতে পারে না! কারই কি কিছু করার নেই!
কবিতার ভুত ছিল মাথায়। মনে হলো, আমার কিছু লেখা উচিৎ। বসে পড়লাম খাতা কলম নিয়ে। সেদিনের সেই কবিতা, 'দুঃখজনক'। ভাবতে ভালো লাগছে যে পরিস্থিতি এখন আর আগের মতো নেই। উত্তর বঙ্গে এখন আর মঙ্গা হয় না। মানুষ না খেয়ে থাকে না। তারপর অমন আর কোনও সামছু আরার আত্মহত্যার খবর পাইনি। আমি, আমরা কেউই চাই না সেসব দিন আর ফিরে আসুক এদেশে। সবার জন্য একটি সুন্দর, সুখী জীবনের প্রত্যাশা করি। পৃথিবীর সব মানুষই মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাক। তবেই এই পৃথিবীকে বিপুলা পৃথিবী বলবো। আমি সেই সুদিনের অপেক্ষা করি।


রায়হান অর্ক