আমি ঠিক এখন বসে আছি মালিবাগ রেল ক্রসিংয়ের মোড়ে
সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে
এক কাপ লাল চা'র পেয়ালা হাতে
বৃদ্ধ দোকানদার পাশের চেয়ারে বসা, ঝিমুচ্ছে
মুখোমুখি বেঞ্চে বসে আছে একজন মধ্যবয়ষ্ক ভদ্রলোক
দ্বিতীয়বারে মতো একটি সিগারেট ধরিয়েছে
আমার দিকে ছুটে আসছে ওর ধোয়া অনবরত
দশটার কাছাকাছি ঘড়ির কাটা
রাত বাড়ছে।
আমি জানি, একটি কবিতার উপজীব্য হবার মতো
কিছুই নেই এখানে
গতানুগতিক, অত্যন্ত সাধারণ একটি অনুল্লেখ্য দিন
সেপ্টেম্বরের একটি শুষ্ক ম্রিয়মাণ রাত
দুই হাজার সতের সাল
নিতান্তই সাধারণ গৎবাঁধা চলমান জীবন আমাদের;
আজ সারাদিন আমার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি,
ঘুমে, নির্ঘুমে হয়তো আসছে রাতটিও কাটবে গতানুগতিক;
আমি আমারটাই শুধু হলফ করে বলতে পারি,
ওদের দুজনেরটা কেবলই আমার অনুমান।
সবমিলে কণামাত্র বিশেষত্ব কিছু নেই এই মুহূর্তগুলোর।
জানি, এখানে একটি কবিতা লিখবার মতো কোনও উপাদান নেই
কিন্তু তবু আজ আমি এখন এখানে একটি কবিতা লিখবো
ঠিক এখনকার, এই চলমান মুহূর্তকালকে নিয়ে,
কারণ আমি স্বাধীন, একটি কবিতা লেখার জন্য।
সত্যি এ এক অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর অনুভূতি,
যা হয়তো ঠিক শব্দ বাক্যে কখনওই ব্যক্ত করা যায় না।
বৃদ্ধ দোকানদার আড়মোড়া ভেঙে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পথে
মধ্যবয়ষ্ক ভদ্রলোক বিরামহীন ধোয়া ছেড়ে চলেছে সিগারেটের
আর আমি, চা'র পেয়ালা বেঞ্চের ওপর রেখে দিব্যি কবিতা লিখছি
এই মুহূর্তে আমার ভীষণ আনন্দ অনুভূত হচ্ছে,
মনে হচ্ছে, আমি যেন এখন এখানে, এই কবিতাটি লেখার জন্যেই
পৃথিবীতে এতদিন ধরে বেঁচে আছি,
আমার মানব জীবনের সবটুকু সার্থকতা যেন আজকের
এই কবিতাটি লেখার মাঝে।
সত্যি, স্বাধীনতার এ এক অবর্ণনীয়, অভূতপূর্ব সুখদ অনুভব
যা হয়তো কখনওই পূর্ণরূপে ব্যক্ত করা যায় না
শুধু নিজের মাঝে নিজের মতো অনুভব করা যায়।
ঠিক এই মুহূর্তে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন
আমি একটি কবিতা লিখছি
আমার আর কোনও অপেক্ষা নেই কোনকিছুর
আমি স্বাধীন একটি কবিতা লেখার জন্য।
আমি কবিতা লিখছি
লিখছি
লিখছি
লিখছি...