এই সমাধি আমার কিন্তু আমার যাবার পর
তোমরা গড়েছ সৌধ আমার কবরের উপর
নিজের আনন্দে, ব্যথায় কিংবা শুধু ভালবাসা দিয়ে
অথবা নিজের বোধ জগতের অমোঘ আদেশ নিয়ে।
ছিলাম সূ্র্য চন্দ্রাতপে রোদ হাওয়া আর জলে
কে গড়েছ এই মহলা উদার আকাশ তলে?
আকবর নাকি জাহাঙ্গীর না সাজাহান-ঔরঙ্গ
কোন অর্বাচীন, কেন গড়েছে, আনন্দের এ সৌধ।


বন্যার মত আসছ মানব হাতে হাত মনে খুশি
কাঠবিড়ালী, মোবাইল ফোন, সাথে কোন উর্ব্বশী
কবরের মাঝে শায়িত থেকে তবু সে আওয়াজ পাই
কত আনন্দের কল-কাকলি এত খুশি সব্বাই।
তোমরা যারা মহা-আনন্দে ঘুরছ তুলছ ছবি
একবারও কি মনে পড়ছে না সময়ের জলছবি?
এখানে যে কেউ শুয়ে আছে এই শীতল পাথর তলে
তোমরা যারা দেখতে এসেছ সেই কথা যাও ভুলে।


এই পৃথিবীতে সেও বেঁচেছিল, সম্রাট নয় মানুষ
তারও তো ছিল প্রেম ভরা মন, ভরা স্বপ্নের ফানুস।
ছিল সাম্রাজ্য লোক লস্কর ছিল পুত্র প্রাণ,
ছিল আনন্দ, সুর-সঙ্গম, চিত্র, শিল্পী, গান।
রঙের ফোয়ারা, কোহিনূর মণি, ছিল যুদ্ধ প্রেম
থেমে গেছে আজ সব আয়োজন নিষিদ্ধ চারু হেম।
অনুভূতি সব হাওয়া হয়ে গেছে, বিস্মৃতি নেয় পিছু,
শুধু পড়ে আছে স্মৃতির চিহ্ন, অস্তিত্ত্ব নেই কিছু।


এইখানে এই সৌধের নিচে শুয়ে আছি একা গোরে
দিন রাত নেই, শীত-তাপ নেই, সময়হীনতা ভরে
শিহরণ নেই, ঘুম-জাগা নেই, নেই ক্লান্তি ভয়
অপেক্ষা শুধু মহা-অনন্তের, প্রার্থনা বরাভয়।
প্রত্যুষে শুনি আযানের ধ্বনি পাখিরা মুখর গানে
অমিতো পারি না তাদের সঙ্গে মিলতে ঐকতানে।
রোজ হাশরের সেই দিন জানি আমি সম্রাট নয়,
আল্লাহ্‌র কাছে, মাফি চাই তাই ক্ষমাশীল দয়াময়।


হাত পেতে থাকি, মানুষের দিকে, যদি কোন দোয়া  পাই
শূন্য সে হাত ফিরে আসে রোজ কোন উপহার নাই।
তোমাদেরও যে আসতে হবে কবরেতে একদিন
বুঝবে সেদিন কেন কাঁদছিল প্রতিরাতে প্রতিদিন।
নাম নিই তাই আল্লাহ্-তালার, নতজানু তার কাছে
পৃথিবী প্রলয় হওয়ার আগে, যতটা সময় আছে।


কি প্রয়োজন এই মনে রাখা, কোন ভালবাসা ছাড়া,
বিনম্র শ্রদ্ধা ছাড়াই কবরের উপর স্মৃতির সৌধ গড়া?
তার চেয়ে ভালো, ঘরে ফিরে চল, মৃতপুরী ছেড়ে যাও
আমাকে তোমরা শান্তির সাথে নীরবে থাকতে দাও।
মনে মনে বলো‘‘ শান্তির ধারা ঝরুক তার উপরে’’
বলো ‘‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া আহলাল কুবুরে’’।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২২.০২.২০১৫, শনিবার//দিল্লী


[সম্রাট হুমায়ূনের সমাধী সৌধে বসে পরিবেশ দেখে লেখা।


১৫৪০ খ্রীস্টাব্দের ১৭ মে বাংলার নিকটবর্তী কনৌজের যুদ্ধে
শেরশাহ্‌ এর কাছে সম্রাট হুমায়ূন পরাজিত হন,
তারপর আর তার স্বাভাবিক শাসন পরিচালনা করা হয়নি।]