পুরনোরা ফিরে আসছে অধরার মতো, দেখা দেয়, দেয়না ছোঁয়া
ভালবাসা আবার কড়া নাড়ছে, দরজায়, সশব্দে
অসহ্য অপেক্ষা!


আলোটা মিইয়ে দিয়েছি সেই কবে,
ঘরময় কর্পূরের গন্ধমাখা মোহিনী বাতাস খেলা করে
স্বপ্নগুলো জোনাক পোকার মতো জ্বলে সিথানের চারপাশে, অধরা
দূর কোন নক্ষত্রের আলো এস পড়ে জানালার শার্সি গ’লে
সহস্র আলোকবর্ষ পেরিয়ে এসে একটু জিরোবার পালা,
জানালার ওপাশে জবার গাছে ফুটেছে প্রার্থনার কলি
আমি কীভাবে তোমাকে আবার আসতে বলি, খুলে দেই দরোজা?


এখন আমার করোটিময় হাহাকার খেলা করে
এখন অনুভূতিগুলো জমতে জমতে মহাসমুদ্রে নতুন দ্বীপ গড়েছে,
আমি তার তীরে ঘর বেঁধেছি,
বিছানায় বিস্রস্ত হয়ে চোখ ফেলে রাখি সেই আলোকমালার উপরে
ব্যালকনিতে বসে দেখি নক্ষত্রজ্বলা রাতে সমুদ্রের ফেনিল জলে
ফসফরাসের খেলা, ছুটে চলা।


এখন আমার সময় কাটে নিরতিশয় বিলম্বিত লয়ে
হাড়গোড় জিরজিরে, ভাবি পুরনো সব কথকতা;
ডুব-সাঁতার, কল্লোলিত সুরধ্বনি এখন মনে হয় সুদূর পরাহত
এ সময় তুমি ফের ফিরে এলে কী হবে আর, হবে কি কোন স্বপ্ন বোনা!


ভোর হয়ে আসে, দেখি ডাকাবুকো পাখিদের ডানা ঝাপটানি, প্রভাতের স্বরসাধনা,
সারদিন তার কত কাজ কত গান, আর
আমার ভোর ঝুলে থাকে চাঁদের চঁদোয়ার মতো
আমের পাতার ফাঁকে, যেন আধো নীল তোয়ালা, স্থির, অচঞ্চল, আলগোছে
আমার পাখিরা রাতজাগা, ঢুলু ঢুলু চোখ কোন মতে মেলে রাখে,
না হয় উল্টো হয়ে ঝোলে বাদুরের মতো সময়ের ডালে,
আমার রক্তের ভিতরে সন্তরণশীল রাজহাঁস সেই কবে জলকেলী ছেড়েছে,
রাজহংসীর গ্রীবা এখন তাকে টানে না, এখন সে শোভা পায় মাদাম তুসোতে
বালকেরা আসে, হাসে, পাশে বসে তারপর ফিরে যায়,
বৃহস্পতি তার আর ফিরে আসে না।


এখন ফের কড়া নাড়, শিষ দাও,
পাখীর মতো চঞ্চু বাড়াও কালের কলসের দিকে, সব রস শুষে নিতে?
সে কী সম্ভব ? আমার ঘোর কাটে না।


তবু তার ফিরে আসা আমাকে স্বপ্নোত্থিত করে, নির্বাক রহিত করে,
শয্যা থেকে, জানালা থেকে, অর্ধালোকিত ব্যালকনি থেকে
চ্যুত করে টেনে নেয় ভোরের বাতাসে,
ব’লে, শ্বাস নাও, প্রাণ ভরাও নতুন বাতাসে,
খুলে দাও সকল অর্গল, মেলে দাও জুবুথুবু ডানা,
জীবনে সবকিছু একেবারে শেষ হয় না,
শেষের পরেও কিছু থাকে।
আমাকে জাগাতে পুরনোরা ফের ফিরে আসে।
ফের গান শোনায়, ফের মুছে দেয় অনাকাঙ্খিত ঘ্রাণ, কক্ষ থেকে,
ছড়িয়ে দেয় কস্তুরীর সৌরভ মাখানো ঝিকিমিকি জোছনা,
আমাকে টান দিয়ে তুলে নেয়, তটরেখা থেকে,
ছুঁড়ে দেয় ফেনিল জলের ঘরে, যেখানে মাছেরা বুদ্বুদ তোলে ঠোঁটে,
সোয়ালো ছুটে চলে উর্ধ্বলোকে, সেখানে।


পুরনোরা ফিরে আসছে আমাকে জানাতে,
এসো যাবার আগে মেখে নাও জীবনের সব আলো, সব গন্ধ,
যার প্রতীক্ষা করেছো বয়ঃসন্ধিকালে, প্রত্যুষকালে
আজ প্রদোষে সে সব নিয়ে যাও, দরজা খুলে রেখেছি, নেবেনা?


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২২-০৫-২০১৫; ০৮ জৈষ্ঠ্য ১৪২২//ঢাকার জীবন