-এতদিন পর এলেন?
-আসতে হলো শেষ পর্যন্ত।
-কেমন আছেন?
-আকাশ ও বৃষ্টির মতো।
-আকাশ না বৃষ্টি?
-আগের মতোই, তবে মাঝে মাঝে মেঘ করে।
বৃষ্টি হলেও নিঃসীম নীল।
-বাব্বাহ্‌। তাহলে ভালই আছেন। ডায়েরীটা এনেছেন?
-আনার কথা ছিল?
-আপনি বলেছিলেন, এক সপ্তাহ পরে দেখাবেন।
-তুমি তো হ্যাঁ-না কিছু বলোনি।
-মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।
-বুঝতে পারিনি। আসলে পারি না কখনোই।
-তাহলে আনেন নি?
-না, এনেছি।


তখন আকাশ থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসে
কুয়াশার মতো মেঘ অথবা মেঘের মতো কুয়াশা
অথবা মেঘ ও কুয়াশার মতো বৃষ্টির রিনিঝিনি সুর।
সামনের সবুজ লনে বৃষ্টির সে কী দাপাদাপি!
ডায়েরীটা তুলে দিই তার হাতে।
-আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-কাজে।
-এই বৃষ্টিতে?
-আমাদের এর ভিতর দিয়েই যেতে হয়। সব সময়।
-বৃষ্টিটা একটু কমলে যাবেন।
-পড়া হলে লাইব্রেরী সহকারীর কাছে দিয়ে যাবে। তাকে বলা আছে।


আকাশ আমাকে ডাকে, বৃষ্টি আমাকে ডাকে।
সবুজ লন তো সেই কখন থেকে!
-আচ্ছা দেব। একটু বসে যান, অনেক বৃষ্টি তো।
- না.....আমাকে এখনই যেতে হবে।
ডায়েরীটা পড়ার পর একটুকরো মন্তব্য লিখবে। পারবে না?
-আমার লেখার হাত নেই। তবে দেখি
আপনি যদি লিখিয়ে নিতে পারেন তো, লেখা হবে।


দুর্বোধ্য হাসি শিশুর মতো
করিডোরের এপাশ থেকে ওপাশে
অযথাই দৌড়ায়, নিরবে হল্লা করে।
ঝুম বৃষ্টির ভিতর দিয়ে হেঁটে বাইরে আসি।
ঠোঁটে জ্বলে ওঠে বৃষ্টি বিনাশী আগুন।
সামনে কর্মহীন বিস্তৃত সময়, বিবর্ণ গালিচার মতো শুয়ে আছে,
কোথাও যাবার জায়গা নেই,
ব্যস্ততা মুখে পুরেছে অখন্ড অবসর;
তবু শুধু শুধু মিথ্যে বলা।
খুব কি প্রয়োজন ছিল এই মিথ্যেটা বলা?
ওর পাশে কি দু’দন্ড বসা পাপ? নাকি যন্ত্রণা?


‘‘এই যে আমি তোমাকে নিবিষ্ট মনে ভাবছি, তোমাকে আঁকছি
এই যে তোমাকে আমার নিজের শব্দে ইচ্ছেমত গড়ছি-আকার দিচ্ছি
এই যে কথায় কথায় তোমাকে স্পর্শ করছি, অথচ
দাঁড়াতে পারছি না তোমার সামনে, এটাকে কি বলবে তুমি?
এই লেখা কোনদিন তোমার পড়া হবে কি না জানি না, যদি পড়ো,
ভেবো সেইদিন আমি নিজেকে জয় করেছি প্রথম।
এবার তোমার পালা। পারবে কি তুমি?’’
ডায়েরীর শব্দাবলী বার বার ঘুরে ফিরে অভিঘাত সৃষ্টি করে মস্তিস্কে।
আসলে কিছু কিছু প্রশ্নের জবাব জানার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হয়।
অধরার ডায়েরী পড়া শেষ হয় না।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২৩-০৫-২০১৫; ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২//ঢাকার জীবন