এক কোণে জ্বলছে আলো, নিভু নিভু, ধোঁয়া ঘেরা,
তারপাশে কয়েকটি ক্লান্ত শরীর, মৃদু তাপে
সেঁকে নেয় গা, দিনান্তে, গোল হয়ে বসে।
চারদিক ক্রমে নিঝঝুম হয়ে আসে,
তারা থেমে অাছে, অপেক্ষা
কাল ভোরের, পূবে আলো ফুটলে বেরিয়ে পড়বে।


ভিতরে তখন নন্দিনী বসা খাটে, উড়ছে
জলো হাওয়ায় জানালার সাদা রেশমী পর্দা
থেমে থেমে, সিলিং থেকে ঝুলছে ঝাড়বাতি, মোমের আলো
গলে গলে পড়ছে, মেঝেতে-শয্যায়।
খাটেতে হাঁটু ভাজ করে তাতে মাথা রেখে বসে, দৃষ্টি বিভ্রান্ত
সময় গুলিয়ে যায়, মধুমতি আর বড়াল,
পানকৌড়ি আর মরাল সব যেন একাকার।
এই খাট, এই শয্যা, এই বিগলিত সময়, অথবা,
ঝাপসা হয়ে আসা সন্ধ্যা ক্রমশঃ রাতের গভীরে প্রবেশ করে;
খট করে শব্দ হয় দরজায়, কান পাতে,
মাথা উঠতে চায়না উপরে, বলেনা মন, তাকাও;
শুধু সক্রিয় কান, কী হয়! আর কী হতে পারে!
ভাবতে চায় না আর, মন,
সহসা বিদ্রোহ করে, বোবা হয়ে যায় ভাবনা।


জলে এখনো কুল কুল শব্দ, মাছেরা এসে গল্প করে,
নাওয়ের পাটাতনের সাথে, কোথায় গিয়েছিলে, কোথা থেকে
কেন এলে, যাবে বা কোথায়, থেমে গেলেই বা কেন?
নদী চুপ করে থাকে। মাছেদের কথা শুনেছিল যে জল,
ভাটির দিকে বয়ে চলে যায় সে, কোথায়?
হয়তো বিলের পাথারে, নয়তো পদ্মা, নয়তো সাগরে
অথবা অন্য কোথাও; তরী কোন জবাব দেয় না।
জবাব দেয় মাঝি-খালাসী-গুণীনদের মৃদু উল্লাস, নৈর্ব্যক্তিকতা।
এখানে জীবন প্রশ্নহীন, জীবন যেভাবে পাবে বয়ে যাও, বেয়ে যাও
প্রশ্নগুলো তুলে রাখো কালের দেরাজে, যত পারো,
সময়ের অসীমতায় নিজেকে ছড়িয়ে দাও।


সময় থমকে থাকে, সান্ধ্য উনুনের আগুনে, ঝলসানো পাখির দেহে
অথবা ঝাড়বাতির কম্পমান মোমশিখা, আলোছায়ার কারুকার্য
অথবা প্যলরাত্রির এই নৈঃশব্দের ভিতরে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//৩১.০৫.২০১৫; রবিবার; আজ ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২২//ঢাকার জীবন